× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ইশতেহার /তারুণ্যের চাওয়া ইশতেহারে কর্মসংস্থান হোক প্রধান ইস্যু

শেষের পাতা

মরিয়ম চম্পা
৮ ডিসেম্বর ২০১৮, শনিবার

জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘তারুণ্যের ইশতেহার’ নামে একটি প্রস্তাবনা নিয়ে সম্প্রতি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অফিসে গেছেন কোটা আন্দোলনের নেতাদের একটি প্রতিনিধি দল।

এ বিষয়ে কোটা আন্দোলনের নেতা রাশেদ খান বলেন, আমরা আমাদের ইশতেহারে বলেছি যে শিক্ষিত তরুণ বেকারদের সংখ্যা বাড়ছে। সেক্ষেত্রে যেসব তরুণ সরকারি বা বেসরকারি চাকরিতে সুযোগ পাচ্ছেন না তাদের জন্য সরকার বিনা সুদে ঋণের ব্যবস্থা করবে। যেটা দিয়ে তারা উদ্যোক্তা বা সংগঠক হতে পারে। সকল রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে যেন এই বিষয়টি গুরুত্ব পায়। কোনো তরুণ যেন বেকার না থাকে। কারণ বেকারত্ব যত বাড়বে দেশের আর্থিক অবস্থা তত সংকটের মধ্যে পড়বে। যেহেতু মোট ভোটারদের প্রায় অর্ধেক হচ্ছে তরুণ ভোটার।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যে দলই তরুণদের গুরুত্ব দেবেন সে দলই এগিয়ে যাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মামুন বলেন, প্রথমত তরুণদের জন্য ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হবে। এর জন্য আলাদা বাজেট থাকা চাই। কারণ আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা এখন যথেষ্ট স্থিতিশীল। সে অনুযায়ী শিক্ষিত বেকারদের জন্য মাসিক একটি বেকার ভাতার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এটা ১০ বছর কনটিনিউ করে আবার রিনিউ করা হবে। এই ১০ বছরের ৫ বছর তাকে বেকার ভাতা দেয়া হবে। এবং বাকী ৫ বছর তাকে প্রশিক্ষণ প্রদান করে কর্মসংস্থানের উপযোগী করে তুলতে হবে। মূল কথা হচ্ছে কর্মসংস্থান। সেটা সরকারি-বেসরকারি যেকোনো সেক্টরেই হতে পারে।

একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সুমন বলেন, প্রথমত কর্মসংস্থানের জন্য শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা খুবই জরুরি। একজন শিক্ষার্থীকে মাস্টার্স করানোর পরিবর্তে চায়নার মতো কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর জোর দিতে হবে। গতানুগতিক মাস্টার্স না করে কর্মমুখী শিক্ষার ব্যবস্থা করা। একটি ছেলে ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পরে তাকে বর্তমান চাকরির বাজারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষিত করতে পারলে তাদের কর্মের ব্যবস্থা হবে। পাশাপাশি উচ্চশিক্ষিতও থাকবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছাত্র সেতু বলেন, কর্মসংস্থান তৈরিতে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক ক্যাডার নিয়োগ করতে হবে। অর্থাৎ মন্ত্রণালয় ভিত্তিক চাকরির ব্যবস্থা করা। দ্বিতীয়ত, উচ্চ শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের অপর শিক্ষার্থী মুজাহিদ বলেন, কর্মসংস্থানের জন্য উদ্যোক্তা যদি তৈরি করা হয় তাহলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে। নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে গুরুত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে উক্ত নতুন বা তরুণ উদ্যোক্তাকে সহজ শর্তে জামানতের বিনিময়ে বিনা সুদে বা কম সুদে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, এখানে ভালো কথার ইশতেহারে রাজনীতি যেমন বিশ্বাসযোগ্য করতে হবে একই সাথে ইশতেহারকেও বিশ্বসাযোগ্য করতে হবে। ব্যাংকিং ব্যবস্থার বর্তমান চরম প্রশাসনিক ঘাটতির প্রেক্ষাপটে সেখানে যদি একটি গোলাপি চিত্র একে বলি এই করা হবে সেই করা হবে। তাহলেতো মূল সমস্যাটা হয়ে যাবে বিশ্বাসযোগ্যতায়। আমরা ইশতেহারের মধ্যে কথার ফুলঝুরি নয় বিশ্বাসযোগ্য প্রস্তাবনা দেখতে চাই। সেই প্রস্তাবনায় কি কি করবো শুধু তা নয়। কি কি ভুল করেছি এবং সেগুলো কিভাবে সুধরাবো তারও সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রয়োজন। তাহলে এগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা আসবে। তার মধ্যে অবস্যই কর্মসংস্থানের বিষয়টি স্পষ্ট করে ব্যাখ্যা করতে হবে। এটা কি একটি নজরের ঘাটতি ছিল সেজন্য না কি যে উন্নয়ন মডেল নিয়ে আমরা এগুবার চেষ্টা করছি তারই ফলে তরুণ বেকারত্ব বাড়ছে।

বিনিয়োগের যে ধরনটা সেদিকে তাকালে আমরা দেখতে পাবো যে আমাদের অসংখ্য মেগাপ্রকল্পের প্রসার ঘটলেও ব্যক্তি বিনিয়োগ খাতটি ততটা উৎসাহিত করতে পারিনি। এগুলো ঠিক না করে তো তারুণ্যের বেকারত্ব কমানো যাবে না। সেজন্য বিশ্বাসযোগ্য ইশতেহার এটাই আসলে মুখ্য বিষয় হওয়া উচিত। কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের তরুণরা সার্বিকভাবে এমন একটি রাষ্ট্র এবং সমাজ চাচ্ছে যেখানে নিয়ম এবং সুশাসনের ভিত্তিতে সমাজটা চালিত হবে। সেই আকাক্সক্ষাগুলোকে ধারণ করেই এই রাজনৈতিক ইশতেহারগুলো হওয়া উচিত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক ইশতেহারে প্রধান একটি ইস্যু থাকবে কর্মসংস্থান। এবং সেই কর্মসংস্থানে আমাদের দেশের প্রবৃদ্ধির হার এমন হতে হবে যাতে করে প্রবৃদ্ধি বাড়বে। কিন্তু একইসঙ্গে কর্মসংস্থানও হবে। কারণ সবাইতো আর চাকরি করবে না। এবং এখানে একধরনের লোক থাকবে যারা কর্মী। আরেক ধরনের থাকবে উদ্যোক্তা। উদ্যোক্তাদেরকে ব্যাংক ঋণের সুযোগ সুবিধা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ দিতে হবে। এবং যারা তরুণ বা পড়ালেখা শেষ করে চাকরি করবে তাদের কোয়ালিটি অব এডুকেশন এর সঙ্গে বাস্তবিক চাকরির বাজারের সঙ্গে সম্পর্ক থাকতে হবে। অর্থাৎ ইন্ডাস্ট্রি ব্যবসার সঙ্গে আমাদের কারিকুলাম ডেভলপমেন্ট বা উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে পড়ানোর ধরনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে হবে। সর্বশেষ বিষয়টা হচ্ছে টেকনিক্যাল বিষয় বা কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। যেটার চাহিদা দেশে এবং বিদেশে সব খানেই আছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর