চলতি বছরটা সংগীতের জন্য মোটেই ভালো যায়নি। অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়েই এ বছরটি পার করেছে সংগীতসংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে বিভিন্ন উৎসবেও তেমন জমে উঠতে দেখা যায়নি গানের বাজারকে। হাতে গোনা কিছু সংগীতশিল্পীর গানই প্রকাশ হয়েছে বছরজুড়ে। অডিও কোম্পানিগুলো চলতি বছরের শুরু থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গান প্রকাশ করেছে খুবই কম। বরং, নাটক ও টেলিফিল্মের জোয়ার দেখা গেছে এসব কোম্পানির ইউটিউব চ্যানেলগুলোতে। পাশাপাশি মূলধারার শিল্পীদের পরিবর্তে ভাইরাল শিল্পীদের আধিপত্য ছিল চোখে পড়ার মতো। চলতি বছর কুমার বিশ্বজিৎ, ফাহমিদা নবী, আসিফ আকবর, আঁখি আলমগীর, হাবিব ওয়াহিদ, তাহসান, মিনার, ইমরান, কাজী শুভ, কনা, সালমা, পূজা, কর্নিয়া, ঐশী, আরমান আলিফদের গানই ছিল শ্রোতাপ্রিয়তার শীর্ষে।
এর মধ্যে কুমার বিশ্বজিৎ ধারাবাহিকভাবে বেশ কিছু মানসম্পন্ন গান উপহার দিয়েছেন। অন্যদিকে আসিফ আকবর ইন্ডাস্ট্রির এই খারাপ সময়েও চলতি বছর প্রায় ১০০ গান প্রকাশ করার রেকর্ড গড়েছেন। এরমধ্যে তার পারফর্ম করা বেশিরভাগ গানই ছিল আলোচিত। তরুণ প্রজন্মের দিক দিয়ে ইমরান ও কনা ছিলেন চলচ্চিত্র এবং অডিও গানের সর্বাধিক সফল মুখ। তবে সব মিলিয়েও ইন্ডাস্ট্রির সার্বিক অবস্থা ভালো যায়নি। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আয় কমে যাওয়ার কারণেই এমনটা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অডিও কোম্পানিগুলোর কর্তাব্যক্তিরা। এদিকে চলতি বছর শেষের দিকে। আর কদিন পরই নতুন বছর। নতুন বছরে অডিও ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা কোন দিকে মোড় নেয় সেদিকেই তাকিয়ে আছেন সংগীতসংশ্লিষ্টরা। তবে অডিও কোম্পানিগুলোর হিসেবে, সকল ধকল ও অনিশ্চয়তা কাটিয়ে উঠে
নতুন বছরটা ভালো যাবে, এমনটাই প্রত্যাশা তাদের। এ বিষয়ে লেজারভিশনের চেয়ারম্যান ও এমআইবি সভাপতি এ কে এম আরিফুর রহমান বলেন, চলতি বছরটি একেবারেই ভালো যায়নি। বিশেষ করে মাঝামাঝি থেকে শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন কারণে গানও আমরা প্রকাশ করেছি একেবারে কম। বিশেষ করে ওয়েলকাম টিউন থেকে আয় একেবারেই কমে এসেছে। এ কারণে টিকে থাকাটাই কঠিন হয়ে গিয়েছিল। তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি সংগীতকে ভালোবেসে। আসলে অন্ধকারের পর তো আলো আসবেই। সেই আশায় আছি আমরা। আমরা বিভিন্ন বিষয় সমাধানে কয়েক দফা আলোচনায় বসেছি সেলফোন কোম্পানিগুলোর সঙ্গে। পাশাপাশি নিজেরাও মিটিং করছি। এখন আলোচনার টেবিল থেকে সমস্যাগুলো সমাধানের অপেক্ষায় আছি। আমার বিশ্বাস নতুন বছর ভালো কিছু্ বয়ে নিয়ে আসবে। এ বিষয়ে জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী রবি চৌধুরী বলেন, আসলে গানের অবস্থা আগের মতো আর নেই। আর চলতি সময়টায় আমি নিজেও অনুভব করছি যে খুব কম গান প্রকাশ হচ্ছে। এখনতো অ্যালবামের পরিবর্তে সিঙ্গেল হচ্ছে। তার ওপর আবার সিঙ্গেল প্রকাশের সংখ্যাও এ বছর কমেছে। সব মিলিয়ে বেশ খারাপ একটি অবস্থা বিরাজ করছে। তবে আমি মনে করি কাজটা চালিয়ে যেতে হবে। সংখ্যায় অল্প হলেও কাজটা চালিয়ে যাওয়াটা জরুরি। আর যে সমস্যাগুলো তৈরি হয়েছে সেগুলো আমাদের সবার সমস্যা। শিল্পী, সুরকার, গীতিকার, কোম্পানি- এদের সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই এসব সমস্যা সমাধানে সবার মিলে বসা উচিত। আলোচনা করা উচিত। আলোচনার মাধ্যমে অনেক বড় সমস্যা সমাধান হয়। আমার বিশ্বাস এ সমস্যাও সমাধান হবে। এ বিষয়ে সিএমভির কর্ণধার ও এমআইবির সাধারণ সম্পাদক শেখ শাহেদ আলী পাপ্পু বলেন, সত্যি বলতে অবস্থা খুব একটা ভালো যায়নি এ বছর। তাই গানের সংখ্যাও কমেছে। তবে আমি মনে করি না এরকম অবস্থা সব সময় থাকবে। নতুন বছরে সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে বলে আমার আশা করছি। কারণ এরইমধ্যে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, ফলাফলের অপেক্ষায় আছে সংগীতাঙ্গন। আশা করছি নতুন বছর সংগীতের জন্য ভালো কাটবে।