এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনার ছয়টি আসনে ৪৮ জন দলীয় ও ৩ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ মোট ৫১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ৬ জন ও বিএনপির ১১ জন প্রার্থী রয়েছেন। আওয়ামী লীগের ৬ জনের তিনজন এইচএসসি পাস, বাকিরা স্নাতক ডিগ্রিধারী। অন্যদিকে বিএনপির ৯ জন ও অপ্রকাশ্য জামায়াতের দুইজনের মধ্যে একজন বাদে বাকি সবাই স্নাতক ডিগ্রিধারী। এই ৫১ প্রার্থীর মধ্যে ৩১ জনই ব্যবসায়ী।
মামলার বিষয়ে তথ্যে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ মনোনীত কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তবে খুলনা-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী আমীর এজাজ খান ও খুলনা-২ আসনের নজরুল ইসলাম মঞ্জুর বিরুদ্ধে চারটি করে, খুলনা-৩ আসনের বিএনপির এসএম আরিফুর রহমান মিঠু ও ৫ আসনের মামুন রহমান ও ৬ আসনের এসএম শফিকুল আলমের বিরুদ্ধে ৩টি করে মামলা রয়েছে। খুলনা-৪ আসনে দলটির প্রার্থী আজিজুল বারী হেলালের বিরুদ্ধে ১০১টি, ৫ আসনে মিয়া গোলাম পরওয়ারের বিরুদ্ধে ২৩টি ও ৬ আসনের আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে ২০টি মামলা রয়েছে। খুলনা-৪ আসনে শরীফ শাহ কামাল তাজ ও ৫ আসনে গাজী আব্দুল হকের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রার্থীদের ৫১ জনের মধ্যে ৩১ জনেরই পেশা ব্যবসা। ঠিকাদারি, গৃহস্থালি পণ্যের ব্যবসাসহ বীমা কোম্পানির এজেন্সির সঙ্গে কেউ কেউ জড়িত রয়েছেন। প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের কারও বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। অন্যদিকে বিএনপির ৬ জন এবং জামায়াতের দুইজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে ১৬১টি মামলা রয়েছে। বিএনপির তিন প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো মামলার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী পঞ্চানন বিশ্বাস কৃষিকাজ, খুলনা-৩ (খালিশপুর-দৌলতপুর-খানজাহান আলী) আসনের মন্নুজান সুফিয়ান বাড়িভাড়া ও মাছ চাষ পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আওয়ামী লীগের বাকি ৪ প্রার্থী ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এদিকে বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে খুলনা-২ (সদর-সোনাডাঙ্গা) আসনের নজরুল ইসলাম মঞ্জুর ব্যবসা নেই বলে জানালেও খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) আসনের গাজী আব্দুল হক অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক ও অপর প্রার্থী ড. মামুন রহমান চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টকে পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এ দলের অন্য ৮ প্রার্থীর পেশা ব্যবসা বলে উল্লেখ করেছেন। প্রার্থীদের হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রার্থীদের মধ্যে তিনজন ‘স্বশিক্ষিত’, তিনজন সাক্ষরজ্ঞান, বাকি প্রার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পার করে এখন ব্যবসা করছেন। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ৫১ প্রার্থীর মধ্যে একজন অষ্টম শ্রেণি, তিনজন এসএসসি পাস এবং পাঁচজন আছেন এইচএসসি পাস। ১২ জন স্নাতক, ৪ জন এলএলবি পাস, ৭ জন স্নাতকোত্তর, ২ জন চিকিৎসক, ১ জন ডক্টরেট ও ১ জন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট। আবার প্রার্থীদের মধ্যে ৯ জন মাদরাসার ছাত্র ছিলেন।
সূত্র জানায়, খুলনা-১ আসন থেকে ৭ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের পঞ্চানন বিশ্বাস, বিএনপির আমীর এজাজ, স্বতন্ত্র ননী গোপাল, জাতীয় পার্টির সুনীল শুভ রায়, ওয়ার্কার্স পার্টির গৌরাঙ্গ প্রসাদ রায় ও বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) অশোক কুমার সরকার সবাই স্নাতক পাস। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের (ইশা) প্রার্থী মো. আবু সাঈদ দাওরায়ে আরবি লাইনে হাদিস পাস করেছেন।
খুলনা-২ আসন থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৯ জন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল ও বিএনএফ এর এস,এম সোহাগ এইচএসসি পাস, বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জু আইনে স্নাতক, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আব্দুল আওয়াল (দাওরায়ে হাদিস), বাংলাদেশ মুসলিম লীগের এসএম ইসলাম আলী এসএসসি ও জাকের পার্টির কেএম ইদ্রিস আলী সাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন এবং গণফ্রন্টের মনিরা বেগম ও বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির এইচএম শাহাদাৎ স্বশিক্ষিত।
খুলনা-৩ (দৌলতপুর-খালিশপুর-খানজাহান আলী) আসন থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সাতজন। আওয়ামী লীগ থেকে বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান, বিএনপির রকিবুল ইসলাম বকুল, বাসদ (খালেকুজ্জামান) জনার্দন দত্ত নান্টু, জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন স্নাতক পাস। জেএসডি’র (রব) আ ফ ম মহসিন এলএলবি, বিএনপির এসএম আরিফুর রহমান মিঠু এইচএসসি এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দলের মো. মুজাম্মিল হক দাওরায়ে হাদিস পাস।
খুলনা-৪ (তেরখাদা-রূপসা-দিঘলিয়া) আসন থেকে প্রার্থিতা জমা দিয়েছেন মোট ৯ জন। বিএনপির আজিজুল বারী হেলাল ও শরীফ শাহ কামাল তাজ, বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেএম আলীদাদ স্নাতক, আওয়ামী লীগের আব্দুস সালাম মুর্শেদী এইচএসসি, বিএনএফর শেখ হাবিবুর রহমান এমসিপিএস, জাকের পার্টির আনসার আলী অষ্টম শ্রেণি পাস, খেলাফত মজলিসের এসএম সাখাওয়াত হোসাইন দাওরায়ে হাদিস এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ইউনুস আহম্মেদ সেখ আরবি লাইনে কামিল পাস। জাতীয় পার্টির মল্লিক হাদিউজ্জামান সাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন।
খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) আসন থেকে ৭ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এমএ, বিএনপির গাজী আব্দুল হক এমবিবিএস, মামুন রহমান চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, জামায়াতে ইসলামীর অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এমকম, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি চিত্ত রঞ্জন গোলদার স্নাতক, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শেখ মুজিবুর রহমান দাওরায়ে হাদিস এবং জাতীয় পার্টির মো. শহীদ আলম এসএসসি পাস।
খুলনা-৬ আসন (পাইকগাছা-কয়রা) থেকে ১২ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের মো. আক্তারুজ্জামান এইচএসসি, বিএনপি থেকে এসএম শফিকুল আলম মনা ও জাকের পার্টির শেখ মর্তুজা আল মামুন এলএলবি, জামায়াতে ইসলামীর খুলনা মহানগরী আমীর মো. আবুল কালাম আজাদ কামিল। জাতীয় পার্টির শফিকুল ইসলাম মধু স্বশিক্ষিত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী নূর আহমাদ ফাজিল, স্বতন্ত্র মো. আব্দুল কাদের কামিল ও সুব্রত কুমার বাইন পিএইচডি অর্জন করেছেন। বিএনএফর মির্জা গোলাম আজম ও জেএসডি’র আয়ুব আলী স্নাতক, কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সুবাস চন্দ্র সানা এসএসসি এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর এমএ।