যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধের ফলে মাদক, শরণার্থী ও বোমার ‘মহাপ্লাবন’ দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। তিনি বলেছেন, এর ফলে পশ্চিমাদের ওপর হামলাও হতে পারে। তার ভাষায়, এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রেখেছে ইরান। যদি যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধের ফলে ইরানের সেই প্রচেষ্টা দুর্বল হয়ে পড়ে তাহলে এসব অপরাধ দেখা দিতে পারে। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক বক্তব্যে তিনি এসব বলেন। আলাদা এক বক্তব্যে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভাদ জারিফ বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে যে পরিমাণ অস্ত্রের প্রয়োজন তার চেয়ে বেশি অস্ত্র সেখানে বিক্রি করছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্য দিয়ে তারা মধ্যপ্রাচ্যকে ‘বারুদের বাক্স’ বানিয়ে ফেলছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি করেন। ওই চুক্তির অধীনে ইরানের ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেয়ায় ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ রাখতে সম্মত হয়। কিন্তু ক্ষমতায় এসে গত মে মাসে ওই বহুজাতিক পারমাণবিক চুক্তিটি বাতিল করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। শুধু তাই নয়, তিনি গত মাস থেকে ইরানের তেল শিল্পের ওপর নতুন করে অবরোধ আরোপ করেন।
ইরানের সঙ্গে রয়েছে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্ত। আফগানিস্তান হলো বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আফিম উৎপাদনকারী দেশ। ফলে ওই দুটি দেশের সীমান্তকে ইরানে মাদক পাচারের বড় ট্রানজিট রুট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই মাদক পাচার বন্ধ করতে ইরান বছরে ৮০ কোটি ডলার খরচ করে বলে দাবি ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির। তিনি বলেন, এই ট্রানজিট দিয়ে পাচার হওয়া মাদক পূর্ব ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম পর্যন্ত, উত্তর আফ্রিকা থেকে পশ্চিম এশিয়া পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। ইরান ওই বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে সেই মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এর মধ্য দিয়ে পশ্চিমাদের স্বাস্থ্যকে রক্ষা করছে ইরান। তিনি বলেন, যদি ইরান এই লড়াই বন্ধ করে দেয় তাহলে কল্পনা করুন কি বিপর্যয় ঘটবে।
২০১৪ সালে জাতিসংঘ মাদক পাচার বিষয়ক একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, বিশ্বে ২০১২ সালে মোট যে পরিমাণ আফিম জব্দ হয়েছে তার দুই তৃতীয়াংশই জব্দ করেছে ইরান। আর বিশ্বের মোট জব্দ করা হেরোইন ও মরফিনের মধ্যে ইরান চতুর্থ। এসব দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন হাসান রুহানি। তিনি বলেন, আমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। আমাদের শত শত সেনা সদস্য এতে নিয়োজিত। বছরে ৮০ কোটি ডলার খরচ করছি। এ জন্য আমাদেরকে পশ্চিমারা অর্থ দিক আমরা সেটা চাই না। তবে তাদের জেনে রাখা উচিত যে, অবরোধের ফলে মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ইরানের লড়াই করার সক্ষমতা আঘাতপ্রাপ্ত হয়।