‘এটা আমার শখের ভোট না। এটা ইলিয়াসের জন্য ভোট। স্বামীর জন্য আজ আমি মাঠে নেমেছি। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে প্রস্তুত আছি। আইনি লড়াই চালিয়ে যাবো। এক মুহূর্তের জন্য মাঠও ছাড়বো না। ইলিয়াসকে ফিরিয়ে আনতে এই লড়াইয়ে আমাকে জিততেই হবে।’- মানবজমিন-এর কাছে গতকাল এ কথা বলছিলেন সিলেট-২ আসনের বিএনপি’র প্রার্থী তাহসিনা রুশদীর লুনা। হাইকোর্টে রায়ে তার মনোনয়নপত্রে স্থগিতাদেশের পর হঠাৎ করে ছন্দপতন ঘটেছে এই নির্বাচনী এলাকার ভোটের মাঠে।
সকাল থেকে নির্বাচনী মাঠে প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলেন তাহসিনা রুশদীর। তিনি যেদিকেই যাচ্ছেন পাচ্ছেন বিপুল সাড়া। ইলিয়াসের আসন সিলেট-২। এ আসনের বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগরের মানুষের কাছে এখনো ‘আবেগ’ হিসেবে কাজ করছেন নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম. ইলিয়াস আলী।
ইলিয়াসের ‘আবেগ’কে কখনো হতাশ করেনি এ এলাকার মানুষ। যার প্রমাণ মিলেছে বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগরের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে। দু’টি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা হচ্ছেন বিএনপি’র পদবিধারী নেতা। অধিকাংশ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও মেম্বাররাও বিএনপি’র। এদের জয়ের পেছনে ছিল ইলিয়াসের নাম ও লুনার পরিশ্রম। এবার সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসন থেকে বিএনপি’র প্রার্থী হয়েছেন নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম. ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা। ঐক্যফ্রন্টের শরিকরা শত চেষ্টা করেও এই আসনটি বিএনপি’র কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে পারেননি। জোটের শরিকরাও এই আসনে ইলিয়াসের আবেগের কাছে অসহায় হয়েছেন। সব ছাপিয়ে আবেগকে প্রাধান্য দিয়ে এই আসনে প্রার্থী করা হয়ে তাহসিনা রুশদীর লুনাকেই।
কিন্তু পদে পদে বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে ইলিয়াসপত্নী লুনাকে। স্বামীর জনপ্রিয়তাই এখন তার কাছে সবচেয়ে বড় বাধা। এবারের নির্বাচনে তিনি মনোনয়নপত্র দাখিলের পর থেকেই নানা শঙ্কায় ছিলেন। আশঙ্কা ছিল সরকারের তরফ থেকে আসতে পারে আইনি বাধা। কিন্তু তাহসিনা রুশদীর সেই বাধা টপকে গেছেন। সিলেটের রিটার্নিং কর্মকর্তা তার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন। কিন্তু বাদ সাধেন সিলেট-২ আসনের বর্তমান এমপি ও মহাজোটের প্রার্থী ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়া। তিনি গণপ্রতিনিধিত্ব আইনের ১২/ক/ছ ধারা তুলে ধরে লুনার মনোনয়ন বাতিল করতে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেন। গত ৮ই ডিসেম্বর রাতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের উপস্থিতিতে এই আবেদনের শুনানি হয়। শুনানির পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার লুনার মনোনয়নপত্র বৈধ বলে ঘোষণা করেন। এরপর লুনা সিলেটের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন।
গতকাল দুপুরে নিজ এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় ছিলেন তাহসিনা রুশদীর লুনা। এমন সময় খবর আসে তার মনোনয়নপত্র স্থগিতের। মুহূর্তে পাল্টো যায় দৃশ্যপট। প্রচারণা থামিয়ে বাড়ি চলে আসেন লুনা। সেখানে এসে তিনি আইজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে লুনা সাংবাদিকদের জানান- ‘তিনি আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন- অবশ্যই সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে তিনি ভোটের মাঠে ফিরে আসবেন।
রিট আবেদনকারী সিলেট-২ আসনের বর্তমান এমপি ও মহাজোট প্রার্থী ইয়াহহিয়া চৌধুরী এহিয়া মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ‘আরপিওতে রয়েছে কেউ সরকারি চাকরি ছাড়ার তিনবছর মেয়াদপূর্ণ না হলে নির্বাচন করতে পারবে না। আমি নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিলেও কমিশন সে ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। অবশেষে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছি।’ তিনি বলেন- ‘বেগম তাহসিনা রুশদীর লুনা আরপি আইন লঙ্ঘন করার কারণে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। একইভাবে তিনি আরেক প্রার্থী ড. এনামুল হক সর্দারের বিপক্ষে দ্বারস্থ হয়েছিলেন।’
এদিকে- বেগম তাহসিনা রুশদীর লুনা মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ‘তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার ছিলেন। প্রায় ৬ মাস আগে তিনি চাকরি থেকে পদত্যাগ করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৩ সালে যে আইন করেছিল সেখানে স্পষ্ট লিখা আছে- আগের দিন পদত্যাগ করে পরের দিন নির্বাচন করা যাবে। সেই আইনের বলেই নির্বাচন কমিশন আমাকে বৈধ করেছিলো। এখন আমি উচ্চ আদালতে আইনি লড়াই চালিয়ে যাবো। আশা করি আদালত আমার আর্জি শুনবেন। এই সময় পর্যন্ত তিনি এলাকার মানুষকে ধৈর্য্য ধারণের আহ্বান জানান লুনা।’
লুনা বলেন- ‘আমাকে নিয়ে এতো ভয় কেন। সাহস থাকলে জনগণের উপর ভরসা রেখে নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ লড়াই করুন। তা না করে নানাভাবে আমাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। ভোটের রাজনীতিতে পারবে না দেখে প্রতিপক্ষরা এখন আমাকে দমিয়ে রাখতে নানাভাবে আটকানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু তা হবে না। আমি শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাবো। লড়াই আমি শিখেছি স্বামীর কাছ থেকে। আমার স্বামী নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম. ইলিয়াস আলীর সাহসিকতা আমাকে লড়াইয়ে অনুপ্রেরণা যুগাচ্ছে।