ভারতের অন্যতম প্রধান তদন্তকারি সংস্থা সিবিআইয়ের দুই শীর্ষ কর্তার লড়াই কুৎসিত রূপ নেওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রীকে ডেকে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। গত সোমবারই প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে সিবিআইয়ের ডিরেক্টর অলোক বর্মা এবং বিশেষ ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানাকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল।
কিন্তু মঙ্গলবার জানা যায়, ডিরেক্টর সংস্থার দুনম্বর শীর্ষকর্তা রাকেশ আস্থানার সব ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছেন। তার কাছে থাকা সব তদন্তের কাগজপত্র নিজের কাছে নিয়ে এসেছেন।
আরও জানা যায়, রাকেশের সঙ্গে বিভিন্ন তদন্তকাজে যারা যুক্ত ছিলেন তাদের প্রত্যেককে বলে দেওয়া হযেছে বিশেষ ডিরেক্টরের কোনও নির্দেশ পালন না করতে।
গত সোমবারই রাকেশের তদন্তকারি দলের এক ডেপুটি পুলিশ সুপারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মাংস ব্যবসায়ী মইন কুরেশি আর্থিক দুর্নীতি মামলায় সিবিআইয়ের দু নম্বর শীর্ষ প্রধান আস্থানার বিরুদ্ধে ২ কোটি রূপি ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ওই মামলায় সতীশ সানা নামে এক ব্যবসায়ীর বয়ানের ভিত্তিতে গত ১৫ই অক্টোবর তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআরও দায়ের করে সিবিআই। সেই এফআইআরে গোয়েন্দা সংস্থা 'র' এর অফিসারের নাম থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
আস্থানা শিবির দাবি করছে, ওই ঘুষ আসলে দেওয়া হয়েছিল অলোক বর্মাকেই। আস্থানাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন অলোকই। যদিও আস্থানার অভিযোগকে ‘ভুয়ো এবং বিদ্বেষপূর্ণ’ বলেই আখ্যা দিয়েছে সিবিআই। সিবিআইয়ের এই গৃহযুদ্ধের ফলে তদন্ত সংস্থার ভাবমূর্তিতে আঘাত লেগেছে বলে মনে করছেন সকলে।
বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি বিজেপিতেও প্রশ্ন উঠেছে, প্রধানমন্ত্রী কেন এই গৃহযুদ্ধ থামাতে পারছেন না।
উল্লেখ্য, রাকেশ আস্থানা গুজরাটে গোধরা সংক্রান্দ তদন্তের নেতৃত্বে ছিলেন।
মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর রাকেশকে সিবিআইয়ের বিশেষ ডিরেক্টর করে নিয়ে এসেছেন। মোদির আস্থাভাজন রাকেশকে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন চিটফান্ড মামলাসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ মামলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল রাকেশকে।
তবে প্রথম থেকেই এটা পছন্দ করেননি ডিরেক্টর অলোক বর্মা। উল্টো রাকেশ অভিযোগ তুলেছেন, অলোক ভার্মার বিরুদ্ধে। অবশ্য ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে জোরজবরদস্তি করে যাতে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, সেই অনুরোধ মঙ্গলবার দিল্লি হাইকোর্টে করেছিলেন রাকেশ আস্থানা।
আদালত এদিন জানিয়েছে, সিবিআইয়ের বিশেষ ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানাকে আগামী সোমবার পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা যাবে না। সে দিন আস্থানার সমস্ত অভিযোগের জবাব দিতে বলা হয়েছে সিবিআই ডিরেক্টর অলোক বর্মাকে। তার পরেই আস্থানার বিরুদ্ধে পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির করা হবে। আস্থানার পাশাপাশি সিবিআইয়ের আর এক আধিকারিক ডিএসপি দেবেন্দ্র কুমারও আদালতে আবেদন করেন।