× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আশা-হতাশার আপিল শুনানি

দেশ বিদেশ

জিয়া চৌধুরী
৮ ডিসেম্বর ২০১৮, শনিবার

একদিকে মনোনয়ন ফিরে পাবার খবর দিতে গিয়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাস করছেন কেউ কেউ। অন্যদিকে আবার কেউ আপিল বাতিল হওয়ায় হতাশায় মলিন মুখে নির্বাচন কমিশন ভবন ছেড়ে যাচ্ছে না। বিভিন্ন সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের কর্মী, সমর্থক, স্বজনদের এমন আশা-হতাশা এখন নির্বাচন কমিশন ভবনের সামনের চিত্র। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়তে প্রার্থিতা ফিরে পেতে ও বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা আপিলের শুনানি গতকালও ইসি ভবনের এগারো তলার অস্থায়ী এজলাসে অনুষ্ঠিত হয়। আপিল শুনানি ঘিরে দিনভর উদ্বেগ, প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার খবরে উচ্ছ্বাস আর বাতিলের ঘটনায় হতাশায় ভেঙে পড়েন প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরা।
শুক্রবার সকাল দশটার আগ থেকেই পূর্বঘোষিত আপিল শুনানিতে অংশ নিতে নির্বাচন কমিশনে আসেন প্রার্থীরা। তাদের সঙ্গে ছিলেন সমর্থক, নেতাকর্মী ও স্বজনরা। দশটার পর থেকে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় কমিশন ভবন চত্বর।
আপিল শুনানিতে প্রার্থীদের সঙ্গে আইনজীবীসহ মাত্র দু’জন প্রবেশ করার অনুমতি থাকায় বাকি লোকজনের অপেক্ষা ছিল কমিশন ভবনের সামনে। পছন্দের প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ হবে কি হবে না এমন সংশয়-উৎকণ্ঠার দোলাচলে প্রতিটি মুহূর্ত কেটেছে সমর্থকদের। একটু পর পরই খোঁজ নিচ্ছেন শুনানি হলো কি-না, কি হলো আপিলের ফল? সকাল সাড়ে দশটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা এমএ খালেকের সমর্থকরা অপেক্ষায় ছিলেন ইসি ভবনের উত্তর গেটে। এদের মধ্যে হঠাৎ একজন সমর্থক
বলে উঠলেন ‘ভাই, পাইছি, ভাই পাইছি’। মুহূর্তের মধ্যেই উপস্থিত অন্য সমর্থকরাও আনন্দে ফেটে পড়েন। হাতের মুঠোফোনের তরঙ্গে উচ্ছ্বাস পৌঁছে যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও। ‘এবার আর কে ঠেকাইবো, আমরা এবার এমপি হমুই’ মুঠোফোনেই বলতে থাকেন কাইয়ুম চেয়ারম্যান নামে এমএ খালেকের এক সমর্থক। মানবজমিনকে তিনি জানান, তিনটি গায়েবি মামলা থাকায় মনোনয়ন বাতিল হয়ে গিয়েছিল পুলিশের সাবেক আইজিপি এমএ খালেকের। উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে গিয়ে কাইয়ুম বলেন, ‘প্রার্থিতা ফিরে পাবার মধ্য দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পেলাম।’ এ সময় তাদের সঙ্গে থাকা এমএ খালেকের সমর্থক আবু বকর সিদ্দিক, মাহমুদ, আশিক ভিক্টরি চিহ্ন দেখিয়ে সেলফি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এর ঠিক পরপরই মাসুম ভূঁইয়া নামে একজন ইসি ভবনের গেট থেকে দৌড়াতে দৌড়াতে অস্থায়ী প্যান্ডেলের দিকে যেতে থাকেন। বাকি সবার দৃষ্টি দৌড়ের উপর থাকা মাসুমের দিকে। দৌড়ে গিয়ে জাপটে ধরেন আরেকজনকে, খুশিতে চলতে থাকে কোলাকুলি। আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেন আশেপাশের অনেকে। এসবের কারণ একটাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে বিএনপি প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মুসলেহ উদ্দিনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা। ভোলা-১ আসনে গোলাম নবী আলমগীর, জামালপুর-৪ আসনে শামীম আহমেদ তালুকদারের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণার খবরেও একইভাবে উল্লাস করেন সমর্থকরা। তাৎক্ষণিক এলাকায় ফোন করে জানান মসজিদে মিলাদ আয়োজন করতে।  এর ঠিক উল্টো চিত্রও ছিল দিনভর। আপিল শুনানিতেও মনোনয়ন বাতিল হওয়া প্রার্থী ইসি কার্যালয় থেকে বের হয়েছেন মলিন মুখে। এসব প্রার্থীদের সমর্থকদের হতাশা ছিল প্রার্থীর চেয়েও বেশি। কুমিল্লা-১০ আসনে বিএনপির প্রার্থী আবদুল গফুর ভূঁইয়ার মনোনয়ন বাতিল হবার খবরে এক সমর্থক বলেন, ভাই, এলাকা থেইকা বারবার কল আইতেছে। কেমনে যে কই, আমগো নমিনেশন বাতিল হইয়া গেছে।’
আপিল শুনানিতে প্রার্থীরা এসেছেন কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে। তবে শুধু একজন ছিলেন এর ব্যতিক্রম। সকালে কমিশন ভবনের সামনে সাদা ফতুয়া-ধুতি পরা, লাঠি হাতের ভর দেয়া সত্তোরর্ধ্ব এক বৃদ্ধ আপিল শুনানিতে আসেন একাই। পিরোজপুর-৩ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চান ডা. সুধীর রঞ্জন বিশ্বাস। মানবজমিনকে জানান, এ পর্যন্ত ছয়বার নির্বাচনে এমপি পদে লড়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। পরিবারের তেমন সহযোগিতা না থাকলেও লড়ে যাচ্ছেন সুধীর রঞ্জন। আপিলে হেরে গেলেও উচ্চ আদালতে যাবার চেষ্টা করবেন বলে মানবজমিনকে জানান। দুপুরে, নিজের তিন মাসের সন্তানকে নিয়ে পটুয়াখালী-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মাসুদের প্রতি সমর্থন জানাতে আসেন আয়েশা বেগম। সন্তানকে স্বামী ফিরোজের কাছে রেখেই যান আপিল শুনানিতে। এদিকে, সন্তানকে নিয়ে কমিশন ভবনের সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল বাবা ফিরোজ। আয়েশা বেগম ফিরে এসে জানালেন, তাদের সমর্থিত প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণার খবর। পরে, এই দম্পতিকে নিয়ে হইহই পড়ে যায় কমিশন ভবন চত্বরে। এতো গেল, কর্মী-সমর্থকদের দিনভর আনন্দ-উত্তেজনার গল্প। আপিল শুনানিকে কেন্দ্র করে হুড়োহুড়ি ব্যস্ততায় দিন কেটেছে অনেক আইনজীবীরও। কমিশন ভবনের বাইরে অপেক্ষমাণ লোকজনের মধ্যে কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশই ছিলেন আইনজীবী। প্রার্থীর মনোনয়ন কপি, বিভিন্ন আইনের বই আর রেফারেন্স নিয়ে উৎকণ্ঠা ছিল তাদেরও। সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে বই আর কাগজপত্র নিয়ে সারাদিন দৌড়াতে হয়েছে জুনিয়র আইনজীবীদের। আর শুনানি শেষে সফল হলে, প্রার্থীর চেয়েও বেশি উৎফুল্ল ছিলেন আইনজীবীরা। বাতিলের ঘটনায় বিমর্ষ দেখা গেছে তাদেরও। অনেক আইনজীবী আবার আপিল শুনানিতে লড়েছেন একাধিক প্রার্থীর পক্ষে। একজনের হারের পরপরই আবার ডিফেন্ড করতে প্রস্তুতি সেরেছেন। বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে শুনানিতে লড়তে কমিশন ভবনে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন, জেয়াদ আল মালুম, ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, এ এন এম আমিনুর রহমানসহ অনেক হেভিওয়টে আইনজীবীরা। বিকেলের দিকে হবিগঞ্জ-১ আসনে মনোনয়ন ফিরে পাওয়ায় রেজা কিবরিয়াকে শুভেচ্ছা জানান ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। কুড়িগ্রাম-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমরান এইচ সরকারের পক্ষে আপিল লড়তে গেলেও হেরে যান ইমরান।
বিকেলে দিকে, অন্যরকম হয়ে যায় কমিশন ভবনের সামনের এলাকা। হঠাৎই ভবনের সিঁড়িতে বসে পড়েন বেশ কয়েকজন। পরে, খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আপিলের বৈধতার সার্টিফায়েড কপি বিকেল তিনটার মধ্যে দেয়ার কথা থাকলেও এগুলো স্ব-স্ব এলাকার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়ে দেয়া হবে বলে কমিশন থেকে জানানো হয়। এর প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি নেন মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা হওয়া প্রায় অর্ধশতাধিক প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা। চট্টগ্রাম-৮ আসনের এরশাদউল্লাহ, জামালপুর-৪ আসনের শামীম আহমেদ তালুকদারের সমর্থকরা ইসি ভবনের সিঁড়িতেই অবস্থান নিয়ে বক্তব্য দিতে থাকেন। তারা অভিযোগ করেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিরোধী দলের প্রার্থীদের হয়রানি করতে ও নীলনকশার নির্বাচন করতে সার্টিফায়েড কপি তাদের ঘোষিত সময়ে দেয়া হচ্ছে না। কপি ছাড়া কমিশন ভবন না ছাড়ারও ঘোষণা দেন এসব প্রার্থী-সমর্থকরা। পরে কমিশনের কর্মকর্তারা গিয়ে অবস্থানকারীদের নিবৃত্ত করেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর