× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

কাদের বনাম মওদুদ /ধ্রুপদী লড়াই

প্রথম পাতা

কাফি কামাল
১০ ডিসেম্বর ২০১৮, সোমবার

দেশজুড়ে পরিচিত তারা। একনামে চেনেন সবাই। দেশের রাজনীতির উজ্জ্বল মুখ। দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে জোয়ার-ভাটা এসেছে তাদের জীবনে। কিন্তু হাল ছাড়েননি। একজন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। অন্যজন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দুই প্রধান দলের   এ দুই প্রতিনিধির নির্বাচনী আসন একটিই।
তাই জাতীয় নির্বাচন এলেই ভোটের মাঠে তারা মুখোমুখি হন। কোন নির্বাচনে মওদুদ আহমদ আর কোন নির্বাচনে ওবায়দুল কাদের জয়ী হন।

ফলে দুজনই একে অপরের কাছে যেমন জয়ী হয়েছেন। তেমন পরাজিতও হতে হয়েছে। কোম্পানিগঞ্জ, কবিরহাট ও সদরের একাংশ নিয়ে গঠিত নোয়াখালী-৫ আসনের কাণ্ডারি তারা। হেভিওয়েট দুই প্রার্থী এ আসনের এমপি হওয়ায় এ আসনে উন্নয়নের ছোয়া লাগে বহু আগেই। মওদুদ আহমদের হাত ধরে বদলে যেতে থাকে এলাকার চিত্র। এর ধারাবাহিকতা চলে ওবায়দুল কাদেরের মাধ্যমে।

ফলে দু’জনই এলাকার উন্নয়ন নিয়ে নিজের সম্পৃক্ততার উদাহরণ টেনে গর্ব করতে পারেন। দুইজন প্রথম মুখোমুখি হয়েছিলেন ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। সেবার মওদুদ আহমদ লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নৌকার প্রার্থী ওবায়দুল কাদেরকে পরাজিত করেন। অবশ্য পরের বারই মওদুদকে হারান কাদের। এ থেকেই বুঝা যায়, ভোটের মাঠে রয়েছে তাদের শক্ত অবস্থান। আসন্ন নির্বাচনেও এ আসনে লড়াই হবে চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, জয়-পরাজয়ে হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।

রাজনীতিতে দুজনেরই রয়েছে উজ্জ্বল অতীত। রাজনীতি করতে গিয়ে হামলা-মামলা ও জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন দুজনই। ওয়ান ইলেভেনের সময় কারাভোগ করেছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর একদশক ধরে দাপটের সঙ্গে রাজনীতি করছেন ওবায়দুল কাদের। অন্যদিকে এক যুগ ধরে মামলা-হামলায় বিপর্যস্ত হয়েছেন মওদুদ আহমদ। আইনি জটিলতায় হারিয়েছেন বাড়ি। বারবার কারাভোগ করেছেন। দুই দলের দুই সুপার হেভিওয়েট প্রার্থীকে নিয়ে উজ্জীবিত তৃণমূল নেতারা। দুজনেই নিয়মিত যাতায়াত করেন এলাকায়। দল ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও ওবায়দুল কাদের নিয়মিত এলাকায় সভা-সমাবেশ, বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চালিয়েছেন আগাম নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। নেতাকর্মীদের সঙ্গে রেখেছেন সার্বক্ষণিক যোগাযোগ। একজন আয়োজন করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে পারলেও অন্যজনের ক্ষেত্রে এসেছে বাধা-বিপত্তি।

বিগত ঈদুল ফিতরের দিন নিজ বাড়ির মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করে  বিকেলে শুভেচ্ছা বিনিময় করার জন্য কবিরহাটে যাওয়ার সময় পুলিশের বাধার মুখে পড়েন তিনি। তার আগে রমজানে ইফতার মাহফিলেও তাকে যেতে দেয়া হয়নি। তার আগে উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে বসুরহাট পৌর হলে বিএনপির সদস্য সংগ্রহ উদ্বোধন অনুষ্ঠানেও অংশ নিতে পারেন নি তিনি। এলাকায় এমন প্রতিবন্ধকতা তৈরির বিষয়টি তিনি উত্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপে।

একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিকূলতার মধ্যেও বিএনপির প্রবীণ এই নেতা এলাকার নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণের সঙ্গে অব্যাহত রেখেছেন যোগাযোগ। এ দুই জাতীয় নেতার কারণেই নোয়াখালী-৫ বিবেচিত হয় জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন হিসেবে। এ আসন থেকে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হন ১৯৭৯ সালে। ১৯৮৬ সালে দ্বিতীয়বার এমপি নির্বাচিত হয়েই তিনি দায়িত্ব পান তথ্যমন্ত্রীর। কিছুদিনের ব্যবধানে উপ-প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ১৯৮৮ সালে তৃতীয়বার এমপি নির্বাচিত হয়েই তিনি রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। পরের বছর তিনি শিল্পমন্ত্রী ও উপ-রাষ্ট্রপতি হন। জাতীয় পার্টির মনোনয়নে ১৯৯১ সালে চতুর্থবার এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে বিএনপিতে যোগ দেন এবং ২০০১ সালে পঞ্চমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন।

বিএনপি সরকারের আমলে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে পরাজিত হলেও তিনি খালেদা জিয়ার ছেড়ে দেয়া বগুড়া-৭ আসনে উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সংসদে সোচ্চার ভূমিকা রাখেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হন ১৯৯৬ সালে। সেবার যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ২০০৮ সালে দ্বিতীয়বার এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃতীয়বারের মতো এমপি নির্বাচিত হন তিনি। এবার তিনি দলের সাধারণ সম্পাদকের পাশাপাশি দায়িত্ব পান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের।

নোয়াখালী-৫ আসনে ২০ দলের লক্ষ্য হারানো দুর্গ পুনরুদ্ধার আর মহাজোটের লক্ষ্য দুর্গ আগলে রাখা। ক্ষমতায় থাকার সময় এমপি ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এলাকায় অনেক উন্নয়ন করেছেন। স্থানীয় বিএনপির নেতারা জানান, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাটের প্রতিটি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বিএনপি এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সাংগঠনিকভাবে সক্রিয়। মওদুদ আহমদ বিএনপি স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য এবং এলাকায়ও রয়েছে তার ব্যাপক জনসমর্থন। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এ আসনে বিপুল ভোট পেয়ে মওদুদ আহমদ নির্বাচিত হবেন বলে তারা আশাবাদী। অন্যদিকে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে নিজ নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নে ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। বিগত কয়েক বছরে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় তার নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের কমিটিগুলো পূর্ণমাত্রায় সক্রিয় রয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা রয়েছেন শক্ত অবস্থানে। এমনকি তার অনুপস্থিতিতেও দলীয় নেতাকর্মী-সমর্থকরা এলাকায় তার পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় তৎপর রয়েছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নের কারণে আগামী নির্বাচনে জনগণ নৌকার পক্ষেই রায় দেবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর