× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

রাজধানীতে আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষ, নিহত ২

প্রথম পাতা

স্টাফ রিপোর্টার
১১ নভেম্বর ২০১৮, রবিবার

রাজধানীতে আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে গাড়িচাপায় আরিফ হোসেন ও সুজন মিয়া নামের দুই কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মোহাম্মদপুর থানার নবোদয় হাউজিংয়ের লোহারগেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ১৪ জন। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খানের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। এ দুই নেতাই আগামী নির্বাচনে ঢাকা-১৩ আসন (মোহাম্মদপুর-আদাবর) থেকে মনোনয়ন চাইছেন। সংঘর্ষে নিহতরা সাদেক খান পক্ষের কর্মসূচিতে যাচ্ছিল। আহত মাশফিক, পলাশ, সবুজ, জলিল, মাসুদ, নজরুল, আবেদ, ফজলু, আনোয়ার হোসেন, ইদ্রিস আলী, কেএম হালিমও সাদেক খান পক্ষের। তাদের ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
গতকাল সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ওই এলাকার বিভিন্ন স্থানে এই ঘটনা ঘটেছে।

সাদেক খান গ্রুপের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, তাদের নেতাকে মনোনয়ন কিনতে বাধা দেয়ার জন্য এমপি নানক গ্রুপের নির্দেশে আদাবর থানা যুবলীগের আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম তুহিনের নেতৃত্বে অতর্কিত হামলা চালানো হয়েছে। হামলায় অংশ নেয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। যদিও এমপি নানক ও যুবলীগ নেতা তুহিন এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। এদিকে, এ ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী দুইদিনের মধ্যে ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
সরজমিন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান থেকে জানা যায়, ঢাকা-১৩ আসনের এমপি জাহাঙ্গীর কবির নানক এবার ওই আসন থেকে ফের নির্বাচন করবেন। পাশাপাশি একই আসন থেকে এবার মনোনয়ন প্রত্যাশী মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান। গতকাল সাদেক খানের ওই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কেনার কথা ছিল। সে মোতাবেক তিনি তার সব নেতাকর্মী নিয়ে একটি বড় শোডাউনের আয়োজন করেছিলেন। আদাবরের প্রতিটি ইউনিটের আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা শোডাউনে অংশ নেন। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সকাল ৯টায় ঢাকা উদ্যান থেকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানম-ির কার্যালয়ের দিকে রওয়ানা হওয়ার কথা ছিল।

তাই বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা জড়ো হওয়া শুরু করেছিলেন। একই সঙ্গে জড়ো হতে থাকেন নানক গ্রুপের নেতাকর্মীরাও। সকাল ১০টার দিকে সাদেক গ্রুপের নেতাকর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় নানক গ্রুপের নেতাকর্মীরা। হামলার শিকার হওয়া নেতাকর্মীদের তথ্যমতে, আদাবর-১০, আদাবর-১৬, গোল্ডেন স্ট্রিট, ঢাকা হাউজিং, শনিরবিল, মেহেদিবাগ, নবোদয় হাউজিংয়ের লোহার গেট এলাকার মোহাম্মদী হোমস, শম্পা মার্কেটসহ আরো একাধিক স্থানে হামলা করা হয়। এ সময় হামলাকারীদের হাতে হকিস্টিক, চাপাতি, ইট, রড ও লাঠি ছিল। তবে, শম্পা মার্কেটের সামনে সবচেয়ে বড় হামলা এবং মোহাম্মদী হোমসের ভেতরে ওই দুই কিশোর নিহতের ঘটনা ঘটেছে।

সরজমিন নবোদয় হাউজিংয়ের লোহারগেট এলাকার মোহাম্মদী হোমসের প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায় নিহত দুই যুবকের রক্তে ভিজে আছে সড়কের একটি অংশ। প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদীয়া হোমসের নিরাপত্তাকর্মী আবুল বাশার বলেন, ঘড়িতে তখন ১০টা বাজে। আমি আমার ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করছিলাম। হঠাৎ করেই একটি পিকআপ আমার থেকে ২০/২৫ হাত দূরে এসে দাঁড়ায়।

আর তার সামনে মোটরসাইকেলে করে আসে আরো কয়েকজন যুবক। এর কয়েক মিনিট পর হঠাৎ করে ফটকের বাইরে থেকে আরো কয়েকজন যুবক হাতে ইট, লাঠি ও রড নিয়ে ধর ধর বলে চিৎকার দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে পিকআপের যুবকদের ওপর হামলা চালায়। ওই যুবকরা অপ্রস্তুত ছিল, কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। তাদের হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। তখন তাদের বহনকারী পিকআপটি তড়িঘড়ি করে ঘুরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় মাটিতে পড়ে যাওয়া দুই কিশোর পিকআপের নিচে পড়ে যায়। পিকআপটি চলে গেলেও সেখানেই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে মারাত্মক আহত হওয়া ওই দুই কিশোর। পরে সঙ্গে থাকা অপর কর্মীরা তাদের নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। শুনেছি হাসপাতালেই তারা মারা গেছেন। ঘটনাস্থলের ঠিক সামনের ভবনের নিরাপত্তাকর্মী আব্দুর জব্বার বলেন, সকালেই আমি খুলনা থেকে এসেছি। সকালে যখন আমি বাসায় প্রবেশ করি তখন বাসার সামনে একটি পিকআপে কয়েকজন যুবককে বসে থাকতে দেখেছি। তার পাশে কয়েকটি মোটরসাইকেলে আরো কয়েকজন যুবক ছিল। পরে আমি আবার বাসার বাইরে হোটেলে খেতে গিয়েছিলাম। ২০ মিনিট পরে এসে দেখি এখানে শুধু রক্ত পড়ে আছে।

আশপাশে পিকআপ ও মোটরসাইকেলের কোনো লোকজন নাই। প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাচালক মনির হোসেন বলেন, প্রধান ফটকের সামনেই আমি বসে ছিলাম। তখন বেড়িবাঁধের রোড থেকে একটি পিকআপ আসতে দেখেছি। কিছুক্ষণ সেটি সেখানে দাঁড়িয়েছিল। পরে হঠাৎ করেই কিছু যুবক রড, হাতুড়ি, ইট নিয়ে পিকআপের ওপর থাকা যুবকদের ওপর হামলা করে।
হামলায় নিহত আরিফের সহকর্মী সাগর বলেন, আমাদের নেতা সাদেক খান গতকাল মনোনয়নপত্র কিনতে যাবেন তাই আমরা অনেকেই সঙ্গে যাওয়ার জন্য রওয়ানা দেই। অন্য সড়কে যানজট থাকায় আমরা লোহারগেট এলাকা দিয়ে প্রবেশ করি। মোহাম্মদীয়া হোমসের ভেতরে আরো কিছু কর্মী আসার কথা ছিল। আমরা সবাই আড্ডা দিতে দিতে তাদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ঠিক তখন আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়। আমরা কিছু বুঝে উঠার আগেই তারা আমাদের বেধড়ক পেটাতে থাকে। পিকআপের উপরে উঠে যখন আমাদের মারছিল তখন তারা আরিফের মাথায় ইট দিয়ে ও সুজনের মাথায় হকিস্টিক দিয়ে আঘাত করে। তখন আরিফ ও সুজন মাটিতে লুটে পড়ে।

এ সময় আমাদের বহনকারী পিকআপটি তড়িঘড়ি করে ঘুরিয়ে যাবার সময় আরিফ ও সুজনের মাথার ওপর দিয়ে চলে যায়। পরে আমরা দু’জনকে উদ্ধার করে আরিফকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও সুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। চিকিৎসকরা তাদেরকে মৃত ঘোষণা করেন। আরিফের ভাই আলা উদ্দিন বলেন, আমি গতকাল কাজে যাইনি তাই বাসায় ছিলাম। সকাল ১০টার দিকে বাসার বাইরে যাই। তখন আমার ভাইয়ের এক বন্ধু এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করতে থাকে। কেঁদে কেঁদে বলতে থাকে তাদের ওপর হামলা হয়েছে ও আরিফের মাথায় ইটের আঘাত লেগেছে। নিহত আরিফের বাড়ি তুরাগ হাউজিং সোসাইটি এলাকায়। সে ঢাকা উদ্যানে কাজ করতো। তার বাবা ফারুক হোসেন রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। অপর নিহত সুজনের বাড়ি ভোলার লালমোহনপুরে। সেও রাজমিস্ত্রির কাজ করতো।

এদিকে, বিকালে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় সাদেক খান গ্রুপের নেতাকর্মীরা সেখানে ভিড় করছেন। জরুরি বিভাগে কথা হয় হামলার শিকার আদাবর থানা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মাশফিক এ ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতা সাদেক খানের পক্ষে মনোনয়নপত্র ক্রয় উপলক্ষে আমাদের একটি কর্মসূচি ছিল। সকালে আমরা শম্পা মার্কেটের সামনে জড়ো হতে থাকি। মহিলা বিষয়ক সম্পাদকসহ মার্কেটের সামনে আমরা ১৫/২০ জন দাঁড়িয়ে ছিলাম। রাস্তার উল্টো পাশে ব্যান্ডপার্টিসহ আরো ৩০/৪০ জনের একটি টিম আমাদের সঙ্গে যোগ দেয়ার জন্য আসছিল। ঠিক তখনই মোটরসাইকেলে করে রড, লাঠি, হাতুড়ি নিয়ে নানক সমর্থকরা রাস্তার ওই পাশে থাকা আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে। তিনি বলেন, আমি তখন আমাদের মহিলা সম্পাদিকাকে নিরাপদ জায়গায় রেখে সেখানে যাই। তারা তখন আমার ওপরে হামলা চালায়। শুধু আমি নই আমাদের যারাই সেখানে ছিল তারা সবাই এই অতর্কিত হামলার শিকার হয়েছে।

যারা হামলা করেছে তাদের কয়েকজন চেনা মুখ আর অন্যরা অচেনা। তবে কে বা কারা এই হামলা করিয়েছেন আমরা তাদেরকে চিনি। আহত আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা সবাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করি। সারা জীবন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কিন্তু আজ আমরা আমাদের নিজের দলের নেতাদের নির্দেশেই হামলার শিকার হয়েছি। আদাবর থানা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মো. আনিস হোসাইন ফরিদ বলেন, মাশফিক যদি আমাকে ধাক্কা না দিত তাহলে আমার গায়েও চাপাতির কোপ পড়ত। তারপরেও আমার পায়ে আঘাত লেগে পুরো পা ফুলে গেচে। তিনি বলেন, আমরাতো আওয়ামী লীগ করি তাই সংঘাত চাই না। নেত্রী যাকে মনোনয়ন দেবে আমরা তার পক্ষে কাজ করবো। কিন্তু কেন এই হামলা। থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রিয়াজ উদ্দিন বলেন, আমরা দলের জন্য কাজ করতে চাই। দলের ঊর্ধ্বতন নেতারা আমাদের যেভাবে কাজ করার কথা বলবেন সেভাবেই কাজ করবো। কিন্তু আজকেতো বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা এসে হামলা করেনি। আমরা এই হামলার সুষ্ঠু বিচার চাই।

মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) একে আজাদ আহমেদ বলেন, নবোদয় হাউজিংয়ের লোহারগেট এলাকার ঘটনায় আমরা সিসি টিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করেছি। ফুটেজে কিছু মানুষের ধাওয়া দিয়ে ভেতরে প্রবেশ, পিকআপে থাকা লোকের দৌড়াদৌড়ি ও গাড়ি থেকে নামার দৃশ্য দেখা গেছে। কিন্তু ওই দুই ছেলে কিভাবে নিহত হয়েছে সেটা এখনো উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। আমরা ধারণা করছি তড়িঘড়ি করে নামার সময় ওই পিকআপের চাকায় তারা মারা গেছে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। আমরা এ বিষয়ে আরো তদন্ত করে দেখবো।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর