ট্যারিফ কমিশন আইন সংশোধন করতে যাচ্ছে সরকার। আজ সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে সংশোধিত আইনটি অনুমোদনের জন্য উঠবে। আইনের সংশোধনীতে এর নাম পরিবর্তন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশোধনীটি অনুমোদন পেলে ‘বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন’ নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন’ হয়ে যাবে। সূত্রমতে, ট্যারিফ কমিশন স্থানীয় শিল্প সুরক্ষায় শুল্ক বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে সুপারিশ করে। এ ছাড়া আইনের সংশোধন হলে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ বাড়বে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্যবিষয়ক জটিলতা নিরসনে কাজ করতে পারবে সংস্থাটি। গত কয়েক বছরে পণ্য রপ্তানিতে বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের কয়েকটি পণ্যে অ্যান্টি-ডাম্পিং ও কাউন্টার ভেইলিং ডিউটিসহ বাণিজ্য বাধা আরোপ করেছে।
বাণিজ্য বাধা সমাধানের দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট কোনো সংস্থার হাতে নেই। আইন সংশোধন করে ট্যারিফ কমিশনকে এ দায়িত্ব দেয়া হবে। এর আগে গত জুনে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন (সংশোধন) আইন, ২০১৮-এর খসড়া অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে উঠানো হয়। তখন আইনটি অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ফেরত পাঠানো হয়। ওই সময় খসড়াটি আরো সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন ও পরিবর্তনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব নজিবুর রহমানকে প্রধান এবং ট্যারিফ কমিশন চেয়ারম্যান মো. জহির উদ্দিন আহমেদকে সদস্য সচিব করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সমন্বয়ে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করে দেয় মন্ত্রিসভা। কমিটি এরই মধ্যে চূড়ান্ত খসড়া প্রণয়ন করেছে। খসড়াটি অনুমোদনের জন্যই মন্ত্রিসভা বৈঠকে উঠবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা বাড়ছে। কিন্তু বর্তমান আইন অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নানা দিক বিশ্লেষণ করে সরকারকে অনেক বিষয়ে পরামর্শ দিতে পারছে না বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন। এ কারণে সংস্থাটির কার্যক্ষমতা বাড়াতে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন আইন, ১৯৯২ সংশোধন করার উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২৬ বছর আগে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন আইন প্রণয়ন করা হয়। তখন দেশে শিল্প-কারখানা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের খুব বেশি প্রসার হয়নি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্য ও শুল্কনীতির পাশাপাশি বহুপক্ষীয়, আঞ্চলিক এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি বিষয়ে সরকারকে বিভিন্ন সময় পরামর্শ দিতে হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় আইনে সংশোধনী আনা হচ্ছে। সংশোধিত আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, শুল্কনীতি পর্যালোচনা এবং শুল্কহার যৌক্তিকীকরণ, আমদানি ও রপ্তানিযোগ্য পণ্যের হারমোনাইজড সিস্টেম (এইচএস) কোড পর্যালোচনা এবং দ্বিক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বিশ্ববাণিজ্য সংস্থাসহ অন্যান্য বহুপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে পরামর্শ দেবে ট্যারিফ কমিশন। ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট ট্রেড, জিএসপি, রুলস অব অরিজিন ও অন্যান্য অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য, বৈদেশিক বাণিজ্য পর্যালোচনা ও পরিবীক্ষণ, বৈদেশিক বাণিজ্যে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব বিস্তারকারী দেশীয় ও বিদেশি নীতিমালা, রীতিনীতি এবং আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থা পর্যালোচনা করবে কমিশন। সংশোধনীতে বলা হয়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বাজারদর নিরীক্ষণ ও পর্যালোচনা করবে কমিশন। বাণিজ্য প্রতিবিধানসহ বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার আওতায় বিভিন্ন চুক্তি ও বাণিজ্য সংক্রান্ত অন্যান্য চুক্তি সম্পর্কিত বিরোধ নিষ্পত্তিতে সরকারকে সহায়তা করবে। শিল্প, পণ্য, সেবা ও বৈদেশিক বাণিজ্য সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ, ডাটাবেজ সংরক্ষণ, পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করা এবং জনস্বার্থে এসব তথ্য সরকার ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ করবে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) সম্ভাব্যতা যাচাই করবে। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের মধ্যে এফটিএ’র ফলে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের ওপর সম্ভাব্য প্রভাব মূল্যায়ন করবে ট্যারিফ কমিশন।