নাগরিকপঞ্জি বা সিটিজেনশিপ (সংশোধিত) বিল, ২০১৬ থেকে যদি ‘বাংলাদেশ’ শব্দটি বাদ দেয়া হয় তাতেও আসাম নিরাপদ হবে না বলে দাবি করেছে আসামে কৃষকদের অধিকার বিষয়ক গ্রুপ কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি (কেএমএসএস)। এ গ্রুপের উপদেষ্ঠা অখিল গগৈই এমনটা দাবি করে বলেছেন, যদি ‘বাংলাদেশ’ শব্দটি ফরেনার্স (অ্যামেন্ডমেন্ট) অর্ডার, ২০১৫ এবং পাসপোর্ট (ভারতে প্রবেশ) নোটিফিকেশন অ্যামেন্ডমেন্ট রুলস, ২০১৫ থেকে বাদ দেয়া না হয় এবং শুধু নাগরিকত্ব বিষয়ক বিল থেকে এ শব্দ বাদ দেয়া হয়, তাহলেও আসাম নিরাপদ থাকবে না। এ খবর প্রকাশ করেছে ভারতের অনলাইন দ্য টেলিগ্রাফ। এতে বলা হয়, এরই মধ্যে মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, নাগরিকত্ব নিয়ে জনমত ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্য অংশীদারদের মতামত গ্রহণ করছে জয়েন্ট পার্লামেন্টারি গ্রুপ (জেপিসি)। নাগরিকত্ব বিষয়ক বিল থেকে তারা ‘বাংলাদেশ’ শব্দটি বাদ দেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সুপারিশ করতে পারেন বলে মিডিয়ার রিপোর্টে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে কারণ হিসেবে তারা বলতে পারেন আসামে এ শব্দটি নিয়ে বিরোধিতা আছে এবং জেপিসিরও নিজেদের একটি অংশের বিরোধিতা আছে এ শব্দটি নিয়ে।
উল্লেখ্য, নাগরিকপঞ্জির অধীনে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের যেসব নির্যাতিত মানুষ ভারতে প্রবেশ করবেন তাদেরকে নাগরিকত্ব দেয়া হবে। এ বিলের আপাদমস্তক বিরোধিতা করছে আসামের ব্রহ্মপুত্র ভ্যালি।
তারা যুক্তি দেখাচ্ছেন, ১৯৭১ সালের যে তারিখকে সর্বশেষ সময়সীমা হিসেবে ধরা হয়েছে এবং আসাম চুক্তির অধীনে অবৈধ অভিবাসীদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর যে রীতিনীতি আছে তা লঙ্ঘন হবে এই বিল বাস্তবায়ন করলে। আর এটা বাস্তবায়ন করলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে ভারতে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রবেশের দরজা উন্মুক্ত হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, আসামে নাগরিকত্ব বিলের বিরুদ্ধে যে ৭০টি সংগঠন কথা বলছে তার অন্যতম কেএমএসএস। এর উপদেষ্টা অখিল আরো বলেছেন, বিলটি থেকে বাংলাদেশ শব্দটি বাদ দেয়ার কোনো বিবৃতি বা সিদ্ধান্ত ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে আসে নি। এ শব্দটি বাদ দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন জেপিসির মাত্র হাতেগোনা কয়েকজন সদস্য। এ মত গ্রহণ নাও করতে পারেন এ কমিটির চেয়ারম্যান। আর তিনি এ বিষয়টির উল্লেখ না করেই বিলটি পাঠিয়ে দিতে পারেন কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে।
সূত্রগুলো বলেছেন, অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস, বিজু জনতা দল থেকে জেপিসি কমিটির সদস্যরা ও আসাম কংগ্রেসের এমপি ভুবনেশ্বর কালিতা নাগরিকত্ব বিল থেকে ‘বাংলাদেশ’ শব্দটি বাদ দেয়ার সুপারিশ করেছেন। অখিল বলেন, যদি বাংলাদেশ শব্দটির ব্যবহার নিয়ে ভিন্নমতের কথা জানিয়ে জেপিসি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বিলটি পাঠায় তাহলে তা পাস করতে কিছু ‘টাফ টাইম’ লাগতে পারে। কারণ, এ নিয়ে তখন পার্লামেন্টে বিতর্ক হতে পারে। অখিল আরো বলেন, আমরা এ বিলটিকে অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক, আসামবিরোধী বলে এর বিরোধিতা করে যাচ্ছি। যদি আসাম নিরাপদও হয় তবু আমরা এ বিলের বিরোধিতা করে যাবো। কারণ, এ বিলটি থেকে যাবে অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক।