× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

গাজীপুরের মন্ত্রী-এমপিরা মনোনয়ন ঝুঁকিতে

এক্সক্লুসিভ

ইকবাল আহমদ সরকার, গাজীপুর থেকে
১৮ নভেম্বর ২০১৮, রবিবার

গাজীপুর জেলার পাঁচটি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের মনোনয়ন ঝুঁকিতে রয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি। মনোনয়ন দৌড়ে মোজাম্মেল হকের চেয়ে আরো বেশি ঝুঁকিতে ছিলেন প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এমপি। তবে এখন তার ঝুঁকি কিছুটা কমেছে বলেই মনে করা হচ্ছে। অসুস্থতার কারণে বয়োবৃদ্ধ শ্রীপুরের অ্যাডভোকেট রহমত আলী এমপি এবার তার ছেলেকে নামিয়েছেন নির্বাচনী মাঠে। রহমত আলী এমপির পরিবারও রয়েছেন দলীয় মনোনয়ন পাওয়া-না পাওয়ার ঝুঁকিতে। কাপাসিয়ার সিমিন হোসেন রিমি এমপিও রয়েছেন কৃষকলীগ নেতাদের চ্যালেঞ্জের মুখে। সদর আসনের এমপি জাহিদ আহসান রাসেলের আসনেও মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থী আছেন গাজীপুর আওয়ামী লীগের অত্যন্ত শক্তিশালী একজন নেতা। তবে রাসেল শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের সন্তান হিসেবে, জেলার অন্য চারজন এমপির চেয়ে কম ঝুঁকিতে রয়েছেন।
জেলার পাঁচটি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেন- মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের আসনে। আবার এই আসনের তিনজন মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থী যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলন করে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কিংবা বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যানকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানিয়েছেন দলের প্রতি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের ৩ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থী ঐক্যবদ্ধভাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। বৃহস্পতিবার কালিয়াকৈর উপজেলা মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মনোনয়ন প্রত্যাশী কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কামালউদ্দিন সিকদার, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল করিম রাসেল ও ডা. আযম খান বক্তব্য রাখেন। তারা বলেন, বিগত ৬টি সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-১ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। কিন্তু কালিয়াকৈর উপজেলার কোনো আওয়ামী লীগ নেতা, কিংবা উপজেলার কোনো বাসিন্দা কেউ মনোনয়ন পায়নি। গত দুটি নির্বাচনে যিনি এই এলাকার এমপি হয়েছেন আ ক ম মোজাম্মেল হক তিনি, এই নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা নন। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় দলের স্বার্থেই তারা ২০০৮ সালের নির্বাচনে মোজাম্মেল হককে বিজয়ী করেছেন। এবারের নির্বাচনে আর তারা বাইরের এলাকার বাসিন্দাকে ছাড় দিতে রাজি নন। এবারের সংসদ নির্বাচনে এই আসনে কালিয়াকৈর উপজেলার নেতৃবৃন্দদের মধ্য থেকে মনোনয়ন দেয়ার জন্য দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি দাবি জানান। এই উপজেলার যেকোনো একজনকে মনোনয়ন দিলে জয়লাভ অনেক সহজ বলেও তারা মনে করেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে মোট ১১ জন দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন সংগ্রহকারীরা হলেন- মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন সিকদার, উপজেলা  চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রাসেল, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল, অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম বাবুল, নূরে আলম সিদ্দিকী, হালিম সরকার, আফজাল হোসেন সরকার রিপন, দেওয়ান মো. ইব্রাহীম, আজম খান ও শাহীন সরকার। তাদের মধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে কামাল উদ্দিন সিকদার, রেজাউল করিম রাসেল, কামরুল আহসান সরকার রাসেল, শফিকুল ইসলাম বাবুল ও নূরে আলম সিদ্দিকী নিজেরে প্রচারমূলক পোস্টার, লিফলেট, তোরণ নির্মাণ, নির্বাচনী শো ডাউন, সমাবেশ, উঠান বৈঠকসহ নির্বাচনী নানা কর্মকাণ্ড ও তৎপরতায় আরো আগে থেকেই নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন।
গাজীপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান ও মোস্তফা কামাল হুমায়ূন হিমু মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। এই আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারকে হত্যার পর উপনির্বাচন এবং পরবর্তী দুটি নির্বাচনে আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে জাহিদ আহসান রাসেলকে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দ ছাড় দিয়েছেন। প্রার্থী হতে চাননি দলের অন্য কেউ। এবার দলীয় মনোনয়নের লড়াইয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান। গত সিটি নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পর সাবেক এই পৌর মেয়রকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য করা হয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় তৃণমূল পর্যন্ত যেমন রয়েছে রাসেলের ভিত্তি তেমনি আওয়ামী লীগের সবস্তরেই অত্যন্ত মজবুত ভিত রয়েছে অভিজ্ঞ রাজনীতিক আজমত উল্লা খানের। রয়েছে সুদীর্ঘ রাজনৈতিক অতীত। এবারও শেষ পর্যন্ত জাহিদ আহসান রাসেল পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও আজমত উল্লা খানকে দলীয়ভাবে ম্যানেজ করেই রাসেলকে মনোনয়ন দিতে হবে।
গাজীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের ৩ জন দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। আওয়ামী লীগের সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট রহমত আলী এমপি, এমপি পুত্র জেলা আওয়ামী লীগ যুগ্ম সম্পাদক জামিল আহসান দুর্জয়, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন।
বর্তমান সংসদ সদস্য যিনি গত ৬টি নির্বাচনেই অপরাজিত, তিনি এবার শারীরিক অসুস্থতা ও বয়োবৃদ্ধতার কারণে এলাকার পরবর্তী এমপির চেয়ারটি দিতে তার ছেলে অ্যাডভোকেট জামিল হাসান দুর্জয়কে কয়েক বছর আগে থেকেই মাঠে নামিয়েছেন। রহমত আলীর অনুপস্থিতিতে মাঠ পর্যায়ে এমপি’র অনেক কাজই সামলেছেন ছেলে জামিল হাসন দুর্জয়। কিন্তু নিজ দলে দুর্জয়ের শক্ত প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন সবুজ। সবুজের জনপ্রিয়তাও কোনো অংশে দুর্জয়ের চেয়ে কম নয়। কেন্দ্রের সাবেক এই ছাত্রনেতা সবুজের আছে জোরালো লবিং। উঠোন বৈঠকের নামে নির্বাচনী মাঠে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন সবুজ। পাশাপাশি উন্নয়ন সভা, নির্বাচনী গণসংযোগ, শোডাউনে ছিলেন দুর্জয়। মনোনয়ন দৌড়ে মাঠে আর দলে দুজনের অবস্থাই সমানে সমান। ভাই বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী জাহিদ হাসন তাপস ও পিতা অ্যাডভোকেট রহমত আলী এমপি এই দুটো দুর্জয়ের জন্য বড় পাওনা। এরপরও সবুজের কোনো কৌশলের কাছে হেরে গিয়ে এই নির্বাচনী দৌড়ে এমপি পরিবার ছিটকে পড়েন কি না, তাই এখন দেখার অপেক্ষায় শ্রীপুর উপজেলা আর সদরের তিনটি ইউনিয়নবাসী। যদিও দুই নেতার সমর্থকরাই মনোনয়ন পাওয়ার গুজব ছাড়ছেন ঘণ্টায় ঘণ্টায়। মিষ্টি বিতরণ করছেন দফায় দফায়।
গাজীপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে ৪ জন মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি এমপি, তাজউদ্দিন আহমেদের ভাগিনা শিল্পপতি আলম আহমেদ, মোতাহার হোসেন মোল্লা ও হাবিবুর রহমান আকন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
দলের কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব নিয়ে কাপাসিয়া আওয়ামী লীগের বিরোধ দীর্ঘদিনের। আওয়ামী লীগের মূলধারার নেতৃবৃন্দ রিমির নেতৃত্বে দলীয় সকল কর্মসূচি পালনসহ নানা ধরণের কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে। অন্যদিকে, কৃষক লীগের ব্যানারে কৃষক লীগ উপদেষ্টা আলম আহমেদকে সামনে রেখে কৃষকলীগ সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন মোল্লা গত কয়েক বছর ধরেই আলাদাভাবে দলীয় নানা কর্মসূচি পালন করছেন। এসব সভা-সমাবেশে আলম আহমেদকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী এমপি প্রার্থী ঘোষণা করে জনমত তৈরি করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের এমপি সিমিন হোসেন রিমি বিরোধীরা চাচ্ছেন এবারের দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে কৃষক লীগের কোঠায় হলেও আলম আহমদ বা মোতাহার মোল্লা মনোনয়ন নিয়ে রিমিকে মনোনয়ন লড়াই থেকে ফেলে দিতে।
গাজীপুর-৫ আসনে আওয়ামী লীগের তিনজন মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। তারা হলেন- মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এমপি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান, চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক)। মেহের আফরোজ চুমকি ছাড়াও প্রায় এক বছর ধরে গণসংযোগসহ নানা কর্মসূচির নামে নির্বাচনী মাঠে আছেন আখতারুজ্জামান। এলাকায় আওয়ামী লীগে তার রয়েছে আলাদা বলয়। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির প্রায় সবাই এমপির সঙ্গে থাকলেও স্থানীয় পর্যায়ের অনেক নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধি রয়েছেন আক্তারুজ্জামানের সঙ্গে। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে মাঠের হিসাবে আক্তারুজ্জামানকে পেছনে ফেলে মনোনয়ন দৌড়ে চুমকির এগিয়ে যাওয়া অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়ে। মনোনয়ন পাওয়ার লড়াইয়ে প্রচণ্ড ঝুঁকিতে পড়েন তিনি। আক্তারুজ্জামান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে থাকায় এবং স্থানীয় সরকারের পদে থাকা জনপ্রতিনিধিগণকে এবার মনোনয়ন না দেয়ার বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত জানাজানির পর চুমকির ঝুঁকি যেমন কমেছে, তেমনি তার অনুসারীদের টেনশনও কমেছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর