প্রার্থিতা ফিরে পেতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার তিনটি রিট আবেদনের শুনানিতে হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চে ন্যায় বিচার না পাওয়ার শঙ্কা জানিয়ে ‘অনাস্থা’ জানানো হয়েছে। মৌখিকভাবে আইনজীবীদের অনাস্থা জানানোর পর আদালত আগামী সোমবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি রেখেছেন। আইনজীবী সূত্র জানিয়েছে, পরবর্তী শুনানির দিন লিখিতভাবে অনাস্থার বিষয়টি জানানো হতে পারে। গতকাল বিচারপতি জে বি এম হাসানের একক-তৃতীয় বেঞ্চে শুনানিতে আইনজীবীরা এ অনাস্থা জানান। আগের দিন শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য এ বেঞ্চে তিনটি রিট আবেদন পাঠিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। সে অনুযায়ী রিট আবেদনগুলো বেলা ২টার দিকে শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ছিল। বেলা ২টার দিকে শুনানির শুরুতেই খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে আমাদের শঙ্কা রয়েছে। আমাদের আস্থা নেই।
এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, যেহেতু হাইকোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে বিভক্ত আদেশ হয়েছে এবং জ্যেষ্ঠ বিচারপতি স্থগিতাদেশ ও রুল জারি করেছেন সেহেতু অপর কোনো জ্যেষ্ঠ বিচারপতির বেঞ্চে এটির শুনানি হওয়া প্রয়োজন।
তখন আদালত এ জে মোহাম্মদ আলীর কাছে জানতে চান, ‘এ বিষয়ে আপনারা কোনো আবেদন এনেছেন? আপনারা তো এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতিকে জানাতে পারতেন।’
এ জে মোহাম্মদ আলী তখন বলেন, ‘আমাদের কিছু করার ছিল না। আমরা কার্যতালিকায় দেখেছি, বেলা ২টায় এই আদালতে শুনানি হবে। যা বলার এই আদালতেই বলতে হবে।’
এ পর্যায়ে সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘উনারা একথা এই আদালতে বলতে পারেন না। প্রধান বিচারপতিকে বলতে পারতেন। কালক্ষেপণের কৌশল থেকে তারা এ অনাস্থা জানিয়েছেন।’
জবাবে এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, আমরা হলাম সংক্ষুব্ধ পক্ষ। আমাদের তাগাদা (আর্জেন্সি) বেশি। উনি (অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম) তো রাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল। এ মামলায় উনার এত মাথাব্যথার কারণ কি? এ পর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ হয়।
তখন মাহবুবে আলম বলেন, আমি দাঁড়ালে উনারা এতো ভয় পান কেন? আমি এখানে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে দাঁড়িয়েছি। তখন আদালত বলেন, উনি ব্যক্তি মাহবুবে আলম হিসেবে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে দঁড়িয়েছেন। এ পর্যায়ে এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, বিষয়টি নট টুডে (আজকে নয়) করুন। এরপর আদালত সোমবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। পরে আদালত আদেশে বলেছেন, রিটকারী পক্ষের আইনজীবী সময় চাইলে সোমবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করা হলো। শুনানিতে খালেদা জিয়ার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার বরুদ্দোজা বাদল, অ্যাডভোকেট এ বি এম ওয়ালিউর রহমান খান, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট মনির হোসেন, অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান, অ্যাডভোকেট সালমা সুলতানা সোমা প্রমুখ।
শুনানি মুলতবির পর খালেদা জিয়ার আইনজীবী বদরুদ্দোজা বাদল সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেহেতু এর আগে একটি দ্বৈত বেঞ্চ থেকে বিভক্ত আদেশ এসেছে, তাই নিয়ম অনুযায়ী মামলাটি একক বেঞ্চে গঠন করে সেখানে পাঠিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। বিভক্ত বেঞ্চের প্রিজাইডিং জাজ বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। নিয়ম হচ্ছে বিভক্ত আদেশ দেয়া বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি যিনি থাকেন তার চেয়ে জ্যেষ্ঠ কোনো বিচারপতিকে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য বেঞ্চ গঠন করবেন। কিন্তু প্রধান বিচারপতি গত বুধবার বিচারপতি জে বি এম হাসানকে দিয়ে একক বেঞ্চ গঠন করে দিয়েছেন।
একক বেঞ্চের বিচারক বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের কনিষ্ঠ। যে কারণে আমরা অনাস্থা জানিয়েছিলাম। আদালত বিষয়টি লিখিতভাবে জানাতে বলেছেন। পাশাপাশি শুনানি আগামী সোমবার পর্যন্ত মুলতবি করেছেন।
নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালতের প্রতি অনাস্থা দেননি। রিটগুলো খারিজ হবে জেনেই খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা কালক্ষেপণ শুরু করেছেন।’
গত মঙ্গলবার বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবির সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ খালেদা জিয়ার রিটে বিভক্ত আদেশ দেন। বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বৈধ হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিলেও অপর বিচারপতি দ্বিমত পোষণ করেন। এর প্রেক্ষিতে আদালত পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য বিষয়টি প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে গত ৮ই ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে আপিলের শুনানির পর সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসনের মনোনয়নপত্র বাতিল করে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বে অপর তিন কমিশনার মনোনয়ন বাতিলের পক্ষে রায় দিলেও কমিশনের সদস্য মাহবুব তালুকদার মনোনয়ন বহালের পক্ষে রায় দেন। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ সিদ্ধান্তে মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায়। গত রোববার রিটার্নিং কর্মকর্তার মনোনয়ন বাতিলের সিদ্ধান্ত ও আপিলে নির্বাচন কমিশনের আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদনটি দায়ের করেন তার আইনজীবীরা।