× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ঘাতকের স্বীকারোক্তি /বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় পিতা খুন

বাংলারজমিন

মিলাদ জয়নুল, বিয়ানীবাজার (সিলেট) থেকে
১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, সোমবার

বুকভরা জ্বালা নিয়ে স্বর্গে পাড়ি জমালেন এক শিক্ষক পিতা। জীবন-যৌবনে যার প্রতি কেউ বিরাগভাজন ছিল না তাকেই চলে যেতে হলো ষড়যন্ত্রের কুটিল নির্মমতায়।
ভরসা ও ছায়ার নাম বাবা, পরম নির্ভরতার প্রতীক-নিজে পেট্রোলের আগুনে পুড়ে ফের এ কথা প্রমাণ করে গেলেন বিয়ানীবাজার উপজেলার জলঢুপ গ্রামের এক শিক্ষক বাবা বিনয়েন্দু ভূষণ চক্রবর্তী। তিনি স্বর্গীয় বেনয়ারী লাল শর্ম্মার ছেলে। তিনি ২ মেয়ে ও ১ ছেলে সন্তানের জনক। ১২ বছর আগে প্রাথমিক শিক্ষকতা পেশা থেকে অবসরে যান তিনি। হৃদয়বিদারক এ ঘটনার আড়ালে আছেন এক কানাডা প্রবাসী। এ ঘটনায় দু’জনকে গ্রেপ্তার করলে একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
জয় লাল নাথ (৩২) নামের এই আসামি জবানবন্দিতে পুরো ঘটনা বিচারকের খাসকামরায় স্বীকার করেন। তিনি আদালতে ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে ঘটনার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা অকপটে বলেন।
জয় লাল নাথের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, কানাডা প্রবাসীর সঙ্গে নিহত বিনয়েন্দু ভূষণের মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মেয়েটি এমবিবিএস পাসের পর তা অস্বীকার করে। সমপ্রতি বিয়ের প্রস্তাব দিলেও তার বাবা তা প্রত্যাখ্যান করেন। সেই ক্ষোভ থেকেই শিক্ষক বিনয়েন্দু ভূষণের ওপর ক্ষেপে যান ওই কানাডা প্রবাসী। প্রতিশোধ নিতে ভাড়া করেন দুর্বৃত্ত। এর জের ধরে ৩০শে নভেম্বর সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পরে বিনয়েন্দু ভূষণের বাড়িতে যায় দুবর্ৃৃত্তরা। নিহতের চিকিৎসক মেয়ে জানান, ‘কাকা-কাকা’ বলে ডাক দিলে দরজা খুলেন বিনয়েন্দু ভূষণ। দরজা খোলার মুহূর্তে মুখে পেট্রোল ছুড়ে দিয়াশলাই জ্বালিয়ে তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এ সময় তার শরীরে দাউ-দাউ করে আগুন জ্বলে ওঠার পর দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
তিনি আরো জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময় থেকে প্রতিবেশী সহপাঠীর সঙ্গে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। এ সম্পর্কের ‘ব্রেকআপ’ হয় প্রায় দেড় বছর আগে। তখন তিনি জানতে পারেন-ওই সহপাঠী তাকে ব্ল্যাকমেইল করছে। তার ছবি সংগ্রহ করে-স্বাক্ষর জাল করে বিয়ের কাবিননামা তৈরি করেছে! এমনকি তার ধর্মান্তরিত হওয়ার কাগজও তৈরি করে সে! একপর্যায়ে তার অন্যত্র বিয়ে ঠিক করা হলে বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানো হয় ওই প্রবাসীর পরিবার থেকে। কিন্তু তা সহজভাবে মেনে নিতে পারেন নি বিনয়েন্দু ভূষণ। এক প্রশ্নের জবাবে গাইনি বিভাগের ওই চিকিৎসক বলেন, ছবি সংগ্রহ করা তো একদম সহজ। তাছাড়া ২০১৫ সালে কানাডায় পাড়ি জমানো ওই যুবক তার সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে মিশেছিল। ডাক্তারি পড়ার সময় ওই যুবক তার অনেক কাজ করে দিতো। পেট্রোলের আগুনে দগ্ধ প্রবীণ শিক্ষক বিনয়েন্দু ভূষণ চক্রবর্তী ৬ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর বৃহস্পতিবার ঢাকার একটি হাসপাতালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এ ঘটনায় বিয়ানীবাজার থানায় ৪ জনকে আসামি করে মামলা করেন নিহতের স্ত্রী শিপ্রা রাণী চক্রবর্তী। পুলিশ ঘটনা পরবর্তী জয় লাল নাথ ও জয়ন্ত লাল নাথ নামের দুইজনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের একজন জয় লাল নাথ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জাবানবন্দি দিয়েছেন। সন্তানদের পরম মমতায় আগলে রাখা এই শিক্ষকের মৃত্যুতে পরিবার ও এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর