কোরআনে হাফেজ মহিউদ্দিন হাসান (৩১)। চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গুজরা ইউনিয়নের নোয়াপাড়া এলাকার মোহাম্মদ ইলিয়াছের ছেলে সে। দীর্ঘদিন সৌদি আরবে ছিলেন। করেছেন মসজিদে ইমামতিও। আয় করেছেন লাখ লাখ টাকা। আর এই কোরআনে হাফেজ লাখপতি মহিউদ্দিন হাসান এখন দুর্ধর্ষ চোর। চট্টগ্রাম মহানগরীর তিনটি ব্যাংক চুরির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে তার খোঁজ পায় পুলিশ। রোববার সন্ধ্যায় নগরীর লালখানবাজার ইসপাহানি মোড় থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় চুরির বিভিন্ন সরঞ্জাম। জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে দুর্ধর্ষ চোর হয়ে ওঠার গল্প। এমনই জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম। রোববার রাতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আল ইমরান খানের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ব্যাংক চুরির নানান কায়দা বর্ণনা করেন মহিউদ্দিন। মহিউদ্দিন জানান, তিনি একজন কোরআনে হাফেজ, ক্বারি, ফাইন্যান্স অ্যাকাউন্টিং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও ইমাম। দীর্ঘদিন সৌদি আরবে ছিলেন। সেখানে মসজিদে ইমামতির চাকরি করেন এবং অবসর সময়ে তিনি আন্তর্জাতিক ফাইন্যান্স বিষয়ে প্রশিক্ষণ লাভ করেন। এরপর থেকে তিনি অধিক অর্থ উপার্জনের জন্য বিভিন্ন দেশের শেয়ার বাজার ও মুদ্রা লেনদেনের ওপর সার্বক্ষণিক নজরদারি করার চেষ্টা করেন। সৌদি আরবে থাকাকালে অধিক অর্থ আয়ের লোভ থেকে সে তার এলাকার পরিচিতি ব্যক্তির কাছে একটি হোটেল ব্যবসায় বড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করে। বিনিয়োগ করার পর পরিচিত ব্যক্তি তার অর্থ আত্মসাৎ করে। দুবাই থেকে দেশে এসে হোটেল ব্যবসার মাধ্যমে আরো বেশি টাকা আয়ের লোভ থেকে বন্ধুর প্রতারণায় সে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। হয়ে যায় বেকার। দীর্ঘদিন চেষ্টা করে বিনিয়োগকৃত টাকা উদ্ধার করতে না পেরে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ হতে কিছু অর্থ ধার কর্জ করে ঢাকা দক্ষিণখান আশরাফ সেতু কমপ্লেক্সে ডেনিম কাপড়ের দোকান নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে। কিন্তু সেখানেও কতিপয় ব্যবসায়ী তার দোকান দখল করে নেয়। ঢাকায়ও প্রতারিত হবার পর সে চট্টগ্রামে এসে শুরু করে ইয়াবা ব্যবসা। ইয়াবা ব্যবসা করতে গিয়ে পুলিশের হাতে প্রথম দফা গ্রেপ্তার হয় মহিউদ্দিন। কারাগারে যাওয়ার পর চারমাসের মাথায় জামিন মেলে। জামিনে বের হয়ে ঢাকার উত্তরায় ‘চাল-ডাল’ নামক একটি অনলাইনে কেনা-বেচার প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেয়। এ প্রতিষ্ঠানে কয়েকমাস চাকরির পর ছয়লাখ ৬০ হাজার টাকা চুরি করে পালিয়ে আসে।
চট্টগ্রাম নগরীর মোগলটুলি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে সে এবার ব্যাংক চুরির পরিকল্পনা করে। নগরীর আগ্রাবাদ ও জিইসি শাখায় সিটি ব্যাংকে দিনের বেলায় গ্রাহক সেজে বাথরুমে প্রবেশ করে সিলিংয়ের ভেতর লুকিয়ে থাকে। ব্যাংকের কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর সিলিংয়ের ওপর হতে নিচে নেমে সব সিসিটিভি এবং অ্যালার্ম সিস্টেম বন্ধ করে চুরির চেষ্টা করে। তিনটি ব্যাংকে এমন চেষ্টা করলেও সে একবারও সফল হয়নি। অবশেষে সে আটকা পড়ে পুলিশের জালে।