ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৬টি আসনে ৪০ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপির কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বিমুখ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা রয়েছেন। গতকাল সকাল থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে মনোনয়ন বাছাই চলে। এর আগে এসব আসনে বিভিন্ন দলের ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেন মোট ৮৬ জন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের মো. মঞ্জু মিয়ার। তাদের একজনের এক শতাংশ ভোটারে ত্রুটি এবং আরেকজন আয়কর রিটার্ন জমা না দেয়ায় মনোনয়ন বাতিল হয়। এ আসন থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন মোট ৮ জন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২(সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে সর্বোচ্চ ২৭ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন।
এর মধ্যে বাছাইয়ে বাতিল হয় ১১ জনের। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বিমুখ হয়ে স্বতন্ত্র মনোনয়ন দাখিলকারী আনিছুর রহমান, সৈয়দ তানভীর হোসেন, মো. শাহজাহান আলম সাজু, মো. সফিউল্লাহ (হুমায়ুন মিয়া) ও মো. আশরাফ উদ্দিনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। এক শতাংশ ভোটারে ত্রুটির কারণে তাদের সবার মনোনয়ন বাতিল করা হয়। এ ছাড়া হলফনামা ও আয়কর রিটার্নে গরমিলের কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোখলেছুর রহমান ও আয়কর না দেয়ায় মো. গিয়াস উদ্দিনের মনোনয়নপত্রও বাতিল করা হয়। উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে করা পদত্যাগপত্র গৃহিত হওয়ার প্রমাণ না দেয়ায় বিএনপির আবু আসিফ আহমেদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয় । ঋণখেলাপি হওয়ায় বাতিল হয়েছে বিএনপির আরেক প্রার্থী আখতার হোসেনের মনোনয়নপত্র। চলমান মামলার বিবরণ না দেয়ায় বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. মহিউদ্দিন মোল্লার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। গণফোরামের শাহ মফিজের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয় হলফনামা ও আয়করের তথ্যে মিল না থাকায়। এখানে স্বতন্ত্র মনোনয়নপত্র দাখিলকারীদের মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মাঈন উদ্দিন মঈনের মনোনয়ন বৈধ বিবেচিত হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনে মনোনয়নপত্র দাখিলকারী ১৬ জনের মধ্যে ১০ জনের মনোনয়নপত্রই বাতিল করা হয়েছে। পৌরকর পরিশোধ না করায় জাতীয় পার্টির আবদুল্লাহ আল হেলাল, হলফনামায় মামলার তথ্য না থাকায় এবং এক শতাংশ ভোটারে ত্রুটির কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থী জামাল রানার, ভোটার তালিকায় ত্রুটি ও আয়কর রিটার্ন না দেয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবু হানিফের, এক শতাংশ ভোটারে ত্রুটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. বশির উল্লাহ জরুর এবং আয়কর রিটার্ন না দেয়ায় মো. ওমর ইউসুফ খান ও মো. মাঈন উদ্দিনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। এ ছাড়া আয়কর রিটার্ন না দেয়ায় বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের সৈয়দ মাহমুদুল হক আক্কাছ, কর প্রদান না করায় বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, আয়কর রিটার্ন দাখিলের তথ্য সঠিক না হওয়ায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সৈয়দ আনোয়ার আহম্মদ লিটন, পৌরকর পরিশোধ না করায় এবং হলফনামায় আয়ের উৎস না থাকায় গণফোরামের তারিকুল রৌফের মনোনয়পত্র বাতিল করা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী মুশফিকুর রহমানের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। মনোনয়নপত্রের ফরম নম্বর ২১ ফিলাপ না করায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়। এই ফরমে সম্পদ ও দায় এবং বাৎসরিক আয় ও ব্যয়ের হিসেব লিপিবদ্ধ করতে হয়। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক সংসদ সদস্য ও সচিব মুশফিকুর রহমান আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হকের বিপরীতে নির্বাচন করার জন্য মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। তিনি ছাড়াও বিএনপির আরেকজন প্রার্থী আখাউড়া উপজেলা চেয়ারম্যান মুসলিম উদ্দিনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়। মুসলিম উদ্দিন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পদ থেকে যে পদত্যাগ করেছেন তা গৃহীত হয়েছে এই সংশ্লিষ্ট কাগজ জমা দেননি। ঋণখেলাপি হওয়ায় ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. দেলোয়ার হোসেন, ভোটার তালিকায় ত্রুটির কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফেরদুস আক্তার এবং ঋণখেলাপি হওয়ায় আহমেদ শাহ মোর্শেদ শাহিনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনে দলের সুপারিশপত্র না থাকায় আওয়ামী লীগের একেএম মমিনুল হক সাঈদ, ঋণখেলাপি হওয়ায় বিএনপির কাজী নাজমুল হোসেন তাপস এবং জাতীয় পার্টির কাজী মো. মামুনুর রশিদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে মামলার বিবরণীতে তথ্য সঠিক না হওয়া কারণে। স্বতন্ত্র নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া ও সায়েদুল হক সাঈদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয় এক শতাংশ ভোটারের তালিকায় ত্রুটির কারণে। হলফনামায় আয়ের উৎস না থাকায় মনোনয়ন বাতিল করা হয় ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা মেহেদী হাসানের। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্চারামপুর) আসনে হলফনামায় মামলার তথ্য না থাকায় বিএনপির আবদুল খালেক, দলীয় সুপারিশপত্রের স্বাক্ষরে ঘষামাজা থাকায় মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন এবং আয়কর রিটার্ন না দেয়ায় রফিকুল ইসলাম সিকদারের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। ক্রটিপূর্ণ হলফনামা ও নোটারি না করায় জাতীয় পার্টির জেসমিন নূর বেবী, আয়কর রিটার্নের সনদ সত্যায়ন না করায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের কে এম জাবিরের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। আখাউড়া উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আবুল মনসুর মিশন জানান, মুশফিকুর রহমানের সম্পদের বিবরণী হলফনামায় দেয়া হয়েছে। মনোনয়নপত্রে নির্ধারিত ফরমে জায়গা না হওয়ায় সেটি তারা আলাদা কাগজে দিয়েছেন। কিন্তু সেখানে সংযুক্ত কথাটি উল্লেখ না করায় মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। এনিয়ে তারা আজই আপিল করবেন।