আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৫ হাটহাজারী সংসদীয় আসনে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জোটগতভাবে প্রার্থী দিয়েছে। ফলে দলীয় প্রার্থী না পেয়ে দুই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছিল। কিন্তু নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই মূল দলের নেতাকর্মীদের গোস্বা ও হতাশা কাটিয়ে নিজ জোটের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নামতে শুরু করেছেন নেতাকর্মীরা। এ আসনে মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির নেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। একইভাবে ২০ দলীয় জোট তথা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হচ্ছেন মে. জে. (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীকের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নেমেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরাও। অথচ দল থেকে প্রার্থী না পেয়ে দুই দলের অনেকের মধ্যে গোস্বা ভাব লক্ষ্য করা গিয়েছিল। বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, ১৯৯১ সালের নির্বাচন থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপি নিজ দলীয় প্রার্থী দিয়ে হাটহাজারী আসনে সংসদ নির্বাচন করেছে। এসব নির্বাচনে ২০০৮ সাল বাদে প্রত্যেক নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।
এবারও দলীয় নেতাকর্মীরা মনে করেছেন অতীতের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে নির্বাচনী মনোনয়ন বোর্ড নিজ দলের নেতাকে দলীয় মনোনয়ন দেবে। কিন্তু রাজনীতির মাঠে শেষ পর্যন্ত ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছে। পরে সেই ঐক্যফ্রন্ট থেকে এবার হাটহাজারী আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান ও ২০ দলীয় জোট নেতা মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক। এতে করে দীর্ঘ সময় যারা দলের জন্য মাঠে কাজ করেছেন তাদের মধ্যে হতাশা দেখা দেয়। তবে নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে নেত্রীর মুক্তির দাবিকে সামনে রেখে তারা মনোনয়ন বোর্ডের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী মাঠে ক্রমে কাজ করতে শুরু করেছেন।
এদিকে ২০০৮ সালে মহাজোটের প্রার্থী হিসাবে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ হাটহাজারী সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচন করে বিজয়ী হওয়ার পর এ সরকারের আমলে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কাজ সাধিত হয়েছে বলে নেতাকর্মীদের দাবি। এবার নেতাকর্মীরা চেয়েছিলেন দলীয় প্রতীক নিয়ে নৌকার মাঝি হয়ে কোনো নেতা নির্বাচন করবেন। কিন্তু মহাজোটের স্বার্থে পুনরায় ব্যারিস্টার আনিসকে মনোনয়ন বোর্ড মনোনয়ন প্রদান করে। তিনি জোটের প্রার্থী হিসাবে জাতীয় পার্টির প্রতীক লাঙ্গল মার্কা নিয়ে নির্বাচন করছেন। এ কারণে দলীয় অনেক নেতাকর্মীর মধ্যে হতাশা দেখা দেয়। তবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধিশালী দেশ গঠনের জন্য শেখ হাসিনার যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও ভিশন তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে মহাজোটের পক্ষে সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে কাজ করতে ইতিমধ্যে নেতাকর্মীরা মাঠে নামতে শুরু করেছেন।
মহাজোটের প্রার্থী নিজস্ব দলীয় প্রতীক লাঙ্গল নিয়ে ভোটের মাঠে নামলেও ঐক্যফ্রন্ট তথা ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী কল্যাণ পার্টির প্রতীক বাদ দিয়ে বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। দুই জোটের প্রার্থীরা নিজেদের পক্ষে ব্যালেটের মাধ্যমে জনগণের মতামত আনতে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে প্রচারণা শুরু করেছেন।
সরজমিনে দেখা যায়, দুই জোট ভিন্ন ইস্যু নিয়ে মানুষের কাছে যাচ্ছে। মহাজোট চাচ্ছে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে। আর ২০ দলীয় জোট তাদের ভাষায় সরকারের জুলুম নির্যাতন ও তাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ইস্যু নিয়ে ভোটারদের মন জয় করতে প্রচারণা করছে। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনের উত্তাপ ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে।