× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

খাসোগি হত্যা / হত্যা নয়, অপহরণই ছিল উদ্দেশ্য: সর্বশেষ সৌদি ভাষ্য

বিশ্বজমিন

মানবজমিন ডেস্ক
(৫ বছর আগে) অক্টোবর ২২, ২০১৮, সোমবার, ১০:৩০ পূর্বাহ্ন

ইস্তাম্বুলের সৌদি দূতাবাসের ভেতরেই যে জামাল খাসোগি নিহত হযয়েছেন তা স্বীকার করে নিয়ে শুক্রবার একটি বিবৃতি দিয়েছিল সৌদি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এখন একজন উর্ধ্বতন সৌদি কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ সম্পর্কে যে সর্বশেষ ভাষ্য দিয়েছেন, তা আগের বিবৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সৌদি আরবের আগের বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, জামাল খাসোগি সৌদি কনস্যুলেটে ঢোকার পরপরই সেখানে উপস্থিত সৌদি কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার মারামারি শুরু হয়। সেসময় পেছন থেকে গলার ওপর দিয়ে হাত দিয়ে জাপটে ধরে নিরস্ত করার সময় তিনি শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান। কিন্তু বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়, উর্ধ্বতন একজন সৌদি কর্মকর্তা রয়টার্সকে যে ভাষ্য এখন জানিয়েছেন তা বেশ ভিন্ন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তার বর্ণনা অনুযায়ী, যে ১৫ সদস্যের দল সৌদি আরব থেকে গিয়েছিল তারা জামাল খাসোগিকে ঔষধ দিয়ে অচেতন করে অপহরণের হুমকি দেয়। কিন্তু খাসোগি তাতে বাধা দিলে তখন তাকে জাপটে ধরে নিরস্ত করা হয়। এ সময় ধস্তাধস্তিতেই তিনি শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান।
এরপর এই সৌদি দলের একজন সদস্য জামাল খাসোগির কাপড় খুলে তা পরেন এবং কনস্যুলেট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ভান করেন যেন মনে হয় জামাল খাসোগি আসলেই বেরিয়ে গেছেন। এ নিয়ে জামাল খাসোগির ঘটনা সম্পর্কে সৌদি ভাষ্য বেশ কয়েকবার পরিবর্তিত হলো। সৌদি আরব প্রথমে জোর গলায় এই খবর অস্বীকার করেছিল যে কনস্যুলেটের ভেতর থেকে জামাল খাসোগি নিখোঁজ হয়েছেন। তারা দাবি করেছিল খাসোগি কনস্যুলেট ভবন থেকে বেরিয়ে যান। ঘটনার ১৮ দিন পর সৌদি আরব স্বীকার করে যে জামাল খাসোগি কনস্যুলেটের ভেতরেই মারা গেছেন।
এই ঘটনা সম্পর্কে সৌদি আরবের যে সর্বশেষ ভাষ্য তা হল, পনের সদস্যের সৌদি দলটি ইস্তাম্বুলে এসেছিল জামাল খাসোগিকে অপহরণের উদ্দেশ্যে। তারা খাসোগিকে কনস্যুলেট থেকে তুলে নিয়ে ইস্তাম্বুলের বাইরে একটি সেফ হাউজে আটকে রাখবেন এমনই পরিকল্পনা ছিল। খাসোগি যদি সৌদি আরবে ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানান, তখন তাকে ছেড়ে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু শুরু থেকে তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে শুরু করে। কারণ তারা উপরের নির্দেশ অমান্য করে গায়ের জোর খাটাতে শুরু করে। কনস্যুলেটে ঢোকার পর জামাল খাসোগিকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় কনসাল জেনারেলের কক্ষে। সেখানে মাহের মুতরেব নামে একজন তার সঙ্গে কথা বলেন ও তাকে সৌদি আরবে ফিরে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। মিস্টার খাসোগি এতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি মাহের মুতরেবকে বলেন, তার প্রেমিকা বাইরে অপেক্ষা করছেন ও এক ঘন্টার মধ্যে যদি তিনি ফিরে না আসেন তাহলে তুর্কি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের কথা বলে এসেছেন তাকে। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মাহের মুতরেব যখন অপহরণের হুমকি দেন, তখন জামাল খাসোগি তার গলা চড়াতে থাকেন। তখন সৌদি দলটি আতংকিত হয়ে তাকে থামানোর চেষ্টা করেন। তাকে জাপটে ধরা হয়, তার মুখের ওপর হাত চেপে ধরে চিৎকার বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়। তখন তিনি শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান। তাকে মেরে ফেলার কোন ইচ্ছে ছিল না। এরপর জামাল খাসোগির কাপড়, সানগ্লাস, অ্যাপল ওয়াচ খুলে তা পরেন মুস্তাফা মাদানি। কনস্যুলেটের পেছনের দরজা দিয়ে তিনি এমনভাবে বের হন, যেন মনে হয় যে জামাল খাসোগিই কনস্যুলেট থেকে বেরিয়ে গেছেন। এই সৌদি কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, ঘটনার পর জামাল খাসোগির মৃতদেহ একটি কম্বলে মুড়িয়ে কনস্যুলেটের একটি গাড়িতে তোলা হয়। এরপর একজন স্থানীয় সহযোগীকে দায়িত্ব দেয়া হয় এই মৃতদেহ গুম করার। আর সৌদি দলের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ সালাহ তুবাইগি এই ঘটনার সমস্ত চিহ্ন মুছে ফেলার কাজ শুরু করেন।

তুরস্কের কর্মকর্তাদের সন্দেহ জামাল খাসোগির দেহাবশেষ হয়তো ইস্তাম্বুলের কাছের বেলগ্রাড জঙ্গলে ফেলে দেয়া হয়েছে। এটি খুঁজে পেলে অনেক রহস্যের জট খুলবে বলে মনে করা হচ্ছে। জামাল খাসোগিকে সৌদি আরবে ফিরে যেতে রাজী করানোই যদি এই পুরো মিশনটির উদ্দেশ্য হয়ে থাকবে তাহলে সে দলে কেন এত এত সামরিক কর্মকর্তা আর ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ, সেই প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। ঘটনার স¤পর্কে সৌদি ভাষ্য কেন বার বার বদলে যাচ্ছে সেটাও সবার মনে সন্দেহ জাগাচ্ছে। কিন্তু এসব প্রশ্নের কোন বিশ্বাসযোগ্য উত্তর অবশ্য এই সৌদি কর্মকর্তার ভাষ্যে নেই। যেটি স্পষ্ট তা হলো এই ঘটনা সৌদি আরবকে পুরো বিশ্বের সামনে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। জামাল খাসোগির ঘটনা সৌদি রাজপরিবারের জন্য এক বিরাট সংকটে পরিণত হয়েছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর