খুলনায় রেলের সরকারি তেল চুরির সঙ্গে জড়িতরা গ্রেপ্তার হচ্ছে না। রেলওয়ে থানা পুলিশের নাকের ডগায় ঘুরে বেড়ানো চোর সিন্ডিকেটের সদস্যদের তারা ছুঁতেও পারছেন না। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী হওয়ায় মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের গ্রেপ্তারে রয়েছে আইনি বাধা। খুলনা রেলের যেস্থান থেকে পাইপের মাধ্যমে সরকারি তেল চুরি হতো তার ১০০ গজের মধ্যেই জিআরপি থানা ও স্টেশন মাস্টারের অফিস কক্ষ। তেল চুরির স্থানে নিয়মিত টহলও থাকে রেল পুলিশ। মামলায় তেল চুরির সঙ্গে জড়িত এজাহারভুক্তদের মধ্যে রেলের স্টেশন মাস্টার ও রেল শ্রমিক লীগের সভাপতির নাম রয়েছে। অভিযানে চোরাই তেল-মবিলসহ গ্রেপ্তার দু’জনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা র্যাবের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়। এ ঘটনায় র্যাব-৬ এর পক্ষ থেকে খুলনা রেলওয়ে থানায় গ্রেপ্তার হওয়া দু’জনসহ আরও ৬ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের হয় (নং-০২)।
খুলনা স্টেশন মাস্টারের অফিস ও রেলওয়ে থানার নাকের ডগায় প্রতিদিনই সরকারি তেল চুরির ঘটনা ঘটছে বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে। সরকারি এ তেল চুরির টাকার ভাগ রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশসহ স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মানুষের পকেটে যায় বলেও অভিযোগ রয়েছে। র্যাব-৬ এর স্পেশাল কোম্পানি কমান্ডার মো. এনায়েত হোসেন মান্নান জানান, খুলনা রেল স্টেশনে র্যাব-৬ এর অভিযানে ৫নং ঘাট বস্তি এলাকার মো. ইদ্রিস আলী হাওলাদারের ছেলে মো. ছিদ্দিক হাওলাদার (২৭) ও মৃত মতলেব আলী হাওলাদারের ছেলে মো. সজল হাওলাদার (২৬) কে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় রেলের ২৪৫ লিটার চোরাই ডিজেল ও ১২০ লিটার মবিল জব্দ করা হয়েছে। গ্র্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা সরকারি তেল চুরির সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজনের নামও বলেছে। এদের মধ্যে খুলনা রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার, এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (ফোরম্যান), রেল স্টেশন শ্রমিক লীগ নেতা জাহাঙ্গীর, রেলের নিরাপত্তাকর্মী মো. মাহমুদ (৩০), মো. শরীফুল (২৮) ও মো. মহিউদ্দিন (৩৫)। এছাড়া ৪নং লঞ্চঘাট এলাকার মেসার্স তিন্নি এন্টারপ্রাইজের কর্মকর্তা মো. আশরাফ (৪৫)। বহুদিন ধরে এ চক্রটি রেলের সরকারি তেল চুরি করে বলে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে বলে জানান র্যাব কর্মকর্তা। এদিকে স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, রেলের সরকারি তেল চুরির সঙ্গে রেল স্টেশনের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও রেল পুলিশ জড়িত। তারা নিয়মিত এ চুরির টাকার ভাগ পান। তাছাড়া স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির এ তেল চুরির টাকা নিয়ে থাকেন। খুলনা রেলওয়ে (জিআরপি) থানার ওসি ওসমান গনি পাঠান জানান, এজাহারে উল্লিখিত আসামিদের মধ্যে অধিকাংশ রেলের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। মামলাটির তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হওয়ার পর যদি তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণ মেলে তবে তাদের গ্র্রেপ্তার করা সম্ভব। এক্ষেত্রে আইনি বাধা রয়েছে বলেও জানান তিনি। তবে মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। উল্লেখ্য, গত ১৮ই অক্টোবর রাত সাড়ে ৯টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৬ সদস্যরা অভিযান চালায়। র্যাবের স্পেশাল কোম্পানি কমান্ডার মো. এনায়েত হোসেন মান্নান, সিপিসি-স্পেশাল কোম্পানির স্কোয়াড কমান্ডার মো. আমিনুল কবীর তরফদারের নেতৃত্বে এ অভিযানে তেল চুরিরকালে দু’জনকে গ্র্রেপ্তার করা হয়। অভিযানে ২৪৫ লিটার চোরাই ডিজেল ও ১২০ লিটার মবিল জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় র্যাব-৬ এর পুলিশ পরিদর্শক (শহর ও যান) মো. আনিছুর রহমান বাদী হয়ে মামলা করেন।