বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগে (বিসিএল) এবারো খেলা হচ্ছে না মোহাম্মদ আশরাফুলের। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ক্রিকেটে ফেরা জাতীয় দলের এই সাবেক অধিনায়ককে চার ফ্র্যাঞ্চাইজির কেউ দলে টানেনি। মূলত দলগুলোর আগ্রহ না থাকাতেই তার জায়গা হয়নি বলে জানা গেছে। যদিও এরই মধ্যে ঢাকা প্রিমিয়ার লীগসহ জাতীয় ক্রিকেট আসরেও (এনসিএল) খেলেছেন মোহাম্মদ আশরাফুল। ঢাকা প্রিমিয়ার লীগের শেষ আসরে টানা পাঁচ সেঞ্চুরি হাঁকান তিনি। তবে সদ্য শেষ হওয়া এনসিএলে ব্যাট হাতে উজ্জ্বল ছিলেন না আশরাফুল। আসরে ৬ ম্যাচের ১০ ইনিংসে তার ব্যাট থেকে এসেছে সাকুল্যে ২৫৩ রান। হয়তো সে কারণেই এবারও তার ভাগ্যে জোটেনি বিসিএলে কোনো দল।
তবে দল না পেলেও হাল ছাড়েননি দেশের প্রতিভাবান এ ব্যাটসম্যান। বয়স, পরিস্থিতি কোনো কিছুকেই তিনি আর বাধা মনে করছেন না। নিজেকে প্রস্তুত রাখছেন শুধু ক্রিকেটের জন্যই। এ বিষয়ে আশরাফুল মানবজমিনকে বলেন, ‘মন একটু তো খারাপ হয়েছে। তবে প্রফেশনাল ক্রিকেটারদের এসব নিয়ে বসে থাকা ঠিক নয়। এই যে এখন জিমে যাচ্ছি। আমি আমাকে প্রস্তুত রাখছি যদি কোনো দল ডাকে! হতে পারে কারো ইনজুরি বা কারো ফর্ম খারাপ, সেখানে আমার সুযোগ চলে আসতে পারে।’
আশরাফুল আশায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত বিসিএলে তার খেলা হবে কিনা তা পুরোটাই ফ্র্যাঞ্চাইজিদের হাতে। তবে বিসিএলে খেলা হোক বা না হোক তার সব প্রস্তুতি এখন ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) ঘিরে। বিপিএলের দ্বিতীয় আসরেই বদলে যায় আশরাফুলের জীবন। অভিযোগ ওঠে ২০১২’র আসরে ঢাকা গ্লাডিয়েটর্স দলে খেলাকালে তিনি ফিক্সিং করেছেন। অভিযোগ ওঠে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিক্সিং নিয়েও। তবে আশরাফুল নিজেই বিসিএলে ফিক্সিংয়ের দায় শিকার করে নেন। পরে বিসিবি ও আইসিসি গঠিত ট্রাইব্যুনালে তার শাস্তি হয়। প্রথমে ৮ বছর এবং পরে তা কমিয়ে পাঁচ বছর ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করা হয় আশরাফুলকে। শুধু তাই নয়, ঘরোয়া ক্রিকেটে নিষেধাজ্ঞা কমিয়ে ৩ বছর করা হয়। শুধু আন্তর্জাতিক ও বিপিএলে তার নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকে ৫ বছর পর্যন্ত। চলতি বছর ১৩ই অক্টোবর নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি মিলেছে তার।
সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় ফের সামনে আসে প্রশ্ন আশরাফুল খেলতে পারবেন তো জাতীয় দলে! শুধু তাই নয়, বিপিএলে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো তাকে দলে টানবে কিনা সেটি নিয়ে ছিল নানা জল্পনা-কল্পনা। তবে ৬ষ্ঠ আসরে প্লেয়ার ড্রাফটেই তিনি দল পান। এইবার বিপিএলে তাকে দেখা যাবে চিটাগং ভাইকিংসে। বিপিএলের ৬ষ্ঠ আসরের বাকি এখনো দেড় মাস। আগামী বছর ৫ অথবা ৭ই জানুয়ারি মাঠে গড়ানোর কথা দেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় এ আসর। আশরাফুল বলেন, ‘বিপিএলে সুযোগ পাবো কিনা তা নিয়ে বেশ ভয় ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সুযোগ পেয়েছি। ফিটনেস বলেন আর স্কিল, সবই নিয়মিত অনুশীলন করে যাচ্ছি। কারণ বিপিএলে শুধু ফেরাই নয় আমার খেলাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমি চাই যদি ম্যাচ খেলার সুযোগ হয় যেন নিজের সেরাটাই দিতে পারি।’
দীর্ঘদিন তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেটে ছিলেন না। বয়সও এখন ৩৫ বছর। তাই সব দিক থেকে দারুণ চ্যালেঞ্জের মুখে দেশের এক সময়ের সেরা এই ব্যাটসম্যান। ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরে কতটা কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাকে- এ প্রশ্নের জবাবে আশরাফুল বলেন, খুব বেশি যে চ্যালেঞ্জ বেড়েছে তা নয়। দেখেন আমি রান কম করেছি তাও সেরা ২২ জনের মধ্যে আছি। হ্যাঁ, আমার আরো বেশি রান করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এবার এনসিএলে বেশ কিছু আউট ছিল আমার যা প্রশ্নবিদ্ধ। যে কারণে অন্তত চারটি ইনিংসে কম খেলতে পেরেছি। তবে এও সত্যি যেমনটা চেয়েছিলাম আমার ব্যাটিং তেমন হয়নি। তাই এখন বেশি করে কাজ করছি। যেন সুযোগ পেলে সেরা পারফরম্যান্সই করতে পারি।