কম খরচে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মহাকাশ ভ্রমণ সুবিধা দেয়ার জন্য বিনিয়োগ করছেন বিশ্বের প্রভাবশালী উদ্যোক্তা ও ধনকুবেররা। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এলোন মাস্ক, জেফ বেজস ও স্যার রিচার্ড ব্রানসনের মতো বিশ্ববিখ্যাত উদ্যোক্তারাও রয়েছেন। বিবিসি’র খবরে বলা হয়েছে, উদ্যোক্তারা মহাকাশ ভ্রমণকে একটি সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চ্যালেঞ্জ হাতে নিয়েছেন। একইসঙ্গে তারা চাঁদ ও মঙ্গল গ্রহে স্থায়ীভাবে মানববসতি গড়ে তোলারও প্রচেষ্টা চালাবেন। এ শতকের শুরু থেকেই মহাকাশ ভ্রমণ নিয়ে কাজ করছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। তবে সীমিত পরিসরে এসব মহাকাশ ভ্রমণ ছিল খুবই ব্যয়বহুল। এবার মহাকাশ ভ্রমণকে শিল্পে পরিণত করে এই খাত থেকে অর্থ উপার্জনের দিকে মনোনিবেশ করেছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। এই দৌড়ে সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা ও বিশ্বের শীর্ষ ধনী জেফ বেজস।
২০০২ সাল থেকে বেজসের প্রতিষ্ঠান ব্লু অরিজিন মহাকাশ ভ্রমণ নিয়ে কাজ করে। তুলনামূলকভাবে অধিক নিরাপদ মহাকাশ ভ্রমণের জন্য ব্লু অরিজিনের সুনাম রয়েছে। যদিও বিভিন্ন সময়ে মহাকাশ ভ্রমণে প্রতিষ্ঠানটির ব্যর্থতা রয়েছে। এমনকি এই প্রতিষ্ঠানটি সচল রাখার অর্থ যোগান দিতে জেফ বেজসকে অ্যামাজনের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শেয়ারও বিক্রি করতে হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য এবার ব্লু অরিজিন মহাকাশ ভ্রমণের খরচ কমানোর প্রতি মনোযোগ দিয়েছে। পূর্বে মহাকাশযাত্রায় ব্যবহৃত রকেট মাত্র একবারই ব্যবহার করা হতো। কিন্তু খরচ কমানোর জন্য ব্লু অরিজিন পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী রকেট ব্যবহার করছে। মহাকাশ যাত্রায় সুপরিচিত আরেক প্রতিষ্ঠান হলো স্পেসএক্স। ব্লু অরিজিনের সঙ্গে টেক্কা দেয়ার ক্ষেত্রে এই প্রতিষ্ঠানটি সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। এর প্রতিষ্ঠাতা, সিইও ও লিড ডিজাইনার অ্যালন মাস্ক আফ্রিকান বংশোদ্ভূত উদ্যোক্তা।
২০০২ সালে তিনি স্পেসএক্স প্রতিষ্ঠা করেন। এখন পর্যন্ত মহাকাশের উদ্দেশ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৭০টি রকেট উৎক্ষেপণ করেছে। মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠানোর জন্য মার্কিন বিমান বাহিনী, আর্জেন্টাইন স্পেস এজেন্সি ও নাসার সঙ্গে এ প্রতিষ্ঠানের চুক্তিও রয়েছে। তবে স্পেসএক্স থেকে মহাকাশে পাঠানো বেশ কয়েকটি রকেট দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। অ্যালন মাস্ক এসব ব্যর্থতাকে এড়িয়ে সফল উৎক্ষেপণগুলোর গল্পই বেশি প্রচার করেন। মহাকাশ পর্যটন শিল্পে নতুন বিনিয়োগকারী হলেন বৃটিশ ধনকুবের স্যার রিচার্ড ব্রানসন। ২০০৪ সালে তিনি ভার্জিন গ্যালাক্টিক নামে একটি মহাকাশ উৎক্ষেপণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানগুলো যখন মহাকাশের সর্বোচ্চ দূরত্বে পৌঁছার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত, তখন রিচার্ড পুনরায় ব্যবহারযোগ্য মহাকাশযান প্রস্তুতের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। যেন মহাকাশ ভ্রমণের ব্যয় আরো কমানো যায়। ইতিমধ্যেই প্রতিষ্ঠানটি আড়াই লাখ ডলারে মহাকাশ ভ্রমণের সুযোগ দিচ্ছে। তাদের এই অফারে বেশ সাড়াও মিলেছে। জাস্টিন বিবারের মতো সেলিব্রেটিও মহাকাশ ভ্রমণের জন্য এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছেন। এ ছাড়া, ভার্জিন গ্যালাক্টিকের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও।
২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠানটির একটি মহাকাশযান ক্যালিফোর্নিয়া থেকে পরীক্ষামূলক উড্ডয়নের সময় বিস্ফোরিত হয়। এতে ওই মহাকাশ যানের পাইলট নিহত হন। আহত হন আরো এক আরোহী। এতে বোঝা যায়, মহাকাশযান প্রেরণের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি এখনো ততোটা দক্ষ হয়ে ওঠেনি। যদিও এর পরে কয়েক দফা মহাকাশে সেপসশিপ পাঠিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।