আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ‘অরাজনৈতিক’ অঙ্গনের বেশ কয়েকজন প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এদের মধ্যে জাতীয় ক্রিকেট দলের তারকা মাশরাফি বিন মর্তুজার প্রার্থিতা প্রায় নিশ্চিত। দু’দল থেকেই শিল্প ও সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেকেই প্রার্থী হতে চান, যদিও তাদের কারও বিষয়েই নিশ্চিত করে কিছু জানা যায়নি। এর বাইরে হিরো আলমের প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। তারকা অনেকে নির্বাচন না করলেও ক্ষমতাসীন দলের হয়ে প্রচারে অংশ নেবেন।
বহুকাল ধরেই এমন তারকারা নির্বাচন করে আসছেন। এবারের নতুনত্ব হচ্ছে নির্বাচনী প্রচারণায় তাদের জোরেশোরে মাঠে নামার বিষয়টি। আগে এমনটা দেখা যায়নি। কেন এমন হচ্ছে?
এই তারকাদের বেশির ভাগই দুই দলের আমলেই সুবিধাভোগী।
দুই দলের আমলেই তারা নিজ গুণে জাতীয় পুরস্কার সহ নানা খেতাব লাভ করেছেন। এ ছাড়া নব্বই পরবর্তী বাংলাদেশের ইতিহাস বলে, কোনো দলই নির্বাচনে টানা দ্বিতীয়বার পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। এ কারণেই কোনো বিশেষ দলের দিকে ঝুঁকে যাওয়ার বিপদ সম্পর্কে এই তারকারা সবসময়ই সচেতন ছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের টানা দু’বার ক্ষমতা ভোগ এই দৃশ্যপটকে পাল্টে দিয়েছে। অনেকেই অবশ্য মত দেবেন যে, তারকাদের উচিত নিজেদের খ্যাতি ধরে রাখা। রাজনীতিতে প্রবেশ করার অর্থই হলো বিতর্কিত হওয়া। কিন্তু খ্যাতিমান চলচ্চিত্র ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বরা রাজনীতিতে অংশ নেয়ার বিষয়টি বিরল কিছু নয়।
আমেরিকায় ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়া, কিংবা তারও আগে রোনাল্ড রিগ্যানের প্রেসিডেন্সি এখানে প্রণিধানযোগ্য। আবার ট্রাম্পের শাসনের বিরুদ্ধে আমরা দেখি চলচ্চিত্র ও বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অনেককে সরব হতে। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে মর্যাদাবান চলচ্চিত্র অনুষ্ঠান অস্কারে উপস্থিত হয়ে মেরিল স্ট্রিপের মতো তারকারা ট্রাম্পকে ধুয়ে দিয়েছিলেন। ওই অনুষ্ঠানই যেন ট্রাম্পবিরোধী প্ল্যাটফরম হয়ে উঠেছিল। এ ছাড়া আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গ রাগবি খেলোয়াড়রা পুলিশি সহিংসতার প্রতিবাদে জাতীয় সংগীত চলার সময় হাঁটু গেড়ে প্রতিবাদ জানিয়ে ব্যাপক আড়োলন সৃষ্টি করেছিলেন। পশ্চিমে তারকারা বিভিন্ন অন্যায় ও অনাচার নিয়ে খুবই সরব থাকেন। কাজেই নির্বাচনে লড়ার অধিকার ও যৌক্তিকতা যেমন আমাদের তারকাদের রয়েছে, তেমনি জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ইস্যুতে সরব হওয়ার দায়িত্ববোধও তাদের থাকা উচিত, যেটি আমরা তাদের মধ্যে দেখি না। যদি তারা এখানে ব্যর্থ হন, তাহলে জনমনে এই প্রশ্ন উঠতে দেখলে আশ্চর্য্য হবো না যে, তারা শুধু ক্ষমতার স্বাদ পেতেই রাজনীতিতে জড়িয়েছেন।