× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ডেঞ্জার জোন শ্রীমঙ্গলের হাফ কিলোমিটার সড়ক

বাংলারজমিন

এম ইদ্রিস আলী, শ্রীমঙ্গল থেকে
২১ অক্টোবর ২০১৮, রবিবার

ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের পাহাড়ি উঁচু-নিচু, আঁকা-বাঁকা হাফ কিলোমিটার সড়কে ডাকাতদের রামরাজত্ব চলছে। অহরহ এই রোডে ডাকাতির ঘটনায় পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রী সাধারণের মধ্যে ডাকাত আতঙ্ক বিরাজ করছে।
হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলা অংশের কামাইছড়া থেকে শ্রীমঙ্গল উপজেলার প্রবেশদ্বার মুছাই নামক এলাকায় এ আঞ্চলিক মহাসড়কে ডাকাত চক্রের কবল থেকে রক্ষা পাচ্ছে না পণ্যবাহী গাড়ি থেকে শুরু করে যাত্রীবাহী বাস, কার, মাইক্রোবাস, সিএনজি অটোরিকশার চালক, যাত্রীসহ এমপি’রা।
গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে স্থানীয় ও পার্র্শ্ববর্তী চুনারুঘাট উপজেলার ৪০ থেকে ৫০ জনের একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্র সক্রিয় রয়েছে। এদের মধ্যে মাত্র ১২/১৩ জন ডাকাতকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। কিন্তু কোনোভাবেই তাদের ধরতে পারছে না। গাজীপুর রিজিয়নের আওতাধীন সাতগাঁও হাইওয়ে পুলিশের দেয়া তথ্যমতে গত রমজান মাস থেকে ৭ই অক্টোবর পর্যন্ত এই আঞ্চলিক মহাসড়কে রাস্তার দু’পাশের গাছ ফেলে কমপক্ষে ৭টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এসব ডাকাতির ঘটনায় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে মৌলভীবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল মতিন পর্যন্ত রেহাই পাননি।
চমকপ্রদ তথ্য হচ্ছে- পণ্যবহনকারী গাড়িচালক ও সহকারীর যোগসাজশ রয়েছে ডাকাতদের সঙ্গে। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এরা সংখ্যায় ৪০-৫০ জন। ১০ থেকে ১৫ জন অংশ নিয়ে ২-৩টি দলে বিভক্ত হয়ে মুখোশ পরে ডাকাতি করে। এ আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন ১০-১৫ হাজারেরও বেশি যানবাহন চলাচল করে। এই মহাসড়কে পুলিশের অপ্রতুল টহলের সুযোগ নিচ্ছে ডাকাতরা।
নামপ্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ সদস্য বলেন, পণ্য বহনকারী চালক ও সহকারীর যোগসাজশ আছে সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সঙ্গে। তারা পণ্য নিয়ে রওনা দেয়ার আগেই মোবাইল ফোনে ডাকাতদের তথ্য জানিয়ে দেয়। ডাকাত দলের সদস্যরা নিরাপদে অবস্থান নিয়ে গাছ ফেলে ডাকাতি করে। ডাকাতির পর লুট করা মালের একটি অংশ চলে যায় চালক ও সহকারীর কাছে।
র‌্যাব-৯ এর সিপিসি-২ শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পের অধিনায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিমান চন্দ্র কর্মকার বলেন, ‘এ বিষয়টি নিয়ে আমরা অস্থির আছি। ঢাকা-সিলেট এই মহাসড়কে ডাকাতিতে নতুন কয়েকটি চক্র সক্রিয়। আমাদের কাছে তথ্য আছে চুনারুঘাট, বাহুবল ও শ্রীমঙ্গল এই তিন এলাকার লোকজন এসব কাজ করছে। এ বিষয়ে আমরা কাজ করেছি। আশা করছি শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করা যাবে’।
এই মহাসড়কের কামাইছড়া পুলিশ ক্যাম্প থেকে ৫শ’ গজ দূরত্বে ডেঞ্জার জোন রাবার বাগানের পাহাড়ি রাস্তার বাঁকে সর্বশেষ গত ৭ই অক্টোবর রাত ৮ টা ৫০ মিনিট থেকে ৯টা ২০ মিনিট পর্যন্ত একটানা ৩০ মিনিট ডাকাতি সংঘটিত হয়। এদিন ডাকাতের কবলে পড়েন বাহুবল উপজেলার মিরপুরের চিচিরকুট গ্রামের বাসিন্দা জিতু মিয়া (৩২)। তিনি পেশায় হোমিও চিকিৎসক। শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও লছনা এলাকায় রানী হোমিও হলের চিকিৎসক। সেদিনের এই ডাকাতির ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, প্রতিদিনের মতো সিএনজিযোগে বাড়ি যাওয়ার পথে রাবার বাগানের পাহাড়ি বাঁকে ডাকাতরা রাস্তার পাশের গাছ কেটে ফেলে প্রথমে একটি বালুবাহী গাড়ি আটকায়। এরপর হবিগঞ্জের বিরতিহীন এক্সপ্রেস, এরপর আমার সিএনজিটি আটকায়। তিনি বলেন- ডাকাতরা মুখোশ পরা ছিল। তাদের মুখে শীতের দিনের মানকি টুপি ও ধূলা আটকানোর মাস্ক পরা ছিল। এরা অন্তত ২০-২২ জন ছিল। এক-দু’জন ছাড়া সবার পরনে হাফ প্যান্ট ছিল। হাতে লাঠি ও দা ছিল। এ সময় ডাকাতরা আমাকে মারধর করে মানিব্যাগ, ভিসা কার্ড, ভোটার আইডি কার্ডসহ ২৩শ’ টাকা লুটে নেয়। ডাকাতি চলাকালে একটি করে যানবাহন ডাকাতি করে সেই গাড়ির লাইট নিভিয়ে রাস্তায় লাইন করিয়ে রাখে। এ সময় অন্য ডাকাতরা রাস্তাজুড়ে দুই-তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে এদিক-সেদিক হাঁটা-হাঁটি করে। তিনি বলেন, সেদিন ডাকাতির সময় রাস্তার ২ পাশে ৫০ থেকে ৬০টি যানবাহন ছিল।
এদিকে এই ঘটনার ৮/১০ দিন আগে কামাইছড়া পুলিশ ক্যাম্প থেকে ৪-৫ মিনিটের রাস্তা রাবার বাগানের পাহাড়ি বাঁকের একই জায়গায় রাত সাড়ে ৮ টার দিকে সাতগাঁও লছনা যাওয়ার পথে ডাকাতদের কবলে পড়েন মিরপুর নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা সিএনজিচালক মো. ওয়াহিদ মিয়া। তিনি বলেন, হাফপ্যান্ট ও মুখোশ পরা ডাকাতরা রাস্তার পাশের গাছ কেটে ফেলে রেখে যানবাহন আটকিয়ে প্রথমেই গাড়ির বাতি নিভিয়ে ফেলতে বাধ্য করে। পরে আমার সিএনজি’র যাত্রীসহ আরো ৪/৫টি যানবাহন আটকিয়ে ডাকাতি করে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই নান্নু মণ্ডল বলেন, নিরিবিলি পাহাড়ি বাঁক। এক বাঁক থেকে অন্য বাঁক সহজে দেখা যায় না। রাস্তার দু’পাশে গাছপালায় ঘেরা। রানীগাঁও ও চুনারুঘাট এলাকার লোকজন এসব ডাকাতিতে জড়িত। আশপাশ এলাকার লোকজনসহ চুনারুঘাট বর্ডার এলাকার সন্দেহভাজনদের উপর নজর রাখা হচ্ছে। মহাসড়কের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মহাসড়কের নিরাপত্তায় সাতগাঁও চা বাগান এলাকা থেকে কামাইছড়া পাহাড়ি বাঁক পর্যন্ত একজন এএসআই-এর নেতৃত্বে ৫ সদস্যর টহল পার্টি থাকে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর