× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

সরাইলে সংঘর্ষে হারুন নিহতের ঘটনায় মামলা আসামি ২ শতাধিক

বাংলারজমিন

সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
২১ অক্টোবর ২০১৮, রবিবার

সরাইলে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন হারুন মিয়া চৌধুরী (৫০)। শান্ত গ্রাম আঁখিতারা এখন ক্রমেই অশান্ত হয়ে উঠছে। খুন ও ভাঙচুর লুটপাটের অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে ২টি। আওয়ামী লীগ নেতা ও চেয়ারম্যানসহ উভয় মামলার আসামি ২ শতাধিক। পুলিশের ভয়ে দিনে রাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন গ্রামের লোকজন। এ পরিস্থিতির জন্য নেতৃত্বশূন্যতাকে দায়ী করছেন গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিরা। পুলিশ ও সরজমিন ঘুরে জানা যায়, জায়গা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে গত ১১ই অক্টোবর বৃহস্পতিবার আঁখিতারা গ্রামের সামছুল হক ও ইউনুছ মিয়ার লোকজন সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ৩ ঘণ্টার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে হারুন মিয়া নিহত হয়।
আর আহত হয় উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক লোক। এ ঘটনায় নোয়াগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হামিদকে প্রধান করে ১০৯ জনের বিরুদ্ধে সরাইল থানায় হত্যা মামলা হয়। খুনের পর আসামিদের বাড়ি ঘরে হামলা ও লুটপাটের অভিযোগও করেছেন অনেকে। গত সোমবার আবদুল হামিদের ভাবী কোহিনুর বেগম বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান কাজল চৌধুরীকে প্রধান করে ৯৫ জনের বিরুদ্ধে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র গ্রামে। গ্রামের দেড় শতাধিক পরিবারের সদস্যরা এখন পুলিশের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অধিকাংশ আসামির বসত ঘরেই ঝুলছে তালা। ওই সকল পরিবারের শিক্ষার্থীদের পড়া লেখায় বিঘ্ন ঘটছে। এ ছাড়াও সংঘর্ষে অংশ নেয়া ৭-৮ গোষ্ঠীর লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা ও আতঙ্ক দুই-ই বিরাজ করছে। চেয়ারম্যান কাজল চৌধুরী বলেন, দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার হয়েছে। কোনো ধরনের ভাঙচুর লুটপাটের ঘটনা ঘটেনি। বাজারে দোকানের মালিকদের আমি পুলিশের উপস্থিতিতে মালামাল সরিয়ে নিতে সহায়তা করেছি। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে মামলা হয়েছে। স্বার্থান্বেষী স্থানীয় কতিপয় সালিশকারকের ইন্ধনে আজ আঁখিতারা অশান্ত। নোয়াগাঁও ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রবীণ ব্যক্তি মো. ছাদেক মিয়া গ্রামের পরিস্থিতি বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে ছোট একটি ঘটনায় আজ খুন ও আতঙ্ক। অতীতে কখনো এ গ্রামে এমন চিত্র আমি দেখিনি। খুবই দুঃখ লাগে।
হারুন হত্যার নেপথ্যে:
হারুন হত্যার নেপথ্যে ১৮ শতক জায়গা ক্রয়-বিক্রয়ই দায়ী। জায়গাটি মসজিদের। সামছুল হক ও ইউনুছ মিয়া দু’জনের বাড়ির পাশেই জায়গাটির অবস্থান। সামছুল হকের সঙ্গে দরদামে রফাদফা হয়নি কমিটির। মূল্য আরেকটু বাড়িয়ে জায়গাটি রাখার অনুরোধ করলে ক্ষেপে যান সামছুল হক। এভাবে কেটে যায় একমাস। পাশের বাড়ির ইউনুছ মিয়াসহ কয়েকজনে মিলে ৬০ হাজার শতক মূল্যে ক্রয়ের প্রস্তাব দেন। এরপরও সামছুল হককে একই দামে জায়গাটি রাখতে বলেন কমিটির লোকজন। প্রস্তাব নাকচ করে ইউনুছ মিয়া গংরা অধিক মূল্যে জায়গা ক্রয় করলে দেখে নেয়ার ঘোষণা দেন সামছুল হক। বাধ্য হয়ে মসজিদ কমিটি ছাদেক মিয়ার নেতৃত্বে ইউনুছ মিয়ার কাছে জায়গাটি বিক্রয়ের পর সাব-কবলা দলিল করেন। ক্ষুব্ধ হয়ে সামছুল হক সিএস ও আর ও আর- রেকর্ডের রাস্তায় দেয়াল নির্মাণ করে ইউনুছ মিয়াদের চলাচলের পথ বন্ধ করে দিতে যান। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের লোকজন মারামারি শুরু করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে দৌড়ে যান হারুন মিয়া। বুকে পিঠে দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হন হারুন। জেলা সদর হাসপাতালে নেয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। বিধবা হয়ে গেল হারুনের স্ত্রী। আর চিরদিনের জন্য এতিম হয়ে গেল হারুনের ৬ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তান। একটু জায়গা, আধিপত্য ও দলাদলির জন্য বলির পাঠা হলেন হারুন। ওই গ্রামের সমাজপতিরা কি পারবে বিধবার তিলক খণ্ডন করতে? পারবে কি তারা এতিম ৮ সন্তানের বাবাকে ফিরিয়ে দিতে? পারবে না কখনো। ইতিহাসও এমনটি বলে না। নিহতের কন্যা হোসনা আক্তার বলেন, আমার বৃদ্ধ বাবাকে সামছুল হক ও তার লোকজন নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আমরা জানের বদলা জান চাই। সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, উভয় মামলার তদন্ত চলছে। দোষী ও দায়ী ব্যক্তিরা কোনোভাবেই ছাড় পাবে না।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর