ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ১৭ সৌদি নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। বৃহস্পতিবার মার্কিন অর্থমন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে শাস্তিমূলক এ পদক্ষেপের ঘোষণা দেয়া হয়। সৌদি যুবরাজ বিন সালমানের সাবেক উপদেষ্টা সউদ আল কাহতানিও এ নিষেধাজ্ঞার শিকার হয়েছেন। এক বিবৃতিতে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মনুচিন বলেন, জামাল খাসোগির ন্যক্কারজনক হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত সৌদি কর্মকর্তাদের ওপর আমরা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছি। তারা একজন সাংবাদিককে টার্গেট করে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস ও কাজ করতেন। তাদের অবশ্যই কৃতকর্মের ফল ভোগ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ম অনুযায়ী, নিষেধাজ্ঞার শিকার ব্যক্তিরা যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করতে পারবেন না। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের মালিকানাধীন সব সম্পত্তি জব্দ করা হবে। আর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, জামাল খাসোগি হত্যায় সম্পৃক্তদের বিচারের মুখোমুখি করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে পররাষ্ট্র দপ্তর।
এর আগে, সৌদি আরবের পাবলিক প্রসিকিউটরের দপ্তরের তরফে বলা হয়, খাসোগি হত্যায় মোট ১১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচজনের সর্বোচ্চ শাস্তি অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড চাইবে প্রসিকিউটর। এরা খাসোগি হত্যার নির্দেশনা ও বাস্তবায়নের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। প্রসিকিউটর খাসোগি হত্যাকাণ্ডের ঘটনাবলীর বিস্তারিত বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, বাক-বিতণ্ডা ও ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে খাসোগিকে হত্যা করা হয়। খাসোগিকে জোর করে আটকে রাখা হয়। পরে তার শরীরে ইনজেকশনের মাধ্যমে চেতনানাশক ওষুধ দেয়া হয়। কিন্তু এর মাত্রা বেশি হয়ে যাওয়ায় খাসোগি মৃত্যুবরণ করেন। এরপর মৃতদেহ টুকরা টুকরা করে কনস্যুলেট থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। পাঁচজন এই কাজ সম্পন্ন করেন। পরে হত্যা মিশনের প্রধান একটি মিথ্যা রিপোর্ট তৈরি করেন। যাতে বলা হয়, খাসোগি কিছুক্ষণ পরই কনস্যুলেট ছেড়ে গেছেন। আলোচিত এই হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২১ জনকে আটক করেছে সৌদি আরব। এ ছাড়া প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে ছয়জন কর্মকর্তাকে সরিয়ে দিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২রা অক্টোবর ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেট থেকে নিখোঁজ হন সৌদি রাজ পরিবারের কট্টর সমালোচক সাংবাদিক জামাল খাসোগি। এদিন বিয়ের জন্য তিনি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করার জন্য কনস্যুলেটে গিয়েছিলেন। এ সময় তিনি নিজের বাগদত্তাকে বাইরে অপেক্ষায় রেখে যান। কিন্তু খাসোগি আর ওই কনস্যুলেট থেকে বের হননি। পরে তুরস্ক দাবি করে, খাসোগিকে কনস্যুলেটের ভেতরে হত্যা করা হয়েছে। এজন্য দেশটি সরাসরি সৌদি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করে। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে সৌদি আরব তুরস্কের অভিযোগ স্বীকার করে নেয়।