ঢাকার কেরানীগঞ্জে নিহত হওয়ার প্রায় ছয় মাস পরে আদালতের আদেশে গতকাল সকাল ১১টায় কবর থেকে নিহত এক যুবকের লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। কেরানীগঞ্জ রাজস্ব সার্কেল সহকারী কমিশনার(ভ’মি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মতিউর রহমান শামীমের উপস্থিতে পুলিশ নজরগঞ্জ কবরস্থান থেকে নিহত যুবক মোঃ শাকিল হোসেনের(২৯) লাশ উত্তোলন করে। লাশটি ময়না তদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরন করা হয়েছে।
মামলারবাদী মোঃ রাজা মিয়া জানান,গত এপ্রিল মাসের ২৮তারিখ রাতে নজরগঞ্জ কবরস্থান মাঠে বন্ধু একাদশ ও রেডকিংস টিমের মধ্যে ক্রিকেট খেলা চলছিল । আমার বড় ভাই নিহত শাকিল ছিল বন্ধু একাদশের ক্যাপ্টিন। খেলা চলাকালীন সময়ে একটি নোবলকে কেন্দ্র করে রেডকিংসের খেলোয়াড়দের সাথে শাকিলের টিমের খেলোয়ারদের সংঘর্ষ বাঁধে। এসময় রেডকিংসের ক্যাপ্টিন জনির নেতৃত্বে অন্যান্য খেলোয়াররা শাকিলের উপর ঝাপিয়ে পড়ে এবং তাদের হাতে থাকা ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে শাকিলকে এলাপাতারিভাবে আঘাত করলে শাকিল মাথায় ঘুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে আহত হয়।তাকে প্রথমে ঢাকা হাসপাতাল পরে মুনলাইট ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ক্লিনিকে ১দিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় শাকিল মারা যায়। এই ঘটনায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় মামলা করতে গেলে প্রভাবশালীদের চাপে থানা পুলিশ মামলা নেয়নি।
পরে গত ৯ সেপ্টেম্বর আদালতে জনি. জিকু, শফিক, রোমনসহ ১০জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলার নম্বর হচ্ছে ২০। ১০ সেপ্টেম্বর কেরানীগঞ্জ থানায় মামলাটি এফআইআরভুক্ত করা হয়। আসামীরা ক্ষমতাসীনদলের নেতাদের আত্বীয় হওয়ায় থানা পুলিশ তাদের গ্রেফতারে ব্যাপারে কোন ভ’মিকাই নেয়নি। পরে মামলাটি সিআইডিতে নেয়া হয়। সিআইডির মাধ্যমে আমার ভাইয়ের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়না তদন্তের জন্য আবেদন করা হলে আদালত কবর থেকে লাশ উত্তোলনের আদেশ দেন। নিনহত শাকিলের বড় ভাই মোঃ মনির হোসেন জানান, ঘটনাটি মিটিয়ে ফেলার জন্য প্রতিপক্ষের লোকজন আমাদের ৩লক্ষ টাকা দেয়ার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু আমরা এতে রাজি হয়নি। আমরা মামলা দিয়েছি। আদালতের যে রায় হবে তাই আমরা মেনে নিব। আমরা যাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছি তারাই উল্টো আবার আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে নানাভাবে হয়রানী করছে। নিহত শাকিলের বাড়ি নজরগঞ্জ দিঘীর পার এলাকায়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির ইন্সপেক্টর বিষনু ব্রত মল্লিক বলেন, আদালতের আদেশে কবর থেকে নিহত যুবক শাকিলের লাশ উত্তোলন করা হচ্ছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরেই এই মামলার সঠিক তদন্ত করে মামলার কার্যক্রম নিয়ে সামনে অগ্রসর হবো।
পদ্মার ভাঙনে যা কিছু হারিয়েছেন তার চেয়েও বেশি পাবেন : বেনজীর আহমেদ
শরীয়তপুর প্রতিনিধি: নড়িয়ায় নদী ভাঙ্গন দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণে এসে অ্যাডিশনাল আইজিপি ও র্যাব ফোর্সেস মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের উদ্দেশ্যে বলেন, ছোট সময় থেকে দেখেছি চাঁদপুর জেলার নদী ভাঙন। কত মানুষ ভাঙনে নিঃস্ব হয়েছেন। ভিটে মাটি, স্বজন হারানোর ব্যথা আমি বুঝি। আর এ বছরও শুনেছি ও এসে দেখলাম শরীয়তপুর নড়িয়ার নদী ভাঙন। ভাঙনে শরীয়তপুরের ৫ হাজার ৮১টি পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষের সাঙ্গে কথা বলেছি। তাদের সুখ দুঃখের কথা শুনালম।
তিনি বলেন, যারা ভাঙনে নিঃস্ব হয়েছেন। মনের বিশ্বাস, আস্তা হারাবেন না। মন থেকে গরিব বিদায় করতে হবে। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আছেন। পদ্মায় যা কিছু হারিয়েছেন। তার চেয়েও বেশি পাবেন। প্রধানমন্ত্রী দেবেন।
মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১২ টার দিকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৮ এর ব্যবস্থাপনায় শরীয়তপুরের নড়িয়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের সময় তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে নড়িয়া মুলফৎগঞ্জ ও বাঁশতালা ভাঙনকৃত এলাকা পরিদর্শন করেন তিনি।
তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নের্তৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০২৪ সালের আগে মধ্যম আয়ের দেশ হবে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী বিশাল সমুদ্র জয় করেছেন।
তিনি বলেন, নদীর তলদেশে পলি পরে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। নদীগুলো ড্রেজিং করে সমুদ্রে ফালাতে পারলে আমরা আরেকটি বাংলাদেশ পাব। প্রধানমন্ত্রী আগামী ১০০ বছরের পর কি করবে সেই ডেলটা প্লান করেছেন।
প্রত্যেক জাতীয় নির্বাচনের আগ মুহূর্তে দেশে অরাজগতা সৃষ্টি হয়, আগামী নির্বাচনে এমন হবে কিনা? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বেনজীর আহমেদ বলেন, মানুষের ভীত হওয়ার কারণ নাই। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য যেই পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন র্যাবের পক্ষ থেকে সেই পদ ক্ষেপ নেয়া হবে।
এ সময় র্যাবের লিগাল এন্ড মিডিয়া ডাইরেক্টর মুফতি মাহমুদ খান, র্যাবের অতিরিক্তি ডিআইজি আতিকা ইসলাম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম, শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের, শরীয়তপুর পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন, মেজর খান সজিবুল ইসলাম, শরীয়তপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আল মামুন শিকদার, মাদারীপুর ক্যাম্পের কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাজুল ইসলাম, ফরিদপুর ক্যাম্পের কমান্ডার মো. রইছ উদ্দিন, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সোয়েব আহামেদ খান, নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা ইয়াসমিন, নড়িয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাজী আব্দুল ওহাব বেপারী, নড়িয়া পৌরসভার মেয়র শহিদুল ইসলাম বাবু রাড়ি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মাদারীপুর ক্যাম্পের র্যাবের কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাজুল ইসলাম জানান, র্যাব হেড কোয়াটারের অর্থায়নে নড়িয়ায় নদী ভাঙন ক্ষতিগ্রস্ত ২০০ পরিবারকে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। ত্রাণের মধ্যে রয়েছে চাল, বিস্কুট, ডাল, আটা, চিনি, গুড়, মুড়ি, নুডুলস, তেল, ফ্রুটো, ওরস্যালাইন, চা (টি ব্যাগ), হুইল সাবান লাইফবয় সাবান, শাড়ি ও লুঙ্গি । এছাড়াও ভাঙনে সব হারানো ৪২টি পরিবারকে ৪২ বান্ডিল টিন বিতরণ করা হয়।