× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শ্রীলঙ্কায় সংসদ ভেঙে দিলেন প্রেসিডেন্ট

প্রথম পাতা

মানবজমিন ডেস্ক
১১ নভেম্বর ২০১৮, রবিবার

পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা। পাশাপাশি তিনি আগাম জাতীয় নির্বাচন ঘোষণা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী আগামী ৫ই জানুয়ারি সেখানে নির্বাচন হওয়ার কথা। দেশটির সংখ্যালঘু তামিলরা পার্লামেন্টে তার জোটকে সমর্থন দিতে রাজি না হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তিনি এ ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বুঝতে পেরেছেন তার নিযুক্ত নতুন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপাকসে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পাবেন না। এটা বোঝার পরই তিনি পার্লামেন্ট ভেঙে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল-জাজিরা।

গত ২৬শে অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী রণিল বিক্রমাসিংহেকে বরখাস্ত করেন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা।
নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ রাজাপাকসেকে। সঙ্গে সঙ্গে ১৬ই নভেম্বর পর্যন্ত পার্লামেন্ট স্থগিত করেন। কিন্তু প্রেসিডেন্টের ওই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে রণিল বিক্রমাসিংহে নিজেকে শ্রীলঙ্কার বৈধ প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন। তাকে সমর্থন করেন পার্লামেন্ট স্পিকার কারু জয়সুরিয়া। এ নিয়ে সেখানে মারাত্মক এক সাংবিধানিক সংকট তৈরি হয়। তার মধ্যে শুক্রবার দিন শেষে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে আগাম নির্বাচন ঘোষণা করেন। এতে শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক সংকট জটিল থেকে জটিলতার দিকে যাচ্ছে। শুক্রবার পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার গেজেট নোটিফিসেশনে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা বলেন, শুক্রবার মধ্যরাত থেকে পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়া কার্যকর হবে। নতুন পার্লামেন্ট বসবে আগামী ১৭ই জানুয়ারি। তার এমন ঘোষণার তাৎক্ষণিক নিন্দা জানিয়েছেন ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) নেতা ও বরখাস্তকৃত প্রধানমন্ত্রী রণিল বিক্রমাসিংহে। তিনি এক টুইটে প্রেসিডেন্টের পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্তকে জোর দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছেন। প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে জনগণের অধিকার ও গণতন্ত্রকে ডাকাতি করার অভিযোগ এনেছে তার দল ইউএনপি।

ইউএনপি বলেছে, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ দেয়ার কর্তৃত্ব আছে প্রেসিডেন্টের। কিন্তু ক্ষমতাসীন সরকারকে বরখাস্ত করার ক্ষমতা তার নেই। তাই তারা রণিল বিক্রমাসিংহের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ দেয়ার জন্য পার্লামেন্টে ভোট দাবি করেছেন। অন্যদিকে গত ২৬শে অক্টোবর বরখাস্ত হওয়ার পর রণিল বিক্রমাসিংহে সরকার নির্ধারিত প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনেই অবস্থান করছেন। সেখান থেকে তিনি এ পর্যন্ত বাইরে আসেননি। ওদিকে একজন কেবিনেট মন্ত্রী দয়াসিরি জয়াসেকারা আল-জাজিরাকে বলেছেন, রণিল বিক্রমাসিংহে পদ থেকে সরে যেতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়া ছাড়া প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার হাতে আর কোনো বিকল্প ছিল না। তিনি সংবিধানের অধীনে থেকে পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে ভালো কাজ করেছেন। একটি নির্বাচনের জন্য এটাই উত্তম পন্থা। ওই নির্বাচনেই নির্ধারিত হবে জনগণ কী চায়।
তবে পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা নিযুক্ত নতুন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপাকসে। তিনি এ বিষয়ে একটি টুইট করেছেন। তাতে বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের মধ্যদিয়েই সত্যিকার অর্থে জনগণের ইচ্ছা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং স্থিতিশীল দেশ গঠনের পথ বেরিয়ে আসবে।

দেশটিতে ক্ষমতা নিয়ে ‘যুদ্ধ’ শুরু হয় প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা ও প্রধানমন্ত্রী রণিল বিক্রমাসিংহের মধ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরে। সেখানে পার্লামেন্টে আসন ২২৫টি। এর মধ্যে কোনো দল ১১৩ আসন পেলে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় এবং সরকার গঠন করতে পারে। রণিল বিক্রমাসিংহেকে বরখাস্তের পর সেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ দিতে বিক্রমাসিংহে নতুন করে পার্লামেন্ট অধিবেশন ডাকার আহ্বান জানান। সে ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু তামিলদের প্রতি সরকার তাদেরকে সমর্থন দেয়ার আহ্বান জানায়। কিন্তু তারা সাফ মাহিন্দ রাজাপাকসেকে অবৈধ সরকার বলে ঘোষণা দিয়ে তাকে সমর্থন দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এর ফলে প্রেসিডেন্ট বুঝে যান পার্লামেন্ট অধিবেশন আহ্বান করলে সেখানে তিনি ও মাহিন্দ রাজাপাকসে হেরে যাবেন। এটা বুঝতে পেরেই তিনি শুক্রবার দিন শেষে পার্লামেন্ট ভেঙে দেন।

প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার ইউনাইটেড পিপলস ফ্রিডম অ্যালায়েন্সের (ইউপিএফএ) রয়েছে পার্লামেন্টে ৯৬টি আসনের সমর্থন। গত দু সপ্তাহে তারা আরো কমপক্ষে ৯টি আসনের সমর্থন আদায়ে সক্ষম হয়েছেন। তাতে তাদের আসন সংখ্যা দাঁড়ায় ১০৫। যা সরকার গঠনের জন্য যথেষ্ট নয়। অন্যদিকে ইউএনপির আসন সংখ্যা ১০৬টি। সেখান থেকে পক্ষ ত্যাগ করার কারণে এখন তাদের নিট আসন সংখ্যা ৯৮টি। তবে তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তামিলদের জোট তামিল ন্যাশনাল এলায়েন্স (টিএনএ)। তাদের রয়েছে ১৫টি আসন। এই সমর্থন নিয়ে ইউএনপির আসন সংখ্যা দাঁড়ায় ১১৩, যা সরকার গঠনের জন্য যথেষ্ট। ১৪ই নভেম্বর সেখানে নতুন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপাকসের ওপর অনাস্থা ভোট হওয়ার কথা ছিল। তাতে তামিলরা রাজাসপাকসের বিরুদ্ধে ভোট দেয়ার কথা প্রকাশ্যে জানিয়ে দেয়। এমন অবস্থায় শুক্রবার দিনের শুরুতে ইউপিএফএ’র মুখপাত্র কেহেলিয়া রামবুকওয়েল্লা প্রথমবার প্রকাশ্যে মুখ খোলেন এ নিয়ে। তিনি স্বীকার করেন তাদের জোট পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা পার্লামেন্টে ১০৪ থেকে ১০৫টি আসন আছে।

মিশ্র প্রতিক্রিয়া: দেশে যে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হয়েছে তা থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র উপায় পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়া- এমনটা মন্তব্য করেছেন রাজধানী কলম্বোতে রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাজিথা কীর্তি। তিনি বলেন, এর চেয়ে ভালো হতো যদি প্রেসিডেন্ট সুপ্রিম কোর্টের কাছে মতামত চাইতেন। কিন্তু সংবিধান সেই ম্যান্ডেট দেয়নি।

রণিল বিক্রমাসিংহকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্তের পর থেকেই প্রতিদিনের বিক্ষোভ সমাবেশ করে আসছেন মানবাধিকার বিষয়ক কর্মী শ্রনি সারুর। তিনি বলেন, পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার মধ্যদিয়ে আরেকটি অসাংবিধানিক কাজ করা হয়েছে। তার ভাষায়, প্রেসিডেন্ট এমনটা করেছেন। কারণ, তিনি নিশ্চিত যে, মাহিন্দ রাজাপাকসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ দিতে পারবেন না। প্রেসিডেন্ট যা করেছেন তা ভবিষ্যতে কোনো নেতার সর্বোচ্চ শক্তিকে অতিক্রম করার উপমা। তার মতে, পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার ফলে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা তার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপাকসে ও নতুন মন্ত্রিপরিষদকে রাখতে পারবেন। এর মধ্যদিয়ে তারা আগামী নির্বাচনে সম্পদের বা উৎসের অপব্যবহার করার দরজা উন্মুক্ত রাখছেন।
মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী জিহান গুনাতিলেকে বলেছেন, আসন্ন নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা ইউএনপির সুযোগ শেষ করে দিতে পারেন। এই অসাংবিধানিক আচরণ নির্বাচনকে ধ্বংস করে দিতে পারে মারাত্মকভাবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর