× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

অবৈধ অস্ত্র নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে

দেশ বিদেশ

শুভ্র দেব
৮ ডিসেম্বর ২০১৮, শনিবার

 নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারের শঙ্কা বাড়ছে। বিভিন্ন গোন্দো সংস্থার প্রতিবেদনে নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র নাশকতামূলক কাজে ব্যবহারের আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইতিমধ্যে অভিযান শুরু করেছে। নির্বাচন কমিশনের চাহিদার প্রেক্ষিতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ অভিযান চালাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন অবৈধ অস্ত্র সংসদ নির্বাচনে আধিপত্য বিস্তারে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল ও নির্বাচন বানচালের উদ্দেশ্যে একটি মহল নাশকতা করতে পারে।
এদিকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে কিছুদিন আগে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন নিরাপত্তা বিভাগ পুলিশ সদর দপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে চিঠি দিয়ে নির্দেশনা দিয়েছে।
নির্দেশনার পর পুলিশ সদর দপ্তর সারা দেশের ঊর্ধ্বতন পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, নির্বাচনে অবৈধ অস্ত্র বড় শঙ্কা তৈরি করতে পারে। তাই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব সংস্থাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পুলিশের পাশপাশি, গোয়েন্দা সংস্থা, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কাজ করছে। ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন মানবজমিনকে বলেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সব সময়ই আমাদের অভিযান থাকে। নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী অভিযান চলছে। তবে শিগগিরই একটি বিশেষ অভিযান চালানো হবে। তিনি বলেন, আমরা গোয়েন্দা তথ্য থেকে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী ও অবৈধ অস্ত্র আছে এমন ব্যক্তিদের তালিকা করেছি। সেই তালিকা ধরেই কাজ করছি। এখন পর্যন্ত অনেক অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। নির্বাচন পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চলবে। যে পরিমাণ অস্ত্র সন্ত্রাসী ও একটি বিশেষ মহলের কাছে মজুত আছে সেটি নির্বাচনে কেমন প্রভাব ফেলবে এমন প্রশ্নে ডিআইজি মামুন বলেন, এখন পর্যন্ত মনে করছি সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে। যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা প্রস্তুত আছি। তবে আমরা কোনো ধরনের  আশঙ্কাকেই উড়িয়ে দিচ্ছি না। গোয়েন্দাসূত্র বলছে, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী, মাদক ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতাকর্মী এবং সন্ত্রাসীদের কাছে অন্তত চার লাখ অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। নির্বাচনে আধিপত্য বিস্তার, ক্ষমতার প্রভাব দেখানো, ভোট কেন্দ্র দখলসহ নাশকতায় এসব অস্ত্র ব্যবহার হতে পারে। অপরাধ বিজ্ঞানি তৌহিদুল হক মানবজমিনকে বলেন, অপরাধীরা সবসময়ই অস্ত্রের মজুত রাখে। শুধু তারা সময় সুযোগ মতো জানান দেয়ার অপেক্ষায় থাকে। তাই অপরাধী যাই হোক না কেন মূল বিষয়টা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেখতে হবে তারা কতটুকু তৎপর। কারণ সিন্ডিকেটরাই দেশে অস্ত্রের চালান নিয়ে আসছে। আর এই সিন্ডিকেটদের সহযোগিতা করছে খোদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্য। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটা স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে তাদের আয়ত্তের বাইরে কি পরিমাণ অস্ত্র আছে। এসব উদ্ধারে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যেতে হবে। তা না হলে সমাজের সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা ভীতিকর অবস্থা তৈরি হবে। তিনি বলেন, প্রকাশ্য গুলির ঘটনাগুলিই ভীতির কারণ তৈরি করে দিচ্ছে। আর এসব আগ্নেয়াস্ত্র যদি অপরাধীর কাছে মজুত থাকে তবে সমাজের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলাবা হিনীকেও বেগ পেতে হবে। কারণ যতগুলো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সামাল দিতে হবে। তিনি বলেন, অতীতে জাতীয় নির্বাচনে অস্ত্রের মহড়া, গুলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এটি মাথায় রেখেই পদক্ষেপ নিতে হবে। পুলিশের সাবেক একজন আইজি মানবজমিনকে বলেন, গুলাগুলির ঘটনা দেশে সবসময়ই থাকে। রাজনৈতিক প্রভাব, ব্যক্তি দ্বন্দ্বসহ নানা কারণে এসব হয়ে থাকে। তবে নির্বাচনী বছর আগ্নেয়াস্ত্রের সংখ্যা একটু বেড়ে যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তখন বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। তিনি বলেন, দেশে যে পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র প্রবেশ করে তার ১০ শতাংশ আটক করা সম্ভব হয়। বাকি অস্ত্র কোনো না কোনোভাবে প্রবেশ করে ছড়িয়ে পড়ে।
পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, চলতি বছরের পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে ১৮ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪৭১টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে সহস্রাধিক আসামিকে। এর মধ্যে ৩৯৭টি অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় হাতেনাতে ৩০৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ৭৪টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। ১৮ দিনে যেসব অস্ত্র উদ্ধার করা হয় সেসবের মধ্যে ২৫০টি হলো আগ্নেয়াস্ত্র। ৪৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয় পরিত্যক্ত অবস্থায়। এসব অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়েছে ২১২টি। ১৮ দিনে উদ্ধার করা আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে ১টি এসএমসি, ১৫টি দেশি রিভলভার, ৭টি বিদেশি রিভলভার, ৬টি  দেশি পিস্তল, ৪০টি বিদেশি পিস্তল, ৩৩টি বন্দুক, ৪টি কাটা বন্দুক, ৪৯টি পাইপগান, ১১টি শাটারগান, ৪৫টি এলজি এবং ৩৮টি ওয়ান শুটারগান আছে। এ ছাড়া ২০১৫ সালে সারা দেশে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে ৩ হাজার ১৫০টি। মামলা করা হয়েছে ২ হাজার ৮১টি।  ২০১৬ সালে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে ৫ হাজার ৭০০টি। মামলা করা হয়েছে ৬২২টি। ২০১৭ সালে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে ৫ হাজার ৭৫৫টি। মামলা করা হয়েছে ২ হাজার ২০৮টি। ২০১৮ সালের এপ্রিল পর্যন্ত অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে ৬ হাজারের বেশি। মামলা করা হয়েছে ২০৬০টি।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (অপারেশন) সাঈদ তারিকুল হাসান মানবজমিনকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য পুলিশ কাজ করছে। আমরা তালিকাভুক্ত অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী ও অবৈধ অস্ত্র বহনকারীদের নজরদারিতে রেখেছি। নির্বাচনে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য বাহিনী কাজ করবে। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-২) অধিনায়ক লে. কর্নেল আনোয়ার উজ জামান মানবজমিনকে বলছেন, নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের কাজ করছি। আমাদের গোয়েন্দারা তথ্য সংগ্রহ করছেন। এ ছাড়া আমাদের তালিকাভুক্ত অস্ত্রধারীদের নজরদারিতে রেখেছি। তিনি বলেন, যেকোনো পরিস্থিতিতেই অবৈধ অস্ত্র একটা আতঙ্ক আর নির্বাচনেতো অবশ্যই। তাই আমরাও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে তৎপর আছি। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। পাশপাশি বৈধ অস্ত্র যাতে অবৈধভাবে ব্যবহার না করা হয় সেদিকেও আমরা সতর্ক আছি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর