পুলিশ বেষ্টনীর মধ্যেই গতকাল যশোর প্রেস ক্লাবে কর্মিসভা করেছে নগর বিএনপি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে নগর বিএনপি এই কর্মিসভার আয়োজন করে। নগর বিএনপি’র সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র মারুফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই কর্মিসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- জেলা বিএনপি’র সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপিকা নার্গিস বেগম। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন- বিএনপি খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও যশোর-৩ সদর আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জেলা বিএনপি’র নেতা গোলাম রেজা দুলু, দেলোয়ার হোসেন খোকন, এডভোকেট আবু মুরাদ, সবুর মণ্ডল, হাজী মুকুল, নগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মুনির আহম্মেদ সিদ্দিকী বাচ্চু, ফেরদৌসী বেগম ও শামসুন্নার পান্না।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপিকা নার্গিস বেগম বলেন, দেশের মানুষ যখন গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার আদায়ে সোচ্চার তখন সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশের গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারের অভ্যন্তরে আটকে রেখে যেনতেন নির্বাচনের মাধ্যমে ফের ক্ষমতায় যাওয়া চেষ্টা করছে। এই সরকারের কথা ও কাজে কোনো মিল নেই। এটা একটা মুনাফেক সরকার। নির্বাচনের নামে একটা প্রহসন করার পাঁয়তারা করছে এই জালিম সরকার। কিন্তু দেশের জনগণ আজ জাগতে শুরু করেছে। তারা চাই একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। যার মাধ্যমে মানুষ ভোট বিপ্লব ঘটিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে চায়।

তিনি বলেন, বেগম জিয়া কারোর করুণার পাত্র হিসেবে কারাগার থেকে বের হবে না। তার দলের কর্মীরা আগামী ৩০শে ডিসেম্বর ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে তাদের মা গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করবে। এজন্য তিনি সকল ভেদাভেদ ভুলে দলের সকল স্তরের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে তিনি ২৯শে ডিসেম্বর রাত থেকে পর দিন রাত ১২টা পর্যন্ত দলের নেতাকর্মীদের যার কাছে যা আছে তাই নিয়ে ভোটকেন্দ্র পাহারা দেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এবারের নির্বাচন গণতন্ত্র মুক্তির নির্বাচন, এবারের নির্বাচন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার নির্বাচন। এবারের নির্বাচন বেকার যুব সমাজকে কর্ম সংস্থান করার নির্বাচন। তিনি পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্য করে বলেন, এখন আর দেশে আওয়ামী লীগের শাসন চালু নেই। এখন নির্বাচনকালীন সরকার ও ইলেকশন কমিশনের অধীনে আপনাদের চাকরি। আওয়ামী লীগের নেতাদের কথায় আপনারা আর কাজ করবেন না। এখন জনগণের কথায় আপনাদের কাজ করতে হবে। মনে রাখবেন আপনাদের বেতন কিন্তু আওয়ামী লীগ দেয় না, আপনাদের বেতন হয় জনগণের ট্যাক্সের টাকায়। ফলে জনগণের কল্যাণে কাজ করুন। আপনারা আমাদের ভাই। আপানার নিজেরা নিজেদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করুন। কারোর আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করলে তার পরিণাম ভালো হবে না বলেও তিনি পুলিশ প্রশাসনকে হুঁশিয়ার করে দেন।

এদিকে নগর বিএনপি’র এই কর্মিসভাকে ঘিরে সকাল থেকে প্রেস ক্লাব চত্বরে জড়ো হতে থাকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতির মধ্যেও বিএনপি’র নেতাকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই কর্মিসভায় যোগ দেন। এই প্রসঙ্গে নগর বিএনপি’র সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র মারুফুল ইসলাম বলেন, পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে এই কর্মিসভার আযোজন করা হয়। তারপরও পুলিশ গোটা প্রেস ক্লাব কর্ডন করে রাখে। যাতে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা ওই কর্মিসভায় যোগ দিতে না পারেন। কিন্তু কর্মীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাদের পেছানোর জায়গা নেই। তাই তারা পুলিশ বেষ্টনী ভেদ করে কর্মিসভায় যোগদান করেন। আর কর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি দেখে শেষ পর্যন্ত পুলিশ কোনো অঘটন ঘটাতে সাহস পায়নি বলে তিনি ধারণা করেন।

এদিকে গতকাল দিনভর বিএনপি’র প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ও তার পক্ষে নেতাকর্মীরা যশোর সদর উপজেলাসহ পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে জনসংযোগ করেন। নগর বিএনপি‘র সভাপতি মারুফুল ইসলাম মারুফ, গোলাম রেজা দুলু, অধ্যাপিকা নার্গিস বেগম, দেলোয়ার গোসেন খোকন, কোতোয়ালি বিএনপি’র সভাপতি নুরুন্নবী, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আযম প্রমুখ নেতৃবৃন্দ এসব জনসংযোগে কর্মীদের নেতৃত্ব দেন।