× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

একজন কাহতানির উত্থান

বিশ্বজমিন

মানবজমিন ডেস্ক
(৫ বছর আগে) অক্টোবর ২৪, ২০১৮, বুধবার, ৮:১৭ পূর্বাহ্ন

সাউদ আল কাহতানি (৪০)। সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত। দেশে তার পরিচিতি দু’রকম। একটি হলো তিনি সহিংসভাবে খেয়ালখুশিমতো কাজ করেন রাজকীয় ভঙ্গিতে। দ্বিতীয়ত, তিনি হলেন একজন অতি মাত্রায় একজন জাতীয়তাবাদী। ব্লগে এবং সামাজিক মাধ্যমে সৌদি আরবের কিছু উদার সাংবাদিক ও এক্টিভিস্ট সংবাদ মাধ্যমের ওপর আগ্রাসীভাবে হস্তক্ষেপ ও ঘটনার নেপথ্যে থাকার কারণে তাকে সৌদি আরবের স্টিভ ব্যানন বলে আখ্যায়িত করেন।
টুইটারে তিনি দারি (উধৎর) নামে উদ্ভট সব বিষয় লিখে থাকেন। তার এই নামের অর্থ আরবীতে শিকারি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার কিছু বিরোধী তাকে ডালিম নামে অভিহিত ডেকে থাকে। আরবিতে এই ডালিম শব্দটি আছে রূপকথায়। এর অর্থ হলো নি¤œ পর্যায়ের একজন চাকর থেকে অনেক বড় কিছু হয়ে যাওয়া।
টুইটার একাউন্টে তার জীবনী অনুযায়ী, কাহতানি পড়াশোনা করেছেন আইন বিষয়ে। তারপর সৌদি আরবের বিমান বাহিনীতে ক্যাপ্টেন পদের অধিকারী হন। একটি ব্লগ চালু করার পর তিনি সৌদি আরবের রয়েল কোর্টের সাবেক প্রধান খালেদ আল তুওয়াইজরি’র নজরে পড়ে যান। ফলে তিনি তাকে ২০০০ সালের দিকে নিয়োগ করেন সেনা নিয়ন্ত্রিত একটি ইলেকট্রনিক মিডিয়া চালানোর জন্য, এই মিডিয়া সৌদি আরবের ভাবমূর্তি রক্ষার কাজে নিয়োজিত। সৌদি আরবের রয়েল কোর্টের একটি সূত্র এসব তথ্য দিয়েছেন। বর্তমানে খালেদ আল তুওয়াইজরি রয়েছেন গৃহবন্দি। ফলে তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায় নি।
প্রিন্স মোহাম্মদের সঙ্গে সম্পর্ক হওয়ার পর কাহতানি নিজের প্রভাবকে আরো বাড়িয়ে তোলেন কাহতানি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাতারের প্রভাবকে মোকাবিলা করার দায়িত্ব পড়ে তার ওপর। সৌদি আরব ও প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সমালোচনা যারা করেন বা করেছেন তাদেরকে আক্রমণ করতে টুইটার ব্যবহার করেন কাহতানি। এ ছাড়া তিনি স্থানীয় সংবাদপত্রগুলোর সম্পাদক ও সুপরিচিত সাংবাদিকদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে একটি গ্রুপ পরিচালনা করেন। তাতে রাজকীয় লাইনে তিনি নির্দেশনা দিতে থাকেন।
২০১৭ সালের জুনে অর্থনৈতিকভাবে কাতারকে বয়কট করে রিয়াদ। এ সময় উপসাগরীয় এই ছোট্ট দেশটিকে জোরালো আক্রমণ জোরালো করেন কাহতানি। এ সময় তিনি একটি হ্যাসট্যাগ চালু করেন। আরবিতে এর নাম দেন ‘কালো তালিকা’। সৌদি আরবের নাগরিকদের প্রতি টুইটারে আহ্বান জানান কাতারের প্রতি কোনো রকম সহানুভূতি দেখাচ্ছে এমন কেউ থাকলে তাদের নাম প্রকাশ করতে।
সৌদি আরবের উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ও সূত্রগুলো, যাদের সঙ্গে রয়েল কোর্টের সম্পর্ক আছে, তারা বলেছেন, গত বছর শেষের দিকে প্রিন্স মোহাম্মদ যখন দমন পীড়ন চালান তখন তার ‘ব্যাপ কপ’ বা নির্দয় সহযোগী হয়ে উছেছিলেন কাহতানি। ওই সময় বেশ কিছু সৌদি প্রিন্স, মন্ত্রী, ব্যবসায়ী ধনকুবেরকে আটক করা হয়। রিটজ কার্লটন হোটেলে তাদেরকে গৃহবন্দি করা হয়। দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে এমনটা করা হয় বলে বলা হয়। আরব এক কর্মকর্তা বলেন, তাদের অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ তদারক করেন কাহতানি।
গত বছর সৌদি আরবে ডেকে এনে অপহরণ করা হয় লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ আল হারিরিকে। বলা হয় এর মাধ্যমে কাহতানি সম্ভবত তার সর্বোচ্চ কৌশল বা ক্ষমতা প্রয়োগ করেছেন। এমন কথা মনে করেন সৌদি আররের বেশ কিছু কূটনৈতিক সূত্র। সৌদি আরবের মধ্যে আতঙ্ক ছিল যে, ইরানের সর্বোচচ ধর্মীয় আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির একজন শীর্ষ উপদেষ্টার কাছে একটি বার্তা পাঠাতে ব্যর্থ হয়েছেন হারিরি। সেই বার্তাটি হলো, ইরান যেন লেবানন ও ইয়েমেনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বন্ধ করে। হারিরি দাবি করেন, তিনি সৌদি আরবের এই বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। কিন্তু কাহতানি তাকে এত সহজে ছেড়ে দেয়ার পাত্র নন। তিনি হারিরির চারপাশে গুপ্তচর লাগিয়ে রাখেন। সেই সব সূত্রের একটি শেষ মুহূর্তে জানান দেন যে, আসলে হারিরি ওই বার্তা পৌঁছান নি।
এর ফলে প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে একটি সাক্ষাতের জন্য সৌদি আরবের রিয়াদে আসতে প্রলুব্ধ করা হয় হারিরিকে। ২০১৭ সালের ৩রা নভেম্বর তিনি রিয়াদ পৌঁছেন। তবে তাকে স্বাগত জানাতে ক্রাউন প্রিন্স বা কোনো সরকারি কর্মকর্তা বিমানবন্দরে ছিলেন না। এক পর্যায়ে হারিরি একটি ফোনকল পান। তাতে বলা হয়, প্রিন্স মোহাম্মদের সঙ্গে তার বৈঠক হবে পরের দিন।
ওই বৈঠকে যোগ দিতে উপস্থিত হন হারিরি। এ সময় তাকে একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই ঘটনা জানেন সৌদি আরবের এমন তিনটি সূত্র বলেছেন, ওই কক্ষে একটি নিরাপত্তা দল নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন সাউদ আল কাহতানি। সেখানেই তার সামনে হারিরিকে প্রহার করে ওই নিরাপত্তা দল। হারিরিকে নানাভাবে অভিশপ্ত করতে থাকেন কাহতানি। তারপর তাকে একটি বিবৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী পদ ত্যাগে বাধ্য করেন, যা সৌদি মালিকানাধীন টিভি চ্যানেলে সম্প্রচার করা হয়। একটি সূত্র বলেছেন, হারিরিকে কাহতানি বলেছেন- আপনার সামনে পদত্যাগ করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। এই বিবৃতি পড়–ন।
ওই সূত্রটি আরো বলেন, হারিরিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তার সঙ্গে অশোভন আচরণের সবটাই তদারক করেন কাহতানি। আরেকটি সূত্র বলেছেন, ঘটনায় হস্তক্ষেপ করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন। এর ফলেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্ষোভ প্রকাশ পেতে থাকে। ফলে হারিরিকে মুক্ত করার কৃতিত্ব যায় ম্যাক্রনের পকেটে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর