মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়ায়) মহাজোটের প্রার্থী কে হচ্ছেন এনিয়ে এখনো কাটছে না ধূম্রজাল। প্রার্থিতা বাছাইয়ের পর বিকল্পধারা থেকে মহাজোটের মনোনীত প্রার্থী হতে প্রত্যাশায় আছেন বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক এমপি এম এম শাহীন। আর জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে মহাজোটের মনোনীত প্রার্থী হতে অপেক্ষায় আছেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম শামীম।
অপরদিকে নৌকার কাণ্ডারি হতে জোর প্রত্যাশা স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য ও কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মতিন। দলীয় হাইকমান্ডের কাছে আবদুল মতিন এখন এমন জোরালো দাবি জানাচ্ছেন। এখন এই নির্বাচনী এলাকা জুড়ে মহাজোটের প্রার্থী নিয়ে যেমন চলছে নানা গুঞ্জন আর আলোচনা-সমালোচনা। তেমনি বর্তমান এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মতিনকে নিয়েও চলছে নানা আলোচনা। গেল ক’দিন থেকে তাকে নিয়েই সরব রয়েছেন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মী, তার অনুসারী ও নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় পদ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে এমন দাবি উপজেলা নেতৃবৃন্দের।
দলীয় এমন সিদ্ধান্তের পর তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী থেকে তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবেন এমন গুজব ছড়ানোর তীব্র প্রতিবাদও জানান তিনি। আবদুল মতিন নিজেকে এই আসনে নৌকার যোগ্য প্রার্থী উল্লেখ করে বলেন, এই আসনে নৌকাকে বিজয়ী করতে অবশ্যই জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মূল্যায়ন করবেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও নানা বিবেচনায় তিনি দলীয় সমর্থন ও নৌকা প্রতীক পাবেন এমনটি দৃঢ় প্রত্যাশা তার। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় কোনো প্রার্থীকে নৌকার মনোনয়ন না দেয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমাদেন বর্তমান এমপি ও কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মতিন। কুলাউড়ায় মহাজোট থেকে এখনো কোনো প্রার্থীকে চূড়ান্তভাবে নৌকা প্রতীক না দেয়ায় আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের চাপ ও অনুরোধে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন এমন বক্তব্য আবদুল মতিনের। তার প্রার্থিতা নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টির পাঁয়তারা ও অপপ্রচার বন্ধের লক্ষ্যে গতকাল সকালে গণমাধ্যমে প্রেরিত লিখিত ও মৌখিক বিবৃতিতে তিনি জানান, “একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুলাউড়া আসনে যেহেতু আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট থেকে এখন কোনো প্রার্থী চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করা হয়নি, তাই আমি এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছি। আমি সংগঠনের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
আমি ব্যতীত যদি অন্য কাউকেও নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয় তাহলে তখন হয়তো আমি আমার মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নৌকার পক্ষে কাজ করবো। আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় বিজয়ী হওয়া এবং জননেত্রী শেখ হাসিনাকে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী করে দেশকে উন্নয়নের অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো”। জানা যায় বর্তমান এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মতিন পঞ্চাশ বছর ধরে একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। পঞ্চাশ বছরের এ পথচলায় বিভিন্ন চড়াই উতরাই পেরিয়ে কঠিন পথও অতিক্রম করে তিনি একাধিকবার জনপ্রতিনিধিও হয়েছেন। কুলাউড়ায় জনপ্রতিনিধি হিসেবে পঞ্চাশ বছর অতিক্রম করা এমন জনপ্রতিনিধি আর কেউ নেই। বার বার ভোটের মাঠে কৌশলে জয়ী হয়ে নীরবে চমক দেখিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার অজুহাতে কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ তাকে দলীয় পদ পদবি থেকে বহিষ্কার করেছে। এই বহিষ্কার তার জন্য নতুন কিছু নয়। এর আগেও ২০১৪ সালে দলীয় সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে সংসদ নির্বাচন করায় তাকে বহিষ্কার করা হয়। অবশ্য বিজয়ী হলে তাকে পুনরায় দলে ফিরিয়ে নেয়া হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে ১২ জন দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে জমা দেন।
পরে দলীয়ভাবে কাউকে প্রার্থিতার সিদ্ধান্ত দেয়নি দলের হাইকমান্ড। তাই অনেকেই ধারণা করছেন আসনটি মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি অথবা বিকল্পধারাকে আওয়ামী লীগ ছাড় দিবে। এখনো মহাজোটের প্রার্থী চূড়ান্ত না হওয়ায় এই নির্বাচনী এলাকায় মহাজোটের প্রার্থী কে হচ্ছেন এই নিয়ে চলছে জোর আলোচনা। এ আসনে মহাজোট ও নৌকার কাণ্ডারি কে হচ্ছেন তা জানতে হয়তো অপেক্ষা করতে হবে ৯ই ডিসেম্বর পর্যন্ত। অপরদিকে এই আসনে বিএনপি ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে ধানের শীষের প্রার্থী মনোনীত হয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতা, ডাকসুর সাবেক ভিপি ও এমপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ। জানা যায়, আসন্ন এই নির্বাচনে কুলাউড়া আসন থেকে ৮ জন প্রার্থীর মধ্যে যাচাই-বছাইয়ে ১ জন বাদ পড়েন আর ৭ জন প্রার্থীর প্রার্থিতা ঠিক থাকে। তবে বাদ পড়া প্রার্থীও প্রার্থিতা ফিরে পেতে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেছেন বলে জানা গেছে।