নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিরোধপূর্ণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে পারে ঐক্যফ্রন্ট। তফসিল ঘোষণা নিয়ে ২০ দল এবং ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা অসন্তোষ প্রকাশ করলেও নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষেই ফ্রন্টের বেশিরভাগ নেতার অবস্থান। রাজনীতির সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছেড়ে না দিতে আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের নীতিগত এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি।
নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার ব্যাপারে দলের কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানের প্রাথমিক ইঙ্গিত ও বুধবার দলের নেতাদের সিরিজ বৈঠকের মতামত নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে বৈঠকে বসেছিলেন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম। বৈঠকে প্রায় সব সদস্য নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় নির্বাচনমুখী আন্দোলনের কৌশল নির্ধারণে গতকাল ফের সিরিজ বৈঠক করেছে বিএনপি, ২০দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। নির্বাচনে অংশ নিলে ন্যূনতম কি কি দাবি পূরণের শর্তে অংশ নেবে, অংশ না নিলেও কোন কৌশলে এগোবেÑ তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট আলোচনা-পর্যালোচনা করেছেন নেতারা। বিএনপি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মতামত নেয়ার বিষয়ে আলোচন হয়। তারই প্রেক্ষিতে আজ সকালে একটি প্রতিনিধি দল তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে কারাগারে যেতে পারেন।
এদিকে সিরিজ বৈঠকের সর্বশেষ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকের পর বিএনপি মহাসচিব ও ফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, রোববার দুপুর ১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ড. কামাল হোসেন নির্বাচন ইস্যুতে ফ্রন্টের অবস্থান জানাবেন। এদিকে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন গতকাল রাতে নিজের বাসায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেন। দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, ঐক্যফ্রন্ট ও তাদের প্রধান শরিক বিএনপি ঘোষিত তফসিল পেছানোর জন্য সরকারের সঙ্গে দরকষাকষি করতে চায়। আনুষ্ঠানিক সংলাপ শেষ হলেও অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় তারা এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছতে চান। বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট এবং ঐক্যফ্রন্ট মনে করছে, পুনঃতফসিল করতে পারলে তাদের কথা বলার একটি জায়গা তৈরি হবে। অন্তত ভোটের দিন পরিবর্তন করতে পারলে তাদের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করা যাবে।
গত রাতে সিরিজ বৈঠকের পর ২০ দলীয় জোটের দুই সিনিয়র নেতা জানান, নির্বাচনের ব্যাপারে প্রায় সবাই ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছেন। বিএনপি’র একটি টিম চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। তারপরও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। তারা জানান, নির্বাচন কমিশন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে একক নাকি জোটবদ্ধ নির্বাচন করবেন তা ১১ই নভেম্বরের মধ্যে জানাতে একটি চিঠি দিয়েছিল। ২০ দলের বৈঠকে সে চিঠির দুইটি জবাব দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। জোটের শরিক নিবন্ধিত শরিক দলগুলো একটি চিঠিতে নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল পেছানোর দাবি জানাবে। অন্য চিঠিতে জানাবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে তারা জোটগতভাবেই অংশ নেবেন। তাদের কেউ কেউ দলীয় ও কেউ কেউ প্রধান শরিক দল বিএনপি’র প্রতীকে নির্বাচন করবেন। কে কোন প্রতীকে নির্বাচন করবেন সেটা সময় স্বল্পতার কারণে এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে যথাসময়ে সেটা জানিয়ে দেয়া হবে। দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামীকাল সোমবার সিইসির সঙ্গে একটি বৈঠক করতে পারেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। বৈঠক না হলে একটি স্মারকলিপি দেয়া হতে পারে।
এদিকে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকার প্রধানের সঙ্গে দুই দফা সংলাপে নিজেদের ৭ দফা দাবি উত্থাপন করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সেসব দাবির পক্ষে নানারকম যুক্তি-তর্ক তুলে ধরার পাশাপাশি নির্বাচনকালীন সরকারের একটি রূপরেখাও দেন ফ্রন্টের নেতারা। কিন্তু সরকারের তরফে এসব দাবি-দাওয়া পূরণের ন্যূনতম আশ্বাস মেলেনি। নিজ নিজ অবস্থানে সরকার ও বিরোধী জোট অনড় থাকায় দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। সংলাপে সুনির্দিষ্ট কোনো অর্জন না হলেও সে পথে হাঁটেনি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বড় প্লাটফর্ম জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের কথা বললেও ঘোষণা করেনি রাজপথ উত্তপ্তকারী কোনো কর্মসূচি। তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন অভিমুখে পদযাত্রা করার ঘোষণা দিয়েছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তবে তফসিল ঘোষণার দুইদিন পার হলেও সেটা কর্মসূচি আকারে ঘোষণা আসেনি। বরং দ্বিতীয় দফা সংলাপ শেষে জরুরিভিত্তিতে দল ও জোটের সিরিজ বৈঠকের আয়োজন করে বিএনপি। প্রথমদিন দলের ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সম্পাদকম-লীর সঙ্গে এবং পরদিন জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি’র নীতি-নির্ধারক ফোরাম। বৈঠকগুলোতে নির্বাচন ইস্যুতে অবস্থান ও করণীয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা ও মতামত তুলে ধরেন।
আলোচনায় নেতাদের বড় অংশটিই আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে মত দেন। লাভ-ক্ষতির বিশ্লেষণ ও বাস্তবতা দুইটি বিবেচনা করে তারা জানান, আন্দোলনের ভেতর দিয়েই নির্বাচনে যেতে হবে। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের ওপর জনমতের চাপ তৈরি করে যেটুকু দাবি আদায় করা যায় তাকে পুঁজি ও জনগণের ওপর আস্থা রেখে নির্বাচনে যাওয়ার বিকল্প নেই। দেশের মালিক জনগণ, তাদের উপর আস্থা রেখে; তাদের মত প্রকাশের সুযোগ দিতেই নির্বাচনে যেতে হবে। অন্যদিকে নেতাদের একটি অংশ খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে এবং বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার বিরোধিতা করে নিজেদের যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন। ওদিকে দ্বিতীয় দফা সংলাপের পরদিন ৮ই নভেম্বর চিকিৎসা অসম্পূর্ণ রেখেই খালেদা জিয়াকে ফেরত নেয়া হয় কারাগারে। সেখানে স্থাপিত বিশেষ আদালতে নাইকো মামলায় তাকে হাজির করা হলেও তার সঙ্গে মিনিট খানেকের মতো কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সেখানে সংলাপ ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আপডেট তুলে ধরলে দলের প্রতি আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনী প্রস্তুতি নেয়ার বার্তা দেন খালেদা জিয়া। তারপরই সার্বিক পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টে যায়। নেতাকর্মীদের মনোভাব পাল্টে আন্দোলন থেকে নির্বাচনমুখী হয়।
বিএনপি নীতিনির্ধারকরা জানান, সিরিজ বৈঠকে নেতাদের অনেকেই আন্দোলনে যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। কেউ কেউ মত দিয়েছেন আন্দোলন করে নির্বাচনে যাওয়ার। আবার কেউ কেউ নির্বাচনে যেতে চান আন্দোলনের অংশ হিসেবে। নেতারা জানান, বৈঠকে খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী হবে উল্লেখ করে নেতাদের কেউ কেউ বলেছেনÑ ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির ভোটারবিহীন একতরফার নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করে পূর্ণ মেয়াদ পার করছে সরকার। বরং ২০০৮ সালের বিএনপির অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ সরকার যতটা শক্ত অবস্থান প্রকাশ করতে পারেনি দ্বিতীয়বার সেটাই করেছে। তাদের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে জয়ের সম্ভাবনা শূন্যের কোটায়। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ মূলত তাদের বৈধতা দেয়া হবে। নেতারা বলেছেন, নিরপেক্ষ সরকার ও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আন্দোলনের বিকল্প নেই। আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করেই নির্বাচনে যেতে হবে।
খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচনে যাওয়া হবে ভুল সিদ্ধান্ত। এছাড়া যেখানে সংলাপ ব্যর্থ হয়েছে, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় জেলে ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে আসতে দেয়া হচ্ছে না- হামলা, গায়েবি মামলা, গ্রেপ্তারে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এলাকা ছাড়া; সেখানে নির্বাচনে গিয়ে সরকারের বৈধতা দেয়া সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। তারা বলেছেন, আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হলে তৃণমূল নেতাকর্মীরা প্রশ্ন তুলতে পারেনÑ ২০১৪ সালের নির্বাচন কেন বর্জন করা হয়েছিল, দীর্ঘদিন ধরে এত গুম, খুন, আহত ও কারাভোগ এবং হয়রানির শিকার হওয়া কেন? অন্যদিকে বেশির ভাগ নেতাই মনে করেন, সরকার একতরফা আচরণের মাধ্যমে বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে চাইছে। সরকারের এমন ফাঁদে পা দেয়া হবে অদূরদর্শিতা। এছাড়া গণতান্ত্রিক দল হিসেবে নির্বাচনে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। দেশের মানুষ যে এ সরকারের ওপর বিক্ষুব্ধ-অসন্তুষ্ট তার বহিঃপ্রকাশ ঘটনোর সুযোগ দিতেই বিএনপিকে নির্বাচনে যেতে হবে। নির্বাচনপন্থি নেতারা জানান, বারবার নির্বাচনের বাইরে থাকলে নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হবে। কোটি কোটি ভোটার ও আন্তর্জাতিক মহল বারবার নির্বাচন বর্জনকে ভালোভাবে নেবে না। এতে ভোটের মাঠে সংকুচিত হয়ে পড়বে বিএনপি। তৃণমূলে প্রভাব হারাবেন দলের নেতারা। নেতারা তাদের যুক্তি তুলে ধরে বলেন, নির্বাচনী বিধির মাধ্যমে আইনি জটিলতায় ফেলে বাতিল করা হতে পারে দলের নিবন্ধন।
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, লোভ এবং চাপের মুখে দলের ভাঙন ধরানোর কৌশল নিতে পারে সরকার। এমন পরিস্থিতিতে আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে গেলে ভোটের ফলাফল অনুকূলেও আসতে পারে। কারণ স্থানীয় নির্বাচনে সরকার যেভাবে ভোট কারচুপি ও পক্ষপাত করতে পেরেছে সেটা জাতীয় নির্বাচনে সম্ভব হবে না। এজন্য নির্বাচনের মাঠে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের নিতে হবে শক্ত অবস্থান। তবে নেতাদের মধ্যে যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের পক্ষে মত দিয়েছেন তারাও খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টিতে জোর দিয়েছেন। তারা বলেছেন, বর্তমান অবস্থায় আন্দোলন করতে পারলে ভালো; না হলে নির্বাচনে যেতে হবে। এখন আন্দোলন করলে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হবে, নির্যাতনের মুখে পড়তে হবে। এতে শক্তি ক্ষয় হবে। নির্বাচন করার মতো নেতাকর্মী থাকবে না। পোলিং এজেন্ট দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে। তাই নির্বাচনের ফল নিজেদের পক্ষে আনতে তাদের নেতাকর্মীরা যেন মাঠে থাকতে পারে, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মোকাবিলা করতে পারে- সে প্রস্তুতি নিতে হবে। আসল আন্দোলন তখনই হবে।
এদিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, নির্বাচন ইস্যুতে আমাদের মধ্যে নানা দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে এবং সেটাই স্বাভাবিক বিষয়। প্রতিটি দৃষ্টিভঙ্গিরই যুক্তি-পাল্টাযুক্তি আছে। এছাড়া বিএনপি এখন ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আলোচনা-সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেবে। সেক্ষেত্রে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি যা-ই হোক, শেষ পর্যন্ত দল যে সিদ্ধান্ত নেবে- সেটাই আমাদের মেনে নিতে হবে। সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আমাদের যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকবে হবে এবং ত্যাগ স্বীকার করব। তবে আমরা নির্বাচনে যাই বা না যাই সেখানেই সুযোগ পাই সেখানেই আমাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা বলব। যত দ্রুত সম্ভব তার মুক্তি চাইব। ২০ দলীয় জোটের শরিক দল এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে জোরালো মতামত উঠে আসছে সকল মহলে। কিন্তু বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে নির্বাচনে অংশগ্রহণ খুব ভালোভাবে নেবে না তৃণমূল নেতাকর্মীরা। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারাও নির্বাচনের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করছেন। এক্ষেত্রে সরকারকেও বুঝতে হবে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিকল্প নেই। তিনি বলেন, বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোটের শরিক হিসেবে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব ও জোটের নেতাদের সিদ্ধান্তই আমাদের সিদ্ধান্ত হবে।
নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতআসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের পক্ষে মতামত দিয়েছেন বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে জোটের ৩টি দল। অন্যদিকে জোটের জামায়াত ইসলামী নির্বাচনে অংশ নেয়া, জোটবদ্ধ না কি পৃথক করবে তা আজ জানানো হবে। বৈঠকের শেষ অংশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শরিক দলগুলোর উদ্দেশে বলেন, গণতান্ত্রিক পন্থায় আইনের যে পথগুলো আছে তাদেরকে সেদিকেই যেতে হবে। বৈঠক শেষে জোটের শীর্ষ নেতা কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীরবিক্রম বলেন, আমাদের আন্দোলন অব্যাহত আছে। নির্বাচনে যাবো কি যাবো না, এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। দুদিনের মধ্যে ২০ দল, মূল দল বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে। এই মুহূর্তে আমাদের প্রাধান্য হলো খালেদা জিয়ার মুক্তি। আগে তাকে মুক্ত করতে হবে, তাকে মুক্তি দিতে হবে। তাহলে নির্বাচনের পরিবেশ ফিরে আসবে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত বিশেষ করে বিএনপির নেতাকর্মীকে গত দুদিনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বেশি। রাস্তাঘাটে তাদের নির্যাতন করা হচ্ছে। এগুলো বন্ধ না করা পর্যন্ত সুষ্পষ্টভাবে আমাদের সিদ্ধান্ত জানাতে পারবো না। কর্নেল (অব.) অলি বলেন, যদি আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি, তাহলে অনেকে আমরা দলীয় প্রতীকে অংশগ্রহণ করবো, অনেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন। নির্বাচনে যাবে বলে গণমাধ্যমের খবরের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রবীণ এ নেতা বলেন, আমরা এমন কথা গণমাধ্যমে বলিনি। যদি কেউ বলে থাকেন তাহলে অনৈতিক কাজ করেছেন। তিনি বলেন, এই যে সরকার বলছে সকলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, আসলে তা কাগজেকলমে আর পত্রিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। এখন পর্যন্ত সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি হয়নি।
এটা সরকারের দায়িত্ব। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জোটের ২৩টি দলের মধ্যে কয়েকটি দল খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে ও বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিপক্ষে মত দেন। তবে বেশিরভাগ দলের মতামতই ছিল নির্বাচনের পক্ষে। জোটের শরিক দল জামায়াত সিদ্ধান্ত জানাতে সময় চেয়েছে একদিন। এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রমের সভাপতিত্বে বৈঠকে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, জাতীয় পার্টি (জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, জামায়াতের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল হালিম, বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, খেলাফত মজলিশের আমীর মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, মহাসচিব আহমেদ আবদুল কাদের, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মে. জে. (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক, এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, জাগপার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তাসমিয়া প্রধান, মুসলিম লীগের এএইচএম কামরুজ্জামান খান, পিপলস লীগের গরিবে নেওয়াজ, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী, মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস, বাংলাদেশ জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, পিপিবি’র রিটা রহমান ও মাইনরিটি জনতা পার্টির সুকৃতি কুমার মন্ডল, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, ডিএল-এর সাইফউদ্দিন মনি, এনডিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ ও লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে জাতীয় ঐক্যজোটের বৈঠকের আগে প্রথমে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন ও পরে যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান ও বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম। তবে সন্ধ্যা ৭টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের বিষয়বস্তু জানা যায়নি। বি. চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক শেষে সোজা ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে যোগ দেন কিংবদন্তির এই মুক্তিযোদ্ধা। সূত্র জানায়, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে সরকারের সঙ্গে দেনদরবারের ইস্যু এবং করণীয় নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি আসনবণ্টন নিয়েও আলোচনা হয়। তবে বৈঠক শেষে গণমাধ্যমের সামনে কেউ মুখ খুলেননি। দুপুরে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অবস্থান প্রকাশ করার আগে সকালে ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে একদফা বৈঠক করবেন ফ্রন্টের নেতারা। ওদিকে গতকাল বিকালে সুপ্রিম কোর্টের আইজীবীদের সভাকক্ষে বৈঠক করেছেন জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্ট। বৈঠকে জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্ট স্টিয়ারিং কমিটির পরিধি বাড়িয়ে ৬২ করা হয়। বৈঠক শেষে ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার প্রত্যয়ে ৭ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আইনজীবী ঐক্যফ্রন্ট সারা দেশের আইনজীবীদের নিয়ে একটি সমাবেশ করবে।
আগামী ১৬, ১৭ ও ১৮ নভেম্বরের যেকোনো দিন এ সমাবেশ হবে। বৈঠক শেষে সিদ্ধান্তটি অবহিত করতে সন্ধ্যায় ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে দেখা করেন জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্ট নেতারা।
এদিকে দীর্ঘদিন পর দলীয় নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে বিএনপি চেয়াপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কি না, তা জানতে গতকাল বিকাল থেকেই সেখানে জড়ো হয় বিএনপি ও অঙ্গদলের হাজারো নেতাকর্মী এবং আসন্ন নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।