× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

এবার প্রজার ছেলে রাজা হবে

শেষের পাতা

প্রতীক ওমর, বগুড়া থেকে
১৬ ডিসেম্বর ২০১৮, রবিবার

অনলাইন দুনিয়ার আলোচিত হিরো আলম সম্পর্কে এখনো মানুষের জানার আগ্রহ বাড়ছে। কীভাবে আশরাফুল আলম থেকে হিরো আলম হয়ে উঠলেন তিনি। তার উঠে আসার অদৃশ্য চিত্রগুলো এখন সবার সামনেই দৃশ্যমান। ইউটিউব পর্দা থেকে কিছুটা সরে এসে তিনি নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়েছেন এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে।  

ফেলে আসা দিনে হিরো আলম: নাম আশরাফুল আলম সাঈদ। ১৯৮৫ সালের ২০শে জানুয়ারি বগুড়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আব্দুর রাজ্জাক, মা আশরাফুন বেগম। সিডি বিক্রি করতেন আশরাফুল আলম।
সেটা বেশ আগের ঘটনা। সিডি যখন চলছিল না তখনই মাথায় আসে ক্যাবল নেটওয়ার্ক ব্যবসার চিন্তা। ভাবলেন নিজ গ্রামেই সেটা করবেন ভাবনার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি শুরু করলেন ডিশ ব্যবসা। বগুড়ার এরুলিয়া ইউনিয়নের এরুলিয়া নিজ গ্রামেই শুরু হয় আলমের এই ডিশ ব্যবসা। স্থানীয় স্কুলে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে নামতে হয় জীবিকার সন্ধানে। সিডি বিক্রি থেকে আলম ডিশ ব্যবসায় হাত দিয়ে সফলতা অর্জন করেন। স্ত্রী ও দুই সন্তান এখন তার ঘরে।
সিডির ব্যবসা করতেন আলম। ক্যাসেটে দেখতেন মডেলদের ছবি। সেই থেকে মাথায় ঢোকে মডেল হওয়ার। ২০০৮ সালেই করে ফেলেন একটা গানের সঙ্গে মডেলিং। সেটাই ছিল শুরু। এরপরে সেসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে সংসারে মনোযোগী হন। ২০০৯ সালে বিয়ে করেন পাশের গ্রামের সুমী নামের এক তরুণীকে। আলম সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়লেও সুমী পড়েছেন এসএসসি পর্যন্ত।

তাদের সংসারে আসে নতুন দুই সদস্য। নিজের নামের সঙ্গে মিলিয়ে রাখেন সন্তানদের নাম। পুত্র আবির ও কন্যা আলো। ওই সময়েই তিনি ব্যবসার পাশাপাশি নিজে কিছু মিউজিক ভিডিও করেন। সেগুলো নিজের ক্যাবল চ্যানেলেই প্রচার করেন। গ্রামের মানুষরাও তাকে বাহবা দেয়। আলম উৎসাহ পান।

সময়ের ব্যবধানে ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করেন তার মিউজিক ভিডিওগুলো। ক্রমান্বয়ে এসব মিউজিক ভিডিও ছড়িয়ে যায় দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ব দরবারে। তার এসব মিউজিক ভিডিও দেখে দেশের নামকরা চিত্র পরিচালকগণ তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন। এক সময় তিনি পাড়ি জমান বগুড়ার নিজ গ্রাম ছেড়ে রাজধানী ঢাকায়। সেখানে তিনি সংস্কৃতি অঙ্গনে নিজেকে বিলিয়ে দেন। একের পর এক মিউজিক ভিডিও, ছোট নাটক, শর্ট ফিল্ম। এমনকি সিনেমা পর্যন্ত করেন হিরো আলম। তার এসব চিত্রনাট্য বরাবরের মতোই দর্শকেরও দৃষ্টি কাড়ে।

হিরো আলম দর্শকদের দৃষ্টি কাড়েন আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। তিনি তার গাঁয়ের ভাষার বাইরে অন্যকোনো ভাষায় কথা বলতে রাজি নন। ফলে তার নিজের গ্রামের ভাষা তাকে দিনের পর দিন উপরের দিকেই টেনে তুলছে।
হিরো আলম ইউটিউব দুনিয়া থেকে ফেসবুক দুনিয়ায় এসেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। তাকে এখন যেখানেই যে অবস্থাতেই পাক একটা সেলফি তোলার জন্য ফেসবুক পাগলরা ব্যস্ত হয়ে উঠেন। হিরো আলমের সঙ্গে সেলফি তোলার জন্য তার কাছে ছুটে এসেছেন অনেক নামিদামি ব্যক্তিও। তিনি অবশ্য কারো আবদার ফেলেন না। যেই হোক তাকে ছবি তোলার জন্য সুযোগ করে দেন।  মডেলিং সম্পর্কে আলম বলেন, আমার ভিডিওগুলো ফেসবুক, ইউটিউবে ছড়িয়ে যাওয়ায় এখন অনেকেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে দুটি মিউজিক ভিডিও করার জন্য রাজি হয়েছি। আজ রাতে ঢাকা যাচ্ছি।

কার সঙ্গে, কিসের মিউজিক ভিডিও এমন প্রশ্নের জবাবে আলম জানান, ‘কুসুম কুসুম প্রেম’ ছবির সজলের সঙ্গে কাজ করার কথা। ‘সজলও বগুড়ার ছেলে।’
আলম বলেন, আমার মডেল হওয়ার ইচ্ছে ছিল আগে। যখন সিডি বিক্রি করতাম। আমি জানি না এসব ইচ্ছে পূরণ হয় কিনা, তবে লেগেছিলাম। হয়েছে। অনেকে বলে বাজে হয়েছে, আমি তাতে কান দিই না। অনেকে আবার বলে ভালোই হয়েছে। আমি গ্রামের ছেলে মন যা চায় করি। মানুষের কথায় কান দেয়ার ইচ্ছে নেই।
বগুড়া সদরের এরুলিয়া ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ হিরো আলম সম্পর্কে বলেন, ‘আলম ছেলে খারাপ না। কষ্ট করে বড় হয়েছে। সে গান গাইতে পারে না, নাচতেও পারে না। তবে তার মডেলিং এর শখ তাকে অনেক দূর নিয়ে গেছে।্থ’

হিরো আলম এখন নির্বাচনী মাঠে: ডিশ ব্যবসা চলাকালীন হিরো আলম দু’বার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য পদে নির্বাচন করেছিলেন। প্রথমবার হেরে যাওয়ার ব্যবধান বেশি থাকলেও দ্বিতীয়বার মাত্র ৭০ ভোটে হেরে যান তিনি।

এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট করার ঘোষণা দিয়ে মাসখানেক আগে আবারো মিডিয়ায় সরব হয়ে ওঠেন হিরো আলম। প্রথম থেকেই জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়নের জন্য চেষ্টা করেছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি তাকে মনোনয়ন দেয়নি। এমনকি তার মনোনয়নপত্র স্থানীয়ভাবে বাতিল করা হয়। হিরো আলম তবুও থেমে যাননি। উচ্চ আদলত পর্যন্ত দৌড়ান তিনি। শেষ পর্যন্ত প্রার্থিতা ফিরে পান হিরো। এখন তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসন থেকে সিংহ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।

প্রতিদিন তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে ভোট প্রার্থনা করছেন। তাকে দেখার জন্য উৎসুক মানুষ আগে থেকেই দাঁড়িয়ে থাকছে। তিনি এসব মানুষের মাঝে গিয়ে নিজের পক্ষে ভোট চাইছেন।
নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হিরো আলমকে নিয়ে ইলেক্ট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়া আবারো সরব হয়ে ওঠে। টক শো, লাইভ শোগুলোতে কথা বলে দেশের মানুষের দৃষ্টি কাড়েন তিনি।

এখন নির্বাচনের মাঠে নেমে সাধারণ ভোটারদের কাছে গিয়ে বলছে আমি এমপি হতে আসিনি এমপি হবেন আপনারাই। তিনি আরো বলছেন, আমি গরিব মানুষ এমপি হলে আগে গরিবদের নিয়ে কাজ করবো। তার এসব উক্তিগুলোর মধ্যে সবচেয় বেশি ছড়িয়েছে এলাকায় ‘রাজার ছেলে রাজা হয় এবার প্রজার ছেলে রাজা হবে’।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর