ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (সিবিআই) তোলপাড় চলছে। এর শীর্ষ দু’জন কর্মকর্তার মধ্যে যেন এক যুদ্ধ চলছে। এ দু’জন হলেন সংস্থাটির পরিচালক অলোক বর্মা ও স্পেশাল ডাইরেক্টর রাকেশ আস্থানা। এর মধ্যে রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে মোটা অঙ্কের ঘুষ নেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি সিবিআইয়ের পরবর্তী প্রধান হওয়ার লাইনে ছিলেন। কিন্তু তার আগেই সব এলোমেলো হয়ে গেছে। বলা হচ্ছে, তিনি একজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে তিন কোটি রুপি ঘুষ নিয়েছেন। তার মতো ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এনেছে তারই সংস্থা সিবিআই।
২০১৮ সালের ১৬ই অক্টোবর দুবাই ভিত্তিক মধ্যস্থতাকারী মনোজ প্রসাদকে গ্রেপ্তার করে তদন্ত শুরু করে সিবিআই। রাকেশ আস্থানাকে ঘুষ দেয়ার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তারের পর পরই এ সংস্থাটি ৯টি ফোনকল রেকর্ড করে। এরপর তার ভাই সোমেশ প্রসাদকে গ্রেপ্তারের খবরে চারদিকে একরকম প্যানিক তৈরি হয়।
যে ফোনকলগুলো রেকর্ড করা হয়েছে তা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এসব ফোনকলে কথা বলেছেন রাকেশ আস্থানা ও আরেকটি গোয়েন্দা সংস্থার একজন সিনিয়র কর্মকর্তা। মধ্যস্থতাকারী মনোজ প্রসাদকে গ্রেপ্তারের পর দ্বিতীয় ওই সিনিয়র কর্মকর্তা সবিস্তারে সব বলে দিতে চান।
মনোজ প্রসাদ জানতে পারেন তার ভাই সোমেশ প্রসাদকে ১৬ ই অক্টোবর গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসতে শুরু করে সব। গোয়েন্দা সংস্থার ওই অফিসার রাকেশ আস্থানাকে ফোন করেছিলেন পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করতে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে আরো তিনবার ফোনকলে কথা হয়। এ ছাড়া ওই সিনিয়র কর্মকর্তা ও মনোজের স্ত্রসহ অন্যদের মধ্যে ফোনে কথা হয়। সূত্র বলছেন, কললিস্টের ডাটা বলছে, রাকেশ আস্থানা ও ওই সিনিয়র কর্মকর্তার মধ্যে ২০১৮ সালের ১৭ ই অক্টোবর চারবার ফোনকলে কথা হয়। এ ছাড়া মনোজ প্রসাদের মোবাইলে ফোনের হোয়াটসঅ্যাপে পাওয়া ম্যাসেজগুলোর ওপরও সিবিআই নির্ভর করছে অনেকাংশে।
ব্যবসায়ী সতীশ সানা সিবিআইয়ের কাছে আলাদা একটি মামলায় যে তথ্য দিয়েছেন তার ওপর ভিত্তি করে রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে মামলা করেছে সিবিআই। মনোজ প্রসাদ এই ব্যবসায়ীকে প্রস্তাব দেন ৫ কোটি রুপি ঘুষ দিতে। এরপরও তাকে অধিক পরিমাণে ঘুষ দিতে হয়রান করছিলেন সিবিআইয়ের অফিসাররা।
মজার বিষয় হলো, সিবিআইয়ের দ্বিতীয় শীর্ষ প্রধান রাকেশ আস্থানা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি মন্ত্রীপরিষদ সচিবকে প্রায় দু’মাস আগে জানিয়েছিলেন যে, একটি মামলা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সিবিআই প্রধান অলোক বর্মাকে ২ কোটি রুপি ঘুষ দিয়েছেন সতীশ সানা। কিন্তু এখন পরিচালক অলোক বর্মার পক্ষ নিয়েছে সিবিআই। তারা বলছে, বর্মার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা মিথ্যা ও বানোয়াট।
মন্ত্রীপরিষদ সচিব ও সেন্ট্রাল ভিজিলেন্স কমিশনের কাছে একটি চিঠি লিখেছেন রাকেশ আস্থানা। তাতে তিনি সিবিআই পরিচালক অলোক বর্মার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের ১০টি ঘটনা উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে অনেক অভিযোগকে গুরুত্বর হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।