সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম স্কাইপে সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যার নির্দেশনা দিয়েছিলেন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের ঘনিষ্ঠজন সাউদ আল কাহতানি। এখানেই শেষ না। তার বিভিন্ন অপকর্মের বর্ণনা তুলে ধরেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এতে বলা হয়েছে, সাউদ আল কাহতানি সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম চালান। দেশজুড়ে অভিজাত শ্রেণির শত শত মানুষকে গ্রেপ্তারের মূল হোতা তিনি। লেবাননের একজন প্রধানমন্ত্রীকে তিনি আটক করেছিলেন। দুটি গোয়েন্দা সূত্রমতে, তিনি জামাল খাসোগিকে নৃশংসভাবে হত্যার অভিযান পরিচালনা করেছেন। স্কাইপের মাধ্যমে তিনি হত্যার নির্দেশনা দিয়েছেন।
জামাল খাসোগি হত্যাকান্ড নিয়ে সারাবিশ্বে ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে। এমন সময়ে তার নাম প্রকাশ হয়ে পড়েছে। বলা হয়েছে, তিনি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের শীর্ষ সহযোগী। শনিবার সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় মাধ্যমে বলা হয়েছে, কাহতানি ও অন্য চারজন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছেন বাদশা সালমান। কিন্তু গত তিন বছরে ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গে তার যে দহরম মহরম, তার যে প্রভাব, তাতে তাকে গ্রেপ্তার করে কি প্রিন্স মোহাম্মদকে জামাল খাসোগি হত্যাকান্ড থেকে দূরে রাখা সম্ভব হবে!
সৌদি রাজপরিবারের খবর রাখেন এমন একটি সূত্র বলেছেন, এ ঘটনায় মোহাম্মদ বিন সালমানের পতন হবে না। তবে এতে তার ভাবমূর্তিতে আঘাত লাগবে। আর তা পুনরুদ্ধারে অনেক সময় লাগবে। প্রিন্স মোহাম্মদকে তো সুরক্ষা দিচ্ছেন বাদশা। কিন্তু কাহতানি একবার বলেছিলেন, তিনি তার বসের অনুমোদন ছাড়া কিছু করেন না কখনো। গত গ্রীষ্মে তিনি টুইট করেছিলেন। তাতে লিখেছিলেন, আপনি কি মনে করেন আমি নির্দেশনা ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নেই? আমি একজন চাকরিজীবি। আমার প্রভু বাদশা ও ক্রাউন প্রিন্সের নির্দেশনা শুধু বিশ্বস্ততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করি।
এ নিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স কাহতানির সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে। কিন্তু তিনি কোনো উত্তর দিতে রাজি হন নি। গত কয়েকদিনে টুইটারে তার বায়োগ্রাফি পরিবর্তন হয়ে গেছে। তিনি এতদিন সৌদি ফেডারেশন ফর সাইবার সিকিউরিটি, প্রোগ্রামিং অ্যান্ড ড্রোনস-এর চেয়ারম্যানের রয়েল এডভাইজার ছিলেন।
সৌদি আরবের একজন কর্মকর্তা শনিবার বলেছেন, খাসোগি হত্যার অপারেশন নিয়ে কিছু জানতেন না প্রিন্স মোহাম্মদ। তিনি অবশ্য কাউকে অপহরণ অথবা হত্যার নির্দেশ দেন নি। এ বিষয়ে রিয়াদের কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায় নি। গত তিন সপ্তাহ ধরে এই সঙ্কট জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে। আর সঙ্গে সঙ্গে খাসোগির পরিণতি নিয়ে ঘন ঘন অবস্থান পরিবর্তন করেছে সৌদি আরব। প্রথমে তারা তার হত্যার ঘটনা অস্বীকার করে। তারপর বলে, কনসুলেটের ভিতরে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার পর হাতাহাতির এক পর্যায়ে তিনি মারা গেছেন। আর এখন বলা হচ্ছে, দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করেছে। সৌদি আরবের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, খুনিরা হত্যাকান্ড ধামাচাপ দেয়ার চেষ্টা করেছে, যাতে সত্য কাহিনী কখনো প্রকাশ না পায়। এ নিয়ে সৌদি আরব যা বলেছে, তা বার বার প্রত্যাখ্যান করেছে তুরস্ক। তারা বলেছে, যা ঘটেছে তার অডিও রেকর্ডিং আছে তাদের হাতে। সৌদি আরব গত বছর আরো কিছু সঙ্কট থেকে মুক্তি পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০১৭ সালে
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ আল হারিরিকে অপহরণ। সৌদি আরব ও পশ্চিমা কূটনৈতিক সূত্রগুলোর মতে, হারিরিকেও অকথ্য ভাষা শুনতে হয়েছে। তাকে প্রহারও করা হয়েছে। এক পর্যায়ে তাকে মুক্ত করতে হস্তক্ষেপ করে ফ্রান্স। কিন্তু একটি রাষ্ট্রের প্রধানকে এভাবে আটক রাখার জন্য রিয়াদের কাছে কোন কৈফিয়ত চায়নি পশ্চিমা দেশগুলো। এতে প্রিন্স মোহাম্মদ আরো জোরালোভাবে উদয় হয়েছেন। কিন্তু এবারের ঘটনা আলাদা। খাসোগি হত্যা ও তা নিয়ে সৌদি আরবের ব্যাখ্যা নিয়ে সমালোচনার তীর ছুড়তে থাকে পশ্চিমারা। জার্মানি প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছে তারা সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করে দেবে। এর বাইরে বৃটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। তাতে ২রা অক্টোবর প্রকৃতপক্ষে কি ঘটেছিল তার সু¯পষ্ট ঘোষণা জরুরি ভিত্তিতে দিতে বলা হয়েছে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সৌদি আরবের সঙ্গে কয়েক শত কোটি ডলারের প্রতিরক্ষা চুক্তি বাতিল করার হুমকি দিয়েছেন। তবে দোদুল্যমানতায় আছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, সৌদি আরবের তদন্ত নিয়ে তিনি অসন্তুষ্ঠ। তবে তিনি সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র কেনাবেচা বন্ধ করতে চান না। তিনি মনে করেন, এর প্রভাব পড়বে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর। এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সম্পর্ক যুক্ত।