× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

খাসোগি হত্যা / ফের ভোল পাল্টালো সৌদি আরব, সালমানকে বাঁচানোর চেষ্টা

বিশ্বজমিন

মানবজমিন ডেস্ক
(৫ বছর আগে) অক্টোবর ২২, ২০১৮, সোমবার, ১:২৯ পূর্বাহ্ন

খাসোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে নতুন সূর তুলেছে সৌদি আরব। রোববার দেশটি সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকে তাদের মহা ও গুরুতর ভুল বলে আখ্যায়িত করেছে। একইসঙ্গে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ আল-জুবেইর খাসোগি হত্যার পেছনে সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের হাত রয়েছে এমন সকল দাবি নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, মোহাম্মদ বিন সালমান এ হত্যাকান্ডের বিষয়ে কিছু জানতেন না। ফক্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আদেল আল-জুবেইর বলেন, এই হত্যাকাণ্ডটি কর্তৃপক্ষের নির্দেশের মাত্রাধিক প্রয়োগ। জামাল খাসোগিকে হত্যা করে হত্যাকারীরা ভুল করেছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। কিন্তু এ চেষ্টা খাসোগি হত্যা থেকে মোহাম্মদ বিন সালমানকে দূরে সরিয়ে নিতে পারছে না।
সৌদি আরবের দাবি, ২রা অক্টোবর খাসোগি সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশ করলে তাকে জেরা করা হয়। এক পর্যায়ে তিনি মারমুখি হয়ে উঠলে মারামারির এক ঘটনায় খাসোগি নিহত হন। কিন্তু সৌদি কর্মকর্তারা বলতে পারছে না জামাল খাসোগির মরদেহ কোথায় রয়েছে। এতে সৌদি আরবের সর্বশেষ ভাষ্যের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুবেইর ফক্স নিউজকে আরো বলেন, যারা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল তারা কেউই ক্রাউন প্রিন্সের ঘনিষ্ট ছিল না। এমনকি সৌদি আরবের গোয়েন্দা সংস্থার উচ্চপদস্থ নেতারাও এ বিষয়ে অবগত ছিলেন না। এ সময় তিনি জানান, খাসোগির মৃতদেহ কোথায় রয়েছে তা সৌদি আরব এখনো জানে না। তিনি দাবি করেন, তুরস্কের কাছে হত্যাকান্ডের অডিও প্রমাণ রয়েছে এরকম দাবি সম্পর্কে তিনি কিছু শুনেননি। ফক্স নিউজ জুবেইরকে খাসোগির মারামারির বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, হত্যার প্রেক্ষাপট এখনো তদন্তাধীন রয়েছে। আমরা বের করার চেষ্টা করছি কনস্যুলেটের মধ্যে কি ঘটেছিল। এদিকে, রোববার সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে, খাসোগির মৃত্যুতে তার ছেলে সালাহের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেছে বাদশাহ সালমান ও ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুবেইরও একইদিনে খাসোগির পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি খাসোগির পরিবারকে আশ্বস্ত করে বলেন, দুর্ঘটনাবসত একটি বড় ভুল হয়ে গেছে। যারা এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিল তাদেরকে যথাযথ শাস্তির মুখোমুখি করা হবে।
সৌদি আরব ১৮ দিন ধরে ইস্তাম্বুলে দেশটির কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাসোগির হত্যার কথা অস্বীকার করে এসেছে। শুক্রবার প্রথমবারের মত খাসোগি হত্যার কথা স্বীকার করে নেয় দেশটি। এ হত্যার পেছনে তারা যে ব্যাখ্যা দিয়েছে তা বিশ্বনেতারা অগ্রহণযোগ্য বলে স্বচ্ছ তদন্ত নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন। এরমধ্যে সৌদি ভাষ্যও পরিবর্তিত হয়েছে কয়েকবার। প্রত্যেকটি ভাষ্যতেই দাবি করা হচ্ছে দেশটির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে নির্দোষ ও এ হত্যার পেছনে তার কোনো হাত নেই। এদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েফ এরদোগান মঙ্গলবার খাসোগি হত্যা নিয়ে তুরস্কের তদন্তে বেড়িয়ে আসা সকল তথ্য উন্মোচন করবেন। ¯পষ্টতই এতে সৌদি আরবের এই বয়ান হুমকির মুখে পরেছে। এরদোগান ঘোষণা করেছেন, খাসোগি হত্যা তিনি সবরকম দিক থেকে আলাদা আলাদা ভাবে ব্যাখ্যা করবেন। রোববার তিনি বলেন, আমরা ন্যায় বিচার চাই। এই তদন্ত সব নগ্ন মিথ্যাচারের খোলস খুলে দেবে। খাসোগি হত্যার প্রেক্ষাপট পুরোপুরি উন্মোচন করা হবে। এ খবর দিয়েছে দেশটির বার্তা সংস্থা আনাদোলু।
সৌদির আনুষ্ঠানিক স্বীকারোক্তির পর রিপাবলিকানস ও ডেমোক্রেটসরা যুক্তরাষ্ট্রের এই আরব মিত্রের বিরুদ্ধে নানা শাস্তির প্রস্তাব দিয়ে চলেছেন। এরমধ্যে সর্বাত্মাক নিষেধাজ্ঞা থেকে অস্ত্র চুক্তি বাতিলও রয়েছে। তবে এসবই নির্ভর করছে খাসোগি হত্যায় মোহাম্মদ বিন সালমানের সংশ্লিষ্টতার উপরে। তার নির্দেশেই খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছে প্রমাণিত হলে সৌদি আরবের সামনে ভয়াবহ সংকট অপেক্ষা করছে। সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সিনেটর বব করকের বলেন, আমার ধারণা সালমান এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। তিনি এ হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করেছেন এবং খাসোগিকে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ীই হত্যা করা হয়েছে। করকের সৌদি আরবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির সম্মিলিত চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানান। এছাড়া এনবিসিতে দেয়া সাক্ষাৎকারে সিনেটর রিচার্ড ডারবিন বলেন, সৌদি ক্রাউন প্রিন্স এ হত্যাকান্ডে জড়িত থাকলে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূতকে বহিস্কার করা উচিত।
খাসোগির হত্যা নিয়ে সৌদি বয়ানের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ইউরোপীয় শক্তি বৃটেন, জার্মানি ও ফ্রান্স। এক যৌথ বিবৃতিতে বৃটেন, জার্মানি ও ফ্রান্স বলেছে, এই হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায়না। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। সৌদি কনস্যুলেটে কি হয়েছিল সেটা জানার জন্য আরো স্বচ্ছ তদন্ত দরকার। বিবৃতিতে তারা খাসোগি হত্যা নিয়ে সৌদি আরবের ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান করেছে। হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, রোববার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোর সঙ্গে খাসোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে কথা বলেছেন। এতসব বিতর্কের মধ্যেই সৌদি আরব প্রিন্স সালমানকে নির্দোষ দাবি করে তাদের পূর্বের বয়ানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নতুন ভাষ্য প্রকাশ করল।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর