রক্ষণশীল দেশ ইরানের কমপক্ষে ১ কোটি মানুষ প্রতিবন্ধী। সেখানে এই অসহায় মানুষদের ঘিরে যে চর্চা গড়ে উঠেছে সেটি এক লজ্জাজনক অধ্যায়। বিবিসি’র নারী বিষয়ক সাংবাদিক ফেরানাক আমিদির লেখায় উঠে এসেছে তাদের না বলা সেই কথাগুলো। ১৯৭৯ সালে এক এন্টি-ওয়েস্টার্ন বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ইরানে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামী আইন। এরপর থেকে দেশটির সর্বত্র রক্ষণশীলতার কালো চাদরে ঢেকে যেতে শুরু করে। স্বাভাবিক যৌন সমপর্কগুলোও সামাজিকভাবে একটি ট্যাবুতে পরিণত হয়। যৌনতাকে ঘিরে নানা কুসংস্কারের সব থেকে বড় শিকার হতে শুরু করে প্রতিবন্ধীরা। মানুষের মতো প্রতিবন্ধীদেরও রয়েছে যৌন চাহিদা। কিন্তু রক্ষণশীল সমাজ ও নানা প্রতিবন্ধকতায় যৌনতা নিয়ে প্রতিবন্ধীরা হতাশ হয়ে উঠছেন।
ইরানের উত্তরাঞ্চলের একটি ছোট গ্রামের বাসিন্দা মিত্রা ফারাজানদেহ।
প্রতিবন্ধী এই নারী তুলে ধরেছেন যৌনতা নিয়ে তার হতাশার কথা। তিনি বলেন, আমি ছোট বেলা থেকেই একজনকে ভালোবাসি। সে আমাদের প্রতিবেশী এক বালক। কিন্তু আমাদের মধ্যে কখনো যৌন সমপর্ক গড়ে উঠেনি। অথচ আমি চাই সে মানুষটা তার কাঁধে টেনে নেবে আমাকে, মাথার চুলে হাত বুলিয়ে দেবে। দুঃখজনক হলোও আমাদের সমাজের অনেক মানুষ মনে করেন আমার মতো মানুষেরা ভালোবাসতে পারেন না অথবা তাদের কেউ ভালোবাসতে পারে না।
সত্যিই তো তাই হচ্ছে। শুধু ইরান নয়, সমগ্র বিশ্বজুড়েই প্রতিবন্ধীদের ঘিরে রয়েছে নানা বৈষম্য। এই সমাজসৃষ্ট নিয়মগুলো প্রতিবন্ধীদের মানুষ ভাবতে বাধা দিচ্ছে। এই অসহায় মানুষগুলো শুধু একটি অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু সব থেকে বড় সত্যি হচ্ছে তারাও মানুষ। আর দশজন নারীর মতো একজন প্রতিবন্ধী নারীরও চাহিদা ও অনুভূতি রয়েছে। কিন্তু বছরের পর বছর তারা শুধু এ অনুভূতিগুলোকে নিজের মধ্যে কবর দিয়ে রাখে। তাদের ভালোবাসা নেয়ার কেউ নেই, ভালোবাসার কেউ নেই। এটি তাদের জীবনকে নরক বানিয়ে দেয়।
তাই এখনই আমাদের প্রতিবন্ধীদের বিষয়ে ধারণার গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন দরকার। তাদেরও যৌন চাহিদা রয়েছে- এটা আমাদের এখন মেনে নিতে হবে, স্বাভাবিকভাবে দেখতে হবে। তাদের জীবনেও পরিপূর্ণতার দরকার আছে সেটা বিশ্বাস করতে হবে। শারীরিক অক্ষমতার দোহাই দিয়ে জীবনকে উপভোগের অধিকার থেকে তাদের দূরে সরিয়ে রাখা যাবে না। আমরা যখনই এটা শুরু করতে পারবো, আস্তে আস্তে সমাজও পরিবর্তিত হবে। একজন প্রতিবন্ধী নারীর স্বাভাবিক যৌন চাহিদা যদি পূরণ না হয় তাহলে তার খারাপ প্রভাব রয়েছে। স্বাভাবিক যৌনতার অধিকার তাদেরকে বিকশিত হতে সাহায্য করবে।
তারাও যে মানুষ, তাদের অধিকারের যে মূল্য রয়েছে- সেটা তারা বিশ্বাস করতে শুরু করবে। তাদের মধ্যে পূর্ণতাই পারে প্রতিবন্ধীদের সমাজের অন্যদের কাতারে নিয়ে আসতে।