× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

যৌন আসক্তির অস্তিত্ব কি সত্যিই আছে?

বিশ্বজমিন

সঙ্গীতা মিস্কা
(৫ বছর আগে) নভেম্বর ১৫, ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:১৪ পূর্বাহ্ন

যুক্তরাজ্যে যৌন আসক্তির জন্য যারা চিকিৎসা নিয়েছেন তাদের বেশিরভাগই পুরুষ। এর একটি কারণ হতে পারে এই যে, নারীরা বিষয়টি নিয়ে বেশি লজ্জায় ভোগেন এবং সমস্যাটি স্বীকার করতে বেশি অস্বস্তিতে পড়েন। ব্যাখ্যা যা-ই হোক না কেন, অন্য দশজনের সঙ্গে পলের সমস্যা অনেকখানি মিলে যায়।
তিনি একজন পুরুষ। কিন্তু নীলার মতো শুধু পর্নো দেখে নয় বরং একের পর এক শারীরিক সম্পর্ক করতে করতেই এক ধরণের আসক্তি জন্মায় তার মধ্যে।
তার এখন বয়স পঞ্চাশের কোটায়। তিনি জানান, তার আসক্তি শুরু হয় ৩০ বছর আগে, যখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন। বান্ধবীর সঙ্গে মধুর সম্পর্ক ছিল তার। কিন্তু একদিন তার মনে হলো, এটাই যথেষ্ট নয়।
পলের ভাষ্য, ‘আমি তাকে ভালবাসতাম। সত্যিই বাসতাম। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে আমি পতিতাসঙ্গে জড়িয়ে পড়ি। আমি উত্তেজনাকর শারীরিক সম্পর্কের জন্য পাগলপ্রায় হয়ে পড়ি। কিন্তু আমার মনে হতো যে, এটা আমার করা উচিত নয়। আমি কখনই তার (বান্ধবী) সঙ্গে প্রতারণা করার মানসিকতায় ছিলাম না, কিন্তু এই বিষয়টি ভিন্ন মনে হতো।’
কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পলের ব্যবহার পুরোপুরি পাল্টে গেল।
তার ভাষ্য, ‘আমার তখন একই সময়ে ছয় বান্ধবী ছিল। আবার প্রতি সপ্তাহে আমি ২-৩ জন যৌনকর্মীর কাছে যেতাম। এটা যেন ক্ষুধা লাগলে পিজ্জা অর্ডার করার মতো। আমার ক্ষুধা লাগলো, অর্ডার করলাম। খেলাম, এরপর ভুলে গেলাম।’
পলের মনে হতে লাগলো, নিশ্চয়ই কোথাও গড়বড় হচ্ছে। তখন সবে তার মাথায় এসেছে যে, এ বিষয়টি নিয়ে কারও সঙ্গে আলোচনা করা দরকার। প্রয়োজনে সাহায্য নেওয়া দরকার। আর তখনই তিনি লন্ডনে নিজের প্রথম চাকরি বাগিয়ে নেন। সেখানে নিজেকে তিনি এমন পরিবেশে খুঁজে পেলেন যেখানে এ ধরণের আচরণকে বরং উৎসাহ দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, ‘জীবনটা অবিশ্বাস্য ছিল। কনকর্ডে চড়ে বিশ্বজুড়ে ঘুরে বেড়ানো। প্রচুর টাকা কামানো। লন্ডনের নাচের ক্লাব আর বারে ঘুরে বেড়ানো। সবই ছিল। এছাড়াও নিজের সহকর্মীদের সঙ্গেও যৌন সম্পর্কে জড়ানোর উত্তেজনাকর অভিজ্ঞতা তো ছিলই।’
পল আরও বলেন, ‘এই পর্যায়ে এসে আমার মনে হলো, আমার বোধ হয় কোনো সমস্যা নেই। আমি হয়তো সাধারণ মানুষদের মতোই।’
কিন্তু এরপরও তার মাথায় এক ধরণের সংশয় রয়ে গেল। রাতে কোনো সহকর্মীর সঙ্গে থেকে আবার স্ট্রিপিং ক্লাব-বারে যাওয়া হতো। প্রতি রাতে খরচ হয়ে যেত ১ হাজার পাউন্ড। কেউ হয়তো মঙ্গলবারে যেত, কেউ আবার বৃহস্পতিবার। কিন্তু পল ছিলেন সহকর্মীদের মধ্যে একমাত্র ব্যক্তি যিনি ফের শনিবারেও যেতেন।
নীলার মতো তিনিও ক্রমেই অধিকতর উত্তেজনার পেছনে ছুটতে লাগলেন। আর তাড়না এত বেশি কাজ করতো যে, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া সত্ত্বেও তিনি ১০ বছর পুরুষদের সঙ্গেও অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি নারী থেকে পুরোপুরি পুরুষদের প্রতি ঝুঁকে গেলাম। আমার সব ধরণের শারীরিক সম্পর্ক হতে লাগলো পুরুষদের সঙ্গে। আমি সৎভাবে বলতে পারি, আমার মধ্যে সমকামিতার লেশমাত্র ছিল না। শুধু বেশি উত্তেজনার জন্য আমি এত নীচে নামলাম। অথচ, এই সময়টাতে আমার ভাগ্যে অনেক অনেক ভালো বান্ধবী জুটেছে। কিন্তু আমি তাদেরকে পরিত্যাগ করি।’
নীলার মতো পলও বেশ পীড়নকর পর্যায়ে চলে গিয়েছিলেন। শারীরিক সম্পর্ক না করতে পারলে, তিনি পাগলপ্রায় হয়ে যেতেন। অর্গাজমে পৌঁছানো তার যৌনক্রিয়ার উদ্দেশ্য ছিল না। বরং, পারিপার্শ্বিক অনেক কিছুর ওপর বিমোহিত থাকতেন তিনি। নীলার মতো তিনিও এই যৌন অভিজ্ঞতা কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতেন।
পল প্রথমবার পর্নো দেখেছেন ১২ বছর বয়সে। কিন্তু তখনও এতে আসক্ত হন নি। তিনি বলেন, ‘আমি কিছু ম্যাগাজিন পাই ছোটবেলায়। বাবা-মা বাইরে থাকলে সেগুলো দেখেছি। কিন্তু তখন তেমন কোনো যৌন অনুভূতি আমি বোধ করি নি।’
কিন্তু উচ্চগতির ইন্টারনেট যখন এল তখন সব পাল্টে গেল। ওই সময়ে তিনি যৌনকর্মী ছেড়ে অনলাইনে পর্নো দেখা শুরু করলেন। দেখতেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
লরেল সেন্টার থেকে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা পেয়েছেন পল। তার ধারণা, তিনি সুস্থ হওয়ার পথে। বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি যৌনকর্মীর কাছে যান নি। অনেক মাস হয়ে গেল পর্নোও দেখেন নি। তার লক্ষ্য হলো একজন নারীর সঙ্গে ঘর বাঁধা।
তার ভাষ্য, ‘এটা এক একাকী রোগ। আপনি এক পর্যায়ে এসে ভাববেন যে দুনিয়াতে আপনার সময় খুব সীমিত। আমি কখনই এমন কারও সঙ্গে উপভোগ্য যৌন সম্পর্কে জড়াতে পারি নি যাদেরকে আমি ভালোবাসি। গত ৩০ বছরে এটাই আমার জীবনে আসে নি।’
এই বছরের জুনে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে যৌন আসক্তিকে রোগের আন্তর্জাতিক শ্রেণীবিভাগে যুক্ত করেছে। সংস্থাটি এর নাম দিয়েছে ‘কমপালসিভ সেক্সুয়াল বিহেভিয়ার ডিজঅর্ডার।’
আমি যেসব থেরাপিস্টের সঙ্গে কথা বলেছি এই সংজ্ঞায়নও যথেষ্ট নয়। কারণ, একে ঠিক আসক্তি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয় নি। কিন্তু এর দরুন যুক্তরাজ্য সরকার হয়তো জাতীয় স্বাস্থ্য সেবার অধীনে এই রোগের জন্য কাউন্সেলিং সেবা প্রদানে উৎসাহিত হতে পারে।
গত কয়েক সপ্তাহে আমি এমন অনেক মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি যাদের ধারণা তারা যৌন আসক্ত। এই সমস্যাকে আসক্তি হিসেবে আমরা বলি, আর না বলি, এটা স্পষ্ট যে এই মানুষগুলোর সহায়তা প্রয়োজন। তারা এমন সমস্যায় ভুগছেন যার দরুন তাদের জীবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এই সমস্যায় ভুগছেন এমন যাদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি, তাদের প্রত্যেকেই অনুমতিসাপেক্ষ যৌনক্রিয়া ও ধর্ষণের পার্থক্য বুঝতেন। তারা যখন সমস্যার চূড়ায় ছিলেন, তখনও তারা এই পার্থক্য বুঝেছেন। এদের কেউই ধর্ষণ করেন নি। যৌন আসক্তরা মূলত নিজের ও সঙ্গীর ক্ষতি করেন। কিন্তু যৌন শিকারিরা ভিকটিমদের নির্যাতন করেন ও একে আবার আড়াল করার চেষ্টা করেন।
(গতকালের পর্বের পর। বিবিসি থেকে অনূদিত।)
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর