× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

টাঙ্গাইলে দীপু মনির জনসভা বাতিল, উত্তেজনা

শেষের পাতা

কামাল হোসেন, ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) থেকে
২১ অক্টোবর ২০১৮, রবিবার

গোপালপুরের হেমনগর ডিগ্রি কলেজ মাঠে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির গতকালের জনসভাকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকদিন ধরেই চলছিল মাইকিং। তৈরি করা হয়েছিল দীপু মনির আগমনী বার্তার গেট। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী স্থানীয় এমপি খন্দকার আসাদুজ্জামানের ছেলে খন্দকার মশিউজ্জামান রোমেল এ জনসভার আয়োজন করেন। প্রায় এক লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি করা হয়েছিল নৌকার মঞ্চ। কিন্তু  শুক্রবার হঠাৎ করেই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। জনসভাকে কেন্দ্র করে ক্ষুব্ধ হন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী তানভীর হাসান ছোট মনির, ইউনুছ ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু ও খন্দকার আশরাফুজ্জামান স্মৃতির লোকজন। তারা এমপি খন্দকার আসাদুজ্জামান ও তার ছেলে খন্দকার মশিউজ্জামান রোমেলের বিরুদ্ধে শুক্রবার সন্ধ্যায় গোপালপুর পৌর শহরে জুতা মিছিল বের করে। এছাড়াও গোপালপুর ও ভূঞাপুরে নির্মিত তোরণ ও বিলবোর্ড ভেঙে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
দাহ করা হয় এমপি খন্দকার আসাদুজ্জামান ও তার ছেলে খন্দকার মশিউজ্জামান রোমেলের কুশপুত্তলিকা। সন্ধ্যার পর থেকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হতে থাকে।

সংঘর্ষের আশঙ্কায় শুক্রবার মধ্যরাতেই বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় দীপু মনির জনসভা। এদিকে এমপি খন্দকার আসাদুজ্জামান ও তার ছেলে খন্দকার মশিউজ্জামান রোমেলকে ভূঞাপুরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল বিকালে এ উপলক্ষে একটি মিছিল বের করে যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগের লোকজন। মিছিলে নেতৃত্ব দেন ভূঞাপুর পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম বাবু।

সরজমিনে জানা যায়, গোপালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের নামে গত ১৩ই অক্টোবর উপজেলার হেমনগর কলেজ মাঠে এক নির্বাচনী জনসভা আহ্বান করা হয়। এতে প্রধান অতিথি করা হয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে। কিন্তু আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য খন্দকার আসাদুজ্জামান তার পুত্র খন্দকার মশিউজ্জামান রোমেলকে ওই জনসভায় দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেবে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে দুই উপজেলাতেই।

তখন থেকেই ক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী তানভীর হাসান ছোট মনির, ইউনুছ ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু ও খন্দকার আশরাফুজ্জামান স্মৃতির লোকজনের মাঝে। পরে ওই তারিখ পরিবর্তন করে ১৬ই অক্টোবর এবং পরবর্তীতে ১৯শে অক্টোবর শুক্রবার নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু দুর্গাপূজার দশমীর কারণে আবারো পিছিয়ে ওই জনসভা পরের দিন গতকাল দুপুর ২টায় করা হয়। জেলা আওয়ামী লীগ কোন্দল নিরসন করতে অপারগতা প্রকাশ করায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মতি ছাড়াই স্থানীয় সংসদ সদস্য খন্দকার আসাদুজ্জামানের একক সিদ্ধান্তে গতকাল জনসভার দিন ঘোষণা দেয়া হয়। এতে আওয়ামী লীগের অপর চার মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তাদের অনুসারী নেতাকর্মীরা শুক্রবার সন্ধ্যায় গোপালপুর পৌর শহরে জুতা মিছিল বের করে।

এছাড়াও গোপালপুর ও ভূঞাপুরে নির্মিত তোরণ ও বিলবোর্ড ভেঙে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। দাহ করা হয় এমপি খন্দকার আসাদুজ্জামান ও তার ছেলে খন্দকার মশিউজ্জামান রোমেলের কুশপুত্তলিকা। মঞ্চ পাহারায় নিয়োজিত রাখা হয় পুলিশ। সন্ধ্যার পর থেকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হতে থাকে। দেখা দেয় বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা। পরে অবস্থার বেগতিক দেখে মধ্যরাতে বন্ধ হয়ে যায় দীপু মনির জনসভা।

জনসভা পণ্ডের বিষয়ে ভূঞাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হালিম অ্যাডভোকেট বলেন, খন্দকার মশিউজ্জামান রোমেলের মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত জেনে এক শ্রেণির লোক ঈর্ষান্বিত হয়ে শুক্রবার থেকে এলাকায় বিশৃঙ্খলা তৈরি করে আসছিল। তারা নৌকার গেট ভাঙচুর ও বঙ্গবন্ধুর ছবি ছিঁড়ে ফেলেছে। এটা কোনো রাজনীতি হতে পারে না। বড় ধরনের কোনো সংঘর্ষের আশঙ্কাতেই জনসভা স্থগিত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ও গোপালপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ইউনুস ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু বলেন, জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে সংসদ সদস্য খন্দকার আসাদুজ্জামান নিজ পুত্র মশিউজ্জামান রোমেলকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেয়ার জন্য কৌশলে এ জনসভার আয়োজন করেছে। জনগণ এ ষড়যন্ত্র মেনে নেবে না। তাই এ জনসভাকে দলীয় নেতাকর্মীরা প্রত্যাখ্যান করেছে।

অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী ও জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক তানভীর হাসান ছোট মনি বলেন, এমপি খন্দকার আসাদুজ্জামান  জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগকে পাশ কাটিয়ে নিজের অযোগ্য পুত্রকে দলের প্রার্থী হিসেবে কৌশলে ঘোষণা দেয়ার জন্য একজন কেন্দ্রীয় নেত্রীকে ভুল বুঝিয়ে শনিবার জনসভার আয়োজন করে। জনগণ এ ষড়যন্ত্রমূলক জনসভাকে প্রত্যাখ্যান করেছে।   

 গোপালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হালিমুজ্জামান তালুকদার জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্য এ জনসভা চাপিয়ে দিয়েছে। তাই দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ ও চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। সন্ধ্যায় তারা সংসদ সদস্য ও তার পুত্রের বিরুদ্ধে জুতা মিছিল করেছে।

গোপালপুর থানার অফিসার ইনচার্জ হাসান আল মামুন বলেন, জনসভার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু আয়োজকরা স্বেচ্ছায় তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এতে বাতিল হয়ে গেছে ডা. দীপু মনির জনসভা।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর