× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টায় আওয়ামী লীগ

প্রথম পাতা

কাজী সোহাগ
৮ ডিসেম্বর ২০১৮, শনিবার

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নিতে মাঠে থাকা নেতাদের বাগে আনতে চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ।
সারা দেশে এ ধরনের ৯১ জন প্রার্থী মাঠে ছিলেন। তাদের কারও কারও মনোনয়ন বাতিল হয়েছে যাচাই-বাছাইয়ে। এ পর্যন্ত ২৪ জনকে দলীয় সিদ্ধান্ত মানাতে পেরেছেন নেতারা। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর। এজন্য ৯ই ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চায় আওয়ামী লীগ। এরপরও যারা বিদ্রোহী হিসেবে মাঠে থাকবেন তাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডাকা হবে। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ থেকে নির্বাচনের অংশ নেয়ার চেষ্টা করা হবে।
এ উদ্যোগ ব্যর্থ হলে আওয়ামী লীগ থেকে তাদের আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য ও দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমরা সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার চেষ্টা করবো। এ পর্যন্ত ২৪ জন দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে মৌখিকভাবে আশ্বাস দিয়েছেন।

আশা করি তারা বিদ্রোহী হিসেবে মাঠে থাকবেন না। বাকিদেরও দলের সিদ্ধান্ত মানার আহ্বান জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের কথায় তারা রাজি না হলে ৯ই ডিসেম্বরের পর গণভবনে ডাকা হবে। এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, গত দু’দিন ধরে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, বিএম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। যেসব আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী দেয়া হয়েছে, সেসব আসনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে দলের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে কাজ করতে বলা হয়। অন্যথায় দলের সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে যেখানে মহাজোটের প্রার্থী রয়েছে, সেসব আসনে আওয়ামী লীগের যেসব নেতা চিঠি ছাড়া প্রার্থী হয়েছেন তাদের জোটের স্বার্থে দলের যে কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নিতে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। মেহেরপুর-১ আসনে বিদ্রোহী প্রার্থী জয়নাল আবেদীন তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন বলে রাজি হয়েছেন। সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তিনি নিজের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন বলে কেন্দ্রীয় নেতাদের জানিয়েছেন। একইভাবে ময়মনসিংহ-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আমিনুল হক শামীম দলের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) নির্বাচনী এলাকায় মনোনয়ন প্রত্যাশী আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী বুধবার তার ফেসবুকে দল ও নেত্রীর নির্দেশে নৌকা প্রতীকের বিজয় নিশ্চিত করতে সদা সচেষ্ট থাকার কথা জানিয়েছেন।

আওয়ামী লীগ জানিয়েছে, দলের নেতা হওয়া সত্ত্বেও যারা স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন সে তালিকায় ঢাকা বিভাগে রয়েছেন ৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৫ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৪ জন, খুলনা বিভাগে ২১ জন, বরিশাল বিভাগে ৬ জন, রংপুর বিভাগে ১১ জন, সিলেট বিভাগে ২ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৬ জন। এদের মধ্যে অনেকের মনোনয়ন বাতিল হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ জানিয়েছে, কিছু আসনে বিদ্রোহী প্রার্থী বসাতে না পারলে দলীয় প্রার্থীর জয় অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। কোথাও কোথাও সংঘাতের আশঙ্কাও রয়েছে। আবার কোনো কোনো বিদ্রোহীর কারণে জোট-মহাজোটের মধ্যেও অবিশ্বাস তৈরি হতে পারে। দলীয় নেতারা জানান, যারা মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন তাদের অনেকেই যোগ্য। কিন্তু নানা হিসাব মেলাতে গিয়ে তাদের মনোনয়ন দেয়া সম্ভব হয়নি। সব মিলিয়ে এসব নিয়ে দলে ক্ষোভ, বিক্ষোভ বাড়ছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা অবরোধ করা হয়েছে।

ঝাড়ু মিছিল করা হয়েছে। কোথাও কোথাও ভয়-ভীতি দেখানোর অভিযোগও উঠেছে। এ ধরনের ঘটনার প্রেক্ষিতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা আশঙ্কা করছেন জোট-মহাজোটের প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর ক্ষোভ-বিক্ষোভ আরো বাড়তে পারে। এজন্য দল থেকে এবার ঘোষণা দেয়া হয়েছে, বিদ্রোহী হলেই আজীবনের জন্য বহিষ্কার। এ প্রসঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, জরিপের উপর ভিত্তি করে মনোনয়ন দিয়েছি। তাই এবার বিদ্রোহী মানেই আজীবন বহিষ্কার। অতীতের কথা বাদ। এবার আর সে সুযোগ থাকবে না। দলীয় নেতা-কর্মীদের ক্ষোভ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বিশাল পরিবার। অনেকের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন থাকতে পারে এমপি হওয়ার।

এটা খুব স্বাভাবিক, একটি পরিবারের মধ্যেও অনেক সময় ক্ষোভ-অভিমান থাকে। খুব ব্যাপক আকারে বাংলাদেশে যেটা হয়, এবার সেটা হবে না বলে আশা করছি। এদিকে দলের মাঠপর্যায়ের এমন চিত্র নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে। ২৫শে নভেম্বর থেকে দলের মনোনীত প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেয়া শুরু করে আওয়ামী লীগ। এ পর্যন্ত ২৩১ জনকে নৌকার প্রার্থী ঘোষণা করে চিঠি দেয়া হয়। এর মধ্যে কোনো কোনো আসনে দুইজন প্রার্থীকেও চিঠি দেয়া হয়। দলীয় প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হলেও যাদের চিঠি দেয়া হয়েছে তারা বেশির ভাগই পুরনো। আরো ৬৯টি আসনে মনোনীত প্রার্র্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। এসব আসনে জোটের শরিকদের জন্য রাখা হয়েছে। তবে কৌশলগত কারণে দল ও জোটের মনোনীত প্রার্থীদের তালিকা এখনো ঘোষণা করা হয়নি।

তবে ১৪ দলীয় জোটকে এ পর্যন্ত ১৩টি আসন নিশ্চিত করেছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে প্রধান শরিক এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিকে ৩৬টি আসন দিতে রাজি হয়েছে। তবে আসনের সংখ্যা আরো দুটি বাড়তে পারে। এ প্রসঙ্গে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, জাতীয় পার্টিকে আপাতত ৩৬টি আসন দেয়া হয়েছে। সেটা বড়জোর ৩৮টি হতে পারে। বিষয়টি এরই মধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে। শিগগিরই ঘোষণা দেয়া হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর