× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নি র্বা চ নী হা ল চা ল(চট্টগ্রাম ১১) /ঘরের আগুনে পুড়ছে আওয়ামী লীগ, বিকল্প নেই খসরুর

শেষের পাতা

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে
১৫ নভেম্বর ২০১৮, বৃহস্পতিবার

২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি এমএ লতিফ বন্দর-পতেঙ্গা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-১১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে চমক সৃষ্টি করেন। শুধু তাই নয়, চারবারের এমপি ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে পরাজিত করে আলোচিতও হন। তবে এবার মনোনয়ন পেতে কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে হবে তাকে। কারণ আগামী নির্বাচনে এমএ লতিফ যাতে মনোনয়ন না পান, সে চেষ্টা চালাচ্ছেন তার প্রতিপক্ষ। এ আসনে এবার আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চান চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির দুই সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী ও নির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ ইলিয়াস। ইতিমধ্যে তারা দলীয় মনোনয়ন ফরমও সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন।

অন্যদিকে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হচ্ছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ২০০৮ সালে আসন পুনর্বিন্যাসের আগে এখান থেকে টানা চারবার এমপি নির্বাচিত হন তিনি।
এবারও এ আসনে তার কোনো বিকল্প নেই বিএনপিতে।
সোমবার সকালে উচ্চ আদালতের জামিনে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান আমীর খসরু। এর আগে তথ্য প্রযুক্তি আইনে দায়ের করা মামলায় আদালত থেকে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান বলেন, বন্দর-পতেঙ্গা আসনে বিএনপিতে আমীর খসরুর বিকল্প কোনো প্রার্থী নেই। ১৯৯১ সাল থেকে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ওই আসনে চারবার জিতেছেন।
এবারও এ আসন থেকে আমীর খসরু প্রার্থী হবেন এটা নিশ্চিত। এ লক্ষ্যে কারাগারে যাওয়ার আগে আমীর খসরু তৃণমূল পর্যায়ে গণসংযোগ করেছেন। এ আসনের মানুষের সঙ্গে আমীর খসরুর আত্মার সম্পর্ক। খসরুর কারণে এ আসন বিএনপির আসন হিসেবে পরিচিতি পায়।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার উন্নয়নের কথা বললেও পতেঙ্গা-বন্দরে আসল উন্নয়ন হয়েছে বিএনপি আমলে। এ আসনের আওতাধীন কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ, বিমানবন্দরের উন্নয়ন, দুটি টেকনিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে পোর্টকানেকটিং রোড নির্মাণ, পতেঙ্গা বেড়িবাঁধসহ বড় বড় সব প্রকল্পই বিএনপি সরকার করেছে। আওয়ামী লীগ কর্ণফুলী টানেল ও মেরিনড্রাইভসহ সব প্রকল্প নিয়ে বড় বড় কথা বলছে, এর সবই বিএনপির আমলে নেয়া। সরকারের জুলুম নির্যাতনে দল স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে না পারলেও এ আসনে বিএনপির অবস্থান সব সময়ই ভালো। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপি আবারো এ আসনে বিজয়ী হবে।

স্থানীয়দের মতে, চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনটি শুধু চট্টগ্রাম নয়, পুরো বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই এলাকাকে বলা হয় দেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড। বন্দর, রপ্তানিকরণ অঞ্চল, কাস্টম হাউস, বিমানবন্দর, তেল শোধনাগারের মতো এক ডজনেরও বেশি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে এই এলাকায়।
২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনের আসন পুনর্বিন্যাসে চট্টগ্রাম নগরীতে যে চারটি আসন বাড়ানো হয় এর মধ্যে চট্টগ্রাম-১১ একটি। এ আসনটি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২৭ থেকে ৩০ এবং ৩৬ থেকে ৪১ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এ আসন থেকে আওয়ামী লীগ জিতেছে এমন নজির কম।

১৯৯১ সালে তৎকালীন নির্বাচনী এলাকা-৮ (ডবলমুরিং, পাহাড়তলী, বন্দর) থেকে খালেদা জিয়া সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে উপনির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনেও খসরু সংসদ সদস্য হিসেবে এই এলাকা থেকে নির্বাচিত হন।

২০০৮ সালে আসন পুনর্বিন্যাসের পর এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে চমক সৃষ্টি করেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও ব্যবসায়ী এমএ লতিফ। প্রথম নির্বাচনে অংশ নিয়েই বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী আমীর খসরুকে পরাজিত করেন।
২০১৪ সালে বিএনপি বিহীন নির্বাচনে ফের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এমএ লতিফ। মূলত দ্বিতীয় মেয়াদেই বিতর্কে জড়ান তিনি। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চট্টগ্রাম সফরের সময় লতিফের উদ্যোগে লাগানো পোস্টার ও প্ল্যাকার্ডে বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির অভিযোগ ওঠে। তখন রাজপথে আন্দোলন গড়ে তোলেন প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও তার অনুসারীরা। লালদীঘি ময়দানে লতিফের বিরুদ্ধে সমাবেশও করেন। তবে মহিউদ্দিন চৌধুরী মারা যাওয়ার পর গত বছরের ১৫ই ডিসেম্বর তার পরিবার ও অনুসারীদের সঙ্গে দূরত্ব কমানোর উদ্যোগ নেন লতিফ।

তার সমর্থকদের দাবি, দুই মেয়াদে এমপি থাকায় সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগেও বেশকিছু কাজ করেন এমপি লতিফ। হাজার হাজার গরিব-দুস্থের মাঝে কম দামে চাল-ডাল বিক্রি করে প্রশংসা কুড়ান। দুস্থদের মাঝে ঢেউটিন বিতরণ করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য এমএ লতিফ।
এমএ লতিফ বলেন, ২০০৮ সালে আমি নতুন ছিলাম। বঙ্গবন্ধুকন্যা দুই দফায় আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। সেই সময় তৃণমূল আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধভাবে আমাকে জিতিয়েছে। তারা নৌকায় ভোট দেন। তাদের সমর্থন নিয়েই রাজনীতি করি। আমার কাজের বিচার করবে এলাকাবাসী। সবকিছু বাছ-বিচার করে দলীয় মনোনয়নপত্রও সংগ্রহ করেছি। দল যদি আমাকে আবারো মনোনয়ন দেয় তবে নির্বাচন করবো।

এদিকে এমএ লতিফের মনোনয়নের ক্ষেত্রে বড় বাধা হিসেবে দেখা হচ্ছে নগর আওয়ামী লীগ কমিটির সিনিয়ির সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনকে। জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ লাঘবে মহেশখালের বাঁধ অপসারণে ব্যতিক্রমধর্মী আন্দোলন গড়ে তুলে ইতিমধ্যে এলাকাবাসীর কাছে আলোচিত হন তিনি। ইপিজেড, বন্দরসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনেও রয়েছে তার আলাদা নেটওয়ার্ক। এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ করছেন।
খোরশেদ আলম সুজন বলেন, বর্তমান এমপি এমএ লতিফ বিভিন্ন কারণে বিতর্কিত ও জনবিচ্ছিন্ন। ২০০৮ সালে আমাকে মনোনয়ন দিয়ে প্রত্যাহারের পেছনে তার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের ভূমিকা ছিল। আমার বিশ্বাস, এমন বিতর্কিত ব্যক্তির ওপর আর আস্থা রাখবে না দল। গত দু’বার মনোনয়নবঞ্চিত হলেও আশা করছি এবার আমাকে নিরাশ করবে না দল। এই আশায় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছি।
আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু বলেন, এমপি লতিফ ছাড়া দলের জন্য অবদান রেখেছেন এমন কাউকে মনোনয়ন দেয়া উচিত। তৃণমূল নেতাকর্মীরাও সেটা চায়। সেক্ষেত্রে আমার অবস্থান ও গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনা করে দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হলে আসনটি নেত্রীকে উপহার দিতে পারবো।

মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, আমি বন্দর এলাকার সন্তান। তৃণমূল থেকেই রাজনীতি করে আসছি। ২০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে আমি সব সময় এলাকাবাসী ও দলের পাশে ছিলাম। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও অগ্রযাত্রার চিত্র এলাকাবাসীর কাছে তুলে ধরেছি। এলাকায় সাধারণ মানুষ ও ভোটারদের কাছে আমার জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। নেত্রী যদি আমাকে মনোনয়ন দেন তাহলে আমার বিশ্বাস, সবাইকে নিয়ে কাজ করে আসনটি দল ও নেত্রীকে উপহার দিতে পারবো।

এদিকে জোটগতভাবে নির্বাচন হলে এ আসন থেকে জাতীয় পার্টির নেতা মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিমও প্রার্থী হতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর