দেশীয় চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নির্মাতা আমজাদ হোসেন গতকাল সকালে ব্রেইনস্ট্রোক করে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ইমপালস হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে আছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার ছেলে অভিনেতা ও নির্মাতা সোহেল আরমান। তিনি বলেন, আমি যখন বুঝতে পেরেছি যে আব্বা হাত-পা নাড়াতে পারছিলেন না। তখনই তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। ডাক্তার তখন জানালেন যে, আব্বা ব্রেইনস্ট্রোক করেছেন। তার শারীরিক অবস্থা ভালো না। যে কারণে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। ডা. শহীদুল্লাহ সবুজের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছে।
সোহেল আরমান আরো বলেন, আমি সবার কাছে দোয়া চাই যেন আব্বাকে আল্লাহ সুস্থভাবে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেন। আমি সন্তান হিসেবে আমার চেষ্টার কোনো ত্রুটি করছি না। উল্লেখ্য, আমজাদ হোসেনের জন্ম ১৯৪২ সালের ১৪ই আগস্ট, জামালপুরে। শৈশব থেকেই তার সাহিত্যচর্চা শুরু। পঞ্চাশের দশকে ঢাকায় এসে সাহিত্য ও নাট্যচর্চার সঙ্গে জড়িত হন। প্রথমেই তিনি অভিনয়ে নিজেকে তুলে ধরেন মহিউদ্দিন পরিচালিত ‘তোমার আমার’ চলচ্চিত্রে। এর পরপরই তিনি অভিনয় করেন মুস্তাফিজ পরিচালিত ‘হারানো দিন’ চলচ্চিত্রে। এরপরের ইতিহাসটা একেবারেই অন্যরকম। সালাহ উদ্দিন আমজাদ হোসেনের লেখা নাটক ‘ধারাপাত’ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। এতে আমজাদ হোসেন নায়ক হিসেবে অভিনয়ও করেন। এরপর আমজাদ হোসেন জহির রায়হানের ইউনিটে কাজ শুরু করেন। এভাবেই দীর্ঘদিন কাজ করতে করতে ১৯৬৭ সালে তিনি নিজেই চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। নাম ‘জুলেখা’। এরপর নূরুল হক বাচ্চুর সঙ্গে যৌথভাবে নির্মাণ করেন ‘দুই ভাই’। তার পরিচালিত ব্যাপক দর্শকপ্রিয় চলচ্চিত্রগুলো হচ্ছে ‘বাল্যবন্ধু’, ‘পিতাপুত্র’, ‘এই নিয়ে পৃথিবী’, ‘বাংলার মুখ’, ‘নয়নমণি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘সখিনার যুদ্ধ’, ‘ভাত দে’, ‘হীরামতি’, ‘প্রাণের মানুষ’, ‘সুন্দরী বধূ’, ‘কাল সকালে’, ‘গোলাপী এখন ঢাকায়’, ‘গোলাপী এখন বিলেতে’ ইত্যাদি। গুণী এই পরিচালক ১৯৭৮ সালে ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ এবং ১৯৮৪ সালে ‘ভাত দে’ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।