× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বড়দিনের ছুটিতে বিদেশিদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নিয়ে সংশয়

প্রথম পাতা

কূটনৈতিক রিপোর্টার
১২ নভেম্বর ২০১৮, সোমবার

খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব বড়দিন-এর ৪৮ ঘণ্টা আগে হবে বাংলাদেশের এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল মতে ২৩শে ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ হবে। দু’দিন পরেই ২৫শে ডিসেম্বর, বড়দিন। ওই সময়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ বিশেষ করে পশ্চিমা দুনিয়ার পর্যবেক্ষকদের বাংলাদেশে উপস্থিতি নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েথ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের প্রতিনিধিরা সরজমিন এবং বিস্তৃত পরিসরে বাংলাদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন। বিশ্বের অন্যরাও ভোট-পূর্ব এবং ভোট-উত্তর পরিস্থিতির ওপর নজর রাখেন, তবে সেটি সীমিত পরিসরে, অনিয়মিত এবং ভায়া মিডিয়া।

অবশ্য বড়দিন বলে পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি কম হবে- এমনটা মানতে নারাজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তাদের মতে, এসব ক্ষেত্রে দিন বা তারিখ মুখ্য নয়।
এটা সিদ্ধান্তের বিষয়। কোনো দেশ বা সংস্থা যদি কোনো কূটনীতিক বা কর্মকর্তাকে অ্যাসাইন করে তাহলে তারা অবশ্যই আসবেন। আসন্ন নির্বাচনে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ইইউ, কমনওয়েলথ বা যুক্তরাষ্ট্র তাদের পর্যবেক্ষক পাঠাবে কিনা? সেটি এখনো নিশ্চিত নয় জানিয়ে দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচন কমিশনের তরফেও এ নিয়ে বাড়তি প্রস্তুতির বিশেষ কোনো নির্দেশনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পায়নি।

মন্ত্রণালয় নিজেদের মতো করে প্রস্তুতি নিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, রেওয়াজ মতে কোনো দেশ বা আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আগ্রহ দেখালে বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশন এবং সেগুনবাগিচার সর্বাত্মক সহযোগিতা নিশ্চিত করা হবে। উপযুক্ত ভিসা নিয়ে তাদের ভ্রমণ নিশ্চিত করা এবং বাংলাদেশে আসার পর নিয়ম অনুযায়ী সুবিধাদি দিতে সরকার প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান তিনি। তবে রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো বিদেশি পর্যবেক্ষক ভোট-পূর্ব পরিস্থিতি বা নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য সেগুনবাগিচার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন মর্মে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কেউই কোনো তথ্য জানাতে পারেননি। অবশ্য কূটনৈতিক সূত্রে এরইমধ্যে খবর বেরিয়েছে- আসন্ন নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যবেক্ষক না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত সেপ্টেম্বরেই ইইউ’র ব্রাসেলসের হেড কোয়ার্টারের তরফে তাদের সিদ্ধান্তের বিষয়টি ঢাকাকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

কিন্তু কেন ইইউ এবারের নির্বাচনে কোনো পর্যবেক্ষক পাঠাচ্ছে না- ব্রাসেলসের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এর কোনো কারণ জানানো হয়নি। তবে ইউরোপিয়ান কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ইইউ’র পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা বিষয়ক হাইরিপ্রেজেনটেটিভ ফেডেরিকা মঘেরিনির গত ১১ই অক্টোবর ‘ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক সম্মেলনে ইইউ’র পর্যবেক্ষণ নীতি নিয়ে কথা বলেছেন। আন্তর্জাতিক ওই সম্মেলনে তিনি ‘কোনো পাতানো নির্বাচনকে বৈধতা  দেয়া তাদের কাজ নয়’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি এ-ও বলেন, আমরা যখন কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনে নিয়োজিত হই, তখন আমাদের বিবেচ্য থাকে মানবাধিকার নিশ্চিত করা, গণতন্ত্রকে সহায়তা দেয়া। স্থানীয়, জাতীয় বা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো পক্ষ নেয়া ইইউ’র কাজ নয় জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা একটিমাত্র লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করি তা হলো- স্থানীয় জনগণ, নাগরিকেরা যাতে সত্যিকারভাবে তাদের মতপ্রকাশ করতে পারেন এবং তাদের দেশের ভবিষ্যৎ তাদের নিজেদের হাতে থাকে। বক্তৃতায় ফেডেরিকা মঘেরিনি স্পষ্ট করেই বলেন, ‘কোনো অপ্রিয় সত্যকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য আমরা পর্যবেক্ষক দল পাঠাই না।

আমাদের শরিকেরা যদি গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় আমাদের সাহায্য চায়, আমরা তাদের সাহায্য করতে প্রস্তুত। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ইইউ’র ওই জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি বলেন, ‘নির্বাচন পর্যবেক্ষণ দল পাঠানোর জন্য প্রায়ই আমাদের কাছে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরা হয়। সে জন্যই এতটা খোলামেলাভাবে বলছি যে, কেন আমরা পর্যবেক্ষক পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেই, আর কেন নেই না।’ মঘেরিনির বক্তব্যের মধ্যে ইইউ’র নীতির বৈশ্বিক পর্যবেক্ষণ বিষয়টি রয়েছে উল্লেখ করে  ঢাকার এক কূটনীতিক বলেন, সব দেশের জন্যই ইইউ’র এ অভিন্ন নীতি। ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডেলিগেশনের কার্যালয় রয়েছে। তারা নিয়মিতভাবে বাংলাদেশ পরিস্থিতির ওপর রিপোর্ট পাঠান। বিশেষ করে রাজনীতি এবং নির্বাচন নিয়ে। বন্ধু ও উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে এ নিয়ে তারা বিভিন্ন সময় মতামতও দেন।

নির্বাচন কমিশন তথা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালীকরণ, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এবং ছবিযুক্ত পূর্ণাঙ্গ ভোটার তালিকা প্রণয়ন তথা বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নে ইইউর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং সহায়তা রয়েছে। রাজনৈতিক পরিবেশের উন্নয়ন বিশেষ করে দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ফেরানো এবং  অহিংস পরিবেশে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইইউসহ বিদেশি বন্ধু-উন্নয়ন সহযোগীরা সরকার ও বিরোধীদের উৎসাহ যুগিয়ে যাচ্ছে। তাদের উৎসাহেই সরকারের সঙ্গে বিরোধীদের সংলাপ হয়েছিল। কিন্তু ওই সংলাপে ফল প্রকাশের আগেই তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে। এ অবস্থায় বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অবাধে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ নিশ্চিত করতে বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে সরকারের কাছে জোর দাবি জানানো হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে ২৮টি দেশের জোট ইইউ’র পর্যবেক্ষক না পাঠানোর সিদ্ধান্তের কারণে বিরোধীদের এই দাবির আর  কোনো প্রাসঙ্গিকতা আছে কি-না? কূটনীতিকরাও মানছেন ইইউ তথা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকের উপস্থিতি নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার সঙ্গে যুক্ত। পর্যবেক্ষকের উপস্থিতি কম হলে বা পশ্চিমা দুনিয়া তাদের প্রতিনিধি পাঠানো থেকে বিরত থাকলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে কম্বোডিয়ায় বিরোধী দলকে বেআইনি ঘোষণা করে যে বিতর্কিত নির্বাচন আয়োজন করা হয়, তা অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ না হওয়ায় ইইউসহ নিয়মিত পর্যবেক্ষণকারীরা পর্যবেক্ষণ থেকে বিরত থাকেন। নমপেনের জন্য ইউরোপে যে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে তা-ও এখন হুমকির মুখে পড়েছে। উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে কেবল ইইউ‘র প্রায় ৮০০ সদস্যের নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল বাংলাদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছিল। তবে ২০১৪ সালে বাংলাদেশে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ না হওয়ার কারণেই ইউ, কমনওয়েলথ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা কোনো পর্যবেক্ষক পাঠায়নি। রেওয়াজ মতে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইইউ ভোটের দিন তো বটেই ভোটের আগে ও পরে বেশ কিছুদিন দেশগুলোতে অবস্থান করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে। পাশাপাশি, তারা সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য আলাদা করে ছোট আকারের বিশেষজ্ঞ দলও পাঠায়। তারা কমিশনে এ নিয়ে রিপোর্টও পেশ করে। বাংলাদেশে ইইউ পর্যবেক্ষক না পাঠালেও এবার দুই সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠাবে বলে জানা গেছে।
সর্বশেষ: নির্বাচন পরিস্থিতির ওপর ঘনিষ্টভাবে নজর রাখতে ঢাকায় প্রায় সব দূতাবাসের রাজনৈতিক শাখার কূটনীতিক-কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর