কম্বোডিয়ায় খেমাররুজ নেতা পল পটস শাসনামলের দুই নেতাকে গণহত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। তারা হলেন নুয়ন সিয়া (৯২) ও প্রাদেশিক প্রধান খেও স্যা¤পান (৮৭)। এ দুই নেতা চ্যাম মুসলিম ও জাতিগত ভিয়েতনামি সম্প্রদায়কে নির্মূলের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন তারা। এই প্রথমবারের মতো গণহত্যার অভিযোগে খেমাররুজের দুই নেতাকে জাতিসংঘ সমর্থিত ট্রাইবুন্যালে বিচারের আওতায় আনলো। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকাকালীন এই চার বছরে বিশ লাখের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়।
বিবিসির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক প্রতিবেদক জোনাথন হেড বলেন, আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে গণহত্যাকে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে তার আওয়তায় পড়ে না কম্বোডিয়ায় গণহত্যা। অর্থাৎ জনাথন হেড বলতে চেয়েছেন, কম্বোডিয়ায় যে গণহত্যা করা হয়েছে তা ওই সংজ্ঞার মাত্রাকে অতিক্রম করেছে। তাই খেমাররুজ ওই দুই নেতাকে গণহত্যা নয়, মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থার আওতায় এক দশক ব্যাপি চলার পর এটাই এ ধরনের সর্বশেষ রায়।
অভিযুক্ত এ দুই নেতা বেশ কয়েকটি অভিযোগে অভিযুক্ত। যার মধ্যে মানবতা বিরোধী হত্যাকান্ড, উৎখাত, জোরপূর্বক দাসত্ববরণ এবং নির্যাতনের মতো গর্হিত অপরাধ রয়েছে। তারা মানবতাবিরোধী অপরাধে একটি আলাদালতে শুনানিতে অভিযুক্ত হয়ে ইতিমধ্যে যাবজ্জীবন কারাদ- ভোগ করছেন। পরে আরেকটি অভিযোগে তাদেরকে আবারো যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়েছে। তিনজনের মধ্য থেকে দুইজনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে ট্রাইবুন্যাল। এদিকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও বিচারকাজে ধীর গতির কারণে ট্রাইবুন্যালটি সমালোচনার শিকার হয়েছে।
বিচারক নীল নন আদালতভর্তি মানুষের সামনে দীর্ঘ রায় পড়ে শোনান। এ সময় নম পেনের আদালতে খেমাররুজের দ্বারা নির্যাতিত জনগণ উপস্থিত ছিলেন। বিচারক তখন খেমাররুজের শাসনামলের সন্ত্রাস বর্ণনা করেন। এসময় তিনি জোরপূর্বক বিয়ে করা, এমনকি জোরপূর্বক বাচ্চা গ্রহণ করার সময়কার কথা বলেন। তবে বিশেষ মুহূর্ত আসে তখন, যখন বিচারক চ্যাম মুসলিম ও জাতিগত ভিয়েতনামীদের নিশ্চিহ্ন করে ফেলার অভিযোগে নুয়ন সিয়াকে এবং খেও স্যামপেনকে দোষী সাব্যস্ত করেন। গবেষকরা বলছেন খেমাররুজের শাসনামলে চ্যাম মুসলিমদের সংখ্যা ছিল তিন লাখ। তাদের শতকরা ৩৬ ভাগকে হত্যা করে খেমাররুজরা। এ সময়ে ভিয়েতনামের বেশিরভাগ মানুষকে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়। তবে তাদের মধ্য থেকে ২০ হাজার মানুষ রয়ে যান কম্বোডিয়ায়। পরে তাদেরকেও হত্যা করে খেমাররুজরা।