পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ কর্মীরা মিলে বিএনপিসহ বিরোধীদের ওপর ধরপাকড় ও নির্যাতন চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সিলেট-১ আসনের বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। তিনি গতকাল সকালে তার প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকার দলীয় লোকজন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমার নির্বাচনী কাজে নিয়মিত বাধা প্রদান করে যাচ্ছে। নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, বাসা-বাড়িতে তল্লাশির নামে বিএনপি নেতাকর্মী ও তাদের স্বজনদের হয়রানী নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আখতার হোসেনের দ্রুত বদলিরও দাবি জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘নূরে আলা কমিউনিটি সেন্টারে আমাদের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। মালিক পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনাসাপেক্ষে ভাড়া নিয়ে আমরা এই কমিউনিটি সেন্টার ব্যবহার করছি। অথচ শুধু আমাদের কাছে ভাড়া দেয়ার কারণে এই সেন্টার কর্তৃপক্ষকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ‘ইতিমধ্যে সিলেটে ১৩ই ডিসেম্বর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ হযরত শাহজালাল (র.)-এর মাজার জিয়ারতে আসলে সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ আমাদের মাইকিংয়ে বাধা দেয় এবং আমাদের প্রচারণার মাইকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। অথচ আমরা নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘন করিনি।’ গ্রেপ্তারকৃত নেতৃবৃন্দের তালিকা তুলে ধরেন খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। এরমধ্যে রয়েছেন, মহানগর ছাত্রদলের ২৬নং ওয়ার্ড শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক ফাহিম বক্স শিপু, সিলেট সদর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক দুলাল আহমদ, সিলেট জেলা ছাত্রদল সদস্য সাইদুর রহমান শিপন, নুরুল ইসলাম সোহাগ, সিলেট সদর উপজেলা বিএনপি নেতা আব্দুল খালিক, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সাইফুল ইসলাম উজ্জ্বল, কান্দিগাঁও ইউনিয়ন বিএনপি নেতা আলী হোসেন খানসহ আরো অনেকে। তিনি জানান, ‘ছাত্রদল নেতা ফাহিম বক্স শিপু আমার পক্ষে ফেসবুকে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর কারণে তাকে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে গত ১২ই ডিসেম্বর একদিনের রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সাইফুল ইসলামকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাইদুলের নেতৃত্বে মারধর করে পুলিশের কাছে হস্থান্তর করা হয়েছে। পুলিশ তাকে গায়েবি একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেল হাজতে পাঠিয়েছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান পাপলুর বাসায় গভীর রাতে অভিযান ও তল্লাশির নামে তার বাসার আসবাব ও মালামাল তছনছ করে দেয় গোয়েন্দা পুলিশ। পাপলুকে না পেয়ে বাসায় অবস্থানরত পরিবারের লোকজনকে হেনস্তা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন।’ মুক্তাদির জানান, গত ১৪ই ডিসেম্বর শুক্রবার রাতে টিলাগড়, বালুচর, শিবগঞ্জ, কুদরত উল্লাহ পয়েন্ট ও সুরমা পয়েন্ট এলাকায় লাগানো পোস্টার ছাত্রলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা ছিঁঁড়ে ফেলে। জালালাবাদ থানা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল আমিন জুয়েলের নেতৃত্বে একদল যুবক ইনাতাবাদে ধানের শীষের পোস্টার লাগাতে বাধা দেয় এবং পূর্বে লাগানো কিছু পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে। পরদিন ১৫ই ডিসেম্বর শনিবার বালুচরে ধানের শীষের পোস্টার ছিঁড়ে অগ্নি সংযোগ করে উল্লাস প্রকাশ করেছে ছাত্রলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। ওই দিনই দুপুর আড়াইটায় মেজরটিলা বাজারে ছাত্রলীগ নেতা আনসার আহমদের নেতৃত্বে একদল যুবক ধানের শীষের প্রচারণায় নিয়োজিত মাইকিংয়ে ব্যবহৃত অটোরিকশা আটকে দিয়ে মাইকের তার ছিঁড়ে নিয়ে যায় এবং মাইকিংয়ে নিয়োজিত আমাদের কর্মীদের পুনরায় মাইক নিয়ে এলাকায় গেলে হত্যা করার হুমকি দেয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন- সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, জেলা বিএনপি সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, মহানগর বিএনপি সভাপতি নাসিম হোসাইন। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বয়াক অ্যাডভোকেট নুরুল হক, মহানগর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আজমল বখত চৌধুরী সাদেক, জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল গাফফার, ঐক্যফ্রন্ট নেতা অ্যাডভোকেট আনসার খান, পেশাজীবী নেতা বদরুদ্দোজা বদর, মহানগর সহসভাপতি হুমায়ুন কবির শাহীন, অ্যাডভোকেট ফয়জুর রহমান জাহেদ, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সিলেটের সভাপতি অ্যাডভোকেট এটিএম ফয়েজ, মহানগর বিএনপির সহসভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, জেলা সহসভাপতি শাহাজামাল নুরুল হুদা, মহানগর সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান সাবু, আব্দুর রহিম, সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আক্তার হোসেন খান, মহানগর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী, জেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ মামুন প্রমুখ। এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি, ২৩ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সিলেটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।