প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় বিচার বিভাগের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রণীত হয়েছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান। উক্ত সংবিধানে রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ; আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের দায়িত্ব এবং স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনটি অঙ্গের সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনকে সুসংহত ও বিকশিত করার ক্ষেত্রে অপরিহার্য। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ আইন সমিতির ৩৩তম বার্ষিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দিনব্যাপী এই সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। আইন সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. কামরুজ্জামান আনসারীর সভপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার, প্রধান বিচারপতির স্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের প্রাক্তন ছাত্রী সামিনা খালেক, সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আবদুল্লাহ মাহমুদ হাসান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ, ৩৩তম সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি-২০১৮ এর আহ্বায়ক মোল্লা মো. আবু কাওছার। প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচারক ও আইনজীবীরা হলেন সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ার।
তাই আইন পেশা আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত পেশা। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচারক, আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হয়। তিনি বলেন, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিচারক, আইনজীবী ও আইনের শিক্ষার্থীদের রয়েছে অনন্য ভূমিকা। একটি দেশের সরকারের কৃতিত্ব পরিমাপ করার সর্বোত্তম মাপকাঠি হচ্ছে তার বিচার বিভাগের দক্ষতা ও যোগ্যতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে অনার্স-মাস্টার্স পাস করার পর অনেকেই আইন পেশায় মনোনিবেশ করেন। আইন পেশাকে সারা বিশ্বে এমন একটি পেশা হিসেবে গণ্য করা হয়, যেখানে শিক্ষিত, জ্ঞানী-গুণী, সমাজের শ্রদ্ধেয় ও সংস্কারমুক্ত ব্যক্তির সমাগম ঘটে। তাই একজন আইনজীবীকে শুধু আইনের উপর দখল থাকলে চলবে না, পেশাগত আচার-আচরণে সুন্দর হতে হবে। সর্বোপরি, তাকে অবশ্যই সৎ থাকতে হবে এবং উচ্চ নৈতিক মূল্যবোধ বজায় রাখতে হবে। কেননা বিচার নিষ্পত্তির সঙ্গে এর নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। আর সে কারণেই ব্যক্তিগত স্বার্থের চাইতে আদালতের প্রতি কর্তব্য এবং মক্কেলের প্রতি সেবার বিষয়টিই সবার আগে বিবেচনা করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাই এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিশেষ গৌরবের দাবিদার। গণতন্ত্র সম্প্রসারণে আইন বিভাগের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, যারা আইনের সঙ্গে সম্পৃক্ত তারা গণতন্ত্রকে সমৃদ্ধ করতে কাজ করেন। অনুষ্ঠান শেষে আইন সমিতির কার্যকরী কমিটি-২০১৯ এর নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন একেএম আফজাল উল মুনীর। সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান আল-মামুন।