× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

অভিযোগের প্রতিকার নেই ইসিতে

প্রথম পাতা

সিরাজুস সালেকিন
১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, সোমবার

একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত নির্বাচন কমিশন। ভোটগ্রহণের সরঞ্জাম প্রেরণ, কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও নিজেদের কার্যক্রম প্রচারে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ইসি কর্মকর্তারা। তবে যে ভোটার ও প্রার্থীদের জন্য এ আয়োজন নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ নির্বিঘ্ন করার বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম নেই। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রচারণায় বাধা, হামলা, গ্রেপ্তার  ও পুলিশি হয়রানির বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেই। আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটলেও সে বিষয়ে ভ্রুক্ষেপ নেই কমিশনের। নির্বাচনী অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও দমনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার ও ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির ওপর। আচরণবিধি প্রতিপালন হচ্ছে কি-না সে বিষয়টিও কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিংয়ের উদ্যোগ নেই। উল্টো ২৪ ঘণ্টাব্যাপী সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিংয়ে বসেছেন ইসি কর্মকর্তারা।


ভোটের পরিবেশ পর্যবেক্ষণেও কড়াকড়ি করছে কমিশন। ভোট পর্যবেক্ষণে আগ্রহী ২০টি সংস্থাকে বাদ দিচ্ছে কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন। ইসি সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে গতকাল পর্যন্ত প্রার্থীদের পক্ষ থেকে ইসিতে অভিযোগের স্তূপ জমেছে। লিখিত বা মৌখিকভাবে রাজনৈতিক দল ও তাদের প্রার্থীরা অভিযোগ জানাচ্ছে। গণমাধ্যমেও প্রতিনিয়ত হামলার খবর প্রচার হচ্ছে। প্রার্থীরা ফোন করেও অভিযোগ জানাচ্ছেন।

এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে কোনো প্রতিকার মিলছে না বলে ভাষ্য ভুক্তভোগীদের। ইসির এমন কার্যক্রমে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় জানিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলো। ইসি ‘পুতুলের’ মতো ভূমিকা পালন করছেন বলে মন্তব্য করেছেন জোটের নেতারা। তবে গত শুক্রবার ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ দাবি করেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগের এক বা দুই শতাংশ সত্য। বেশিরভাগ অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। পরদিন শনিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা প্রেস ব্রিফিংয়ে দাবি করেছেন, সব প্রার্থী প্রচারণা চালাতে পারছেন। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে। আর প্রার্থীদের যে অভিযোগ তা ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করবে কমিশন।

ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির ঘাড়ে দায়
নির্বাচন-পূর্ব অনিয়ম প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য রিটার্নিং অফিসার ও ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির ওপর সকল দায়-দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছে ইসি। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুসারে নির্বাচনী অনিয়ম ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্তে যুগ্ম জেলা জজ ও সহকারী জজের সমন্বয়ে গত ২৫শে নভেম্বর ১২২টি নির্বাচনী তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গঠনের পর গত ৬ই ডিসেম্বর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে আয়োজিত ব্রিফিং অনুষ্ঠানে কমিটির কাজ দৃশ্যমান না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। সিইসির ওই দিনের বক্তব্যের পর বিচারকদের অনেকের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

কারণ তদন্ত কমিটি গঠন করার পর সিইসির বক্তব্য দেয়ার দিন পর্যন্ত তারা কীভাবে দৃশ্যমান হবেন- সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা পান নি। আবার প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দও পান নি। তবে তারা কার্যালয়ে কমিটির কাজ চলমান রেখেছেন। ইসি কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচনী প্রচারের সময়টাতেই মূলত অনিয়ম, আইন ভঙ্গের ঘটনা ঘটে বেশি। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মাঠে আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে শাস্তি দেন। পাশাপাশি এ সময়ে নির্বাচনী তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগ করতে পারেন প্রার্থীরা। এর আগের নির্বাচনে     ‘নির্বাচনী তদন্ত কমিটি’ সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় গাড়িতে টহলে থাকতো। এটা এক ধরনের দৃশ্যমান হওয়া। কিন্তু এবার পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় এই কাজটি এখনো সেভাবে করা যাচ্ছে না।

আইন অনুযায়ী, নির্বাচনী তদন্ত কমিটি কারও অভিযোগের ভিত্তিতে বা নিজ উদ্যোগে নির্বাচন-পূর্ব অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করতে পারবে। তবে এই কমিটির কাউকে সরাসরি সাজা দেয়ার ক্ষমতা নেই। তারা অভিযোগ তদন্ত করে নির্বাচন কমিশনকে সুপারিশ করবে। দেশের বেশ কয়েকটি আসনের প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির নামই শুনেন নি। যারা শুনেছেন তাদের ধারণা এই কমিটির কাছে অভিযোগের পর প্রতিকার পেতে পেতে নির্বাচন পার হয়ে যাবে। তাই তারা কমিটির কাছে কোনো অভিযোগ নিয়ে যাননি। ইসি কর্মকর্তারা জানান, অতীতে অভিযোগ নিয়ে কোনো প্রার্থী ইসিতে আসলে নির্বাচন কমিশনাররা সরাসরি সংশ্লিষ্ট আসনের রিটার্নিং অফিসার কিংবা এসপিকে ফোন করতেন। কিন্তু বর্তমান কমিশন এধরনের কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করছে না। লিখিতভাবে কিছু অভিযোগ কমিশনে আসলে সেগুলোতে নোট দিয়ে সচিবালয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

মনিটরিং সেল নেই, সোশ্যাল মিডিয়ায় নজরদারি
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের আচরণবিধি প্রতিপালন মনিটরিংয়ে কোনো সেল নেই নির্বাচন কমিশনের। অতীতে জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে এধরনের সেল তৈরি করে আচরণবিধির বিষয়ে কঠোর অবস্থান জানান দিতো ইসি। আচরণবিধির সেল না থাকলেও সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিংয়ে টিম করেছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। গত ১৩ই ডিসেম্বর জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামকে সভাপতি করে একটি টিম গঠন করেছে ইসি।

টিমে পুলিশ হেডকোয়ার্টার, স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি), র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব), বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি), বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি), ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) ও ইসি সচিবালয়ের একজন করে প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। এই কমিটির কার্যপ্রণালী সম্পর্কে বলা হয়েছে, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট গুজব, প্রপাগান্ডা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এমন কার্যক্রম বন্ধের লক্ষ্যে ২৪ ঘণ্টা সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং করবে। গঠিত টিমের সদস্যগণের সমন্বয়ে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত বিভিন্ন কর্মকাণ্ডকে মনিটরিংয়ের জন্য সদস্যগণের সদস্যরা পারস্পরিক যোগাযোগ করবে।

মনিটরিংয়ে নির্বাচনবিরোধী কোনো গুজব কিংবা অপপ্রচার প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অবহিত করবে এবং ইসি সচিবালয়কে অবহিত করবে। অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম দ্বারা গুজব ছড়ানোর বিষয়টি মনিটরিং করা এবং ইসি সচিবালয়ের কার্যক্রম প্রচারের জন্য পৃথক একটি কমিটি গঠন করেছে। ইসির সিস্টেম ম্যানেজার রফিকুল হককে এ কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ইসির কার্যক্রম প্রচার ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত তথ্য মনিটরিংয়ের কাজ করবে এই কমিটি।

পর্যবেক্ষকের সংখ্যা কমেছে
একাদশ জাতীয় নির্বাচনে দেশের অন্তত ৬০টি সংস্থার প্রায় ২৬ হাজার প্রতিনিধিকে ভোটের দিন পর্যবেক্ষণের সুযোগ দিচ্ছে ইসি। ইসির জনসংযোগ শাখা থেকে কমিশনে উত্থাপিত কার্যপত্রে এ তথ্য জানা গেছে। দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের বিষয়ে গত শনিবার এ কার্যপত্র উপস্থাপন করা হয়। বর্তমানে ইসিতে ১১৮টি দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধিত রয়েছে। এর মধ্যে ৮১টি সংস্থা এবারের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের আবেদন করেছে। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে ৩৫টি সংস্থার প্রায় ৯ হাজার প্রতিনিধি পর্যবেক্ষণে অংশ নেয়। ইসির নিবন্ধিত বেশিরভাগ দল নির্বাচন বর্জন করায় মাত্র ৪ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক ওই ভোট পর্যবেক্ষণ করে।

এর আগে ২০০৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেসময় স্থানীয় ৭৫টি সংস্থার প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার প্রতিনিধি ভোট পর্যবেক্ষণ করে। বিদেশি পর্যবেক্ষক ছিল ৮৯৩ জন। আর ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত অষ্টম সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে ৬৯টি সংস্থার ২ লাখ ১৮ হাজার প্রতিনিধি। ৩২টি কূটনীতিক মিশন ও সংস্থার ২২৫ জন প্রতিনিধি ওই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে। ইসির জনসংযোগ শাখা সূত্রে জানা গেছে, ৮১টি সংস্থার ৩৪ হাজার ৬৭১ জন নির্বাচন পর্যবেক্ষণের আবেদন করেছিল। কোনো কোনো আসনে বেশি সংখ্যক আবেদন আসায় তা কমিয়ে দেয়া হয়েছে। সারা দেশে ৩০০ আসনে ২৫ হাজার ৯২০ জনকে অনুমতি দেয়ার পরিকল্পনা কমিশনে উপস্থাপন করা হয়েছে। ৮১টি পর্যবেক্ষক সংস্থার মধ্যে ১৪টির বিষয়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন রয়েছে। এ ছাড়া একটি রাজনৈতিক দল থেকে চারটি সংস্থার বিষয়ে অভিযোগ করা হয়েছে।

সব দিক বিবেচনা করে কমিশন যে নির্দেশনা দেবে, সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের পর্যবেক্ষণ কার্ড দেয়া হবে। এবার ফোরাম অব ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বডিস অব সাউথ এশিয়া (এফইএমবিওএসএ), এ-ওয়েব, এসোসিয়েশন অব আফ্রিকান ইলেকশন অর্থরিটিসকে (এএইএ) নির্বাচন পর্যবেক্ষণের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ভারত, ভুটান এবং মালদ্বীপ থেকে নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর বিষয়ে নিশ্চিত করেছে। আন্তর্জাতিক এনজিও নেটওয়ার্ক-এনফ্রেল থেকে ৩২ জন এবং নেপালের বেসরকারি সংস্থা ভিপেন্দ্র ইনিশিয়েটিভ কেন্দ্র থেকে তিনজনের পর্যবেক্ষণের আবেদন এসেছে।

বাংলাদেশে ৫২টি কূটনৈতিক মিশন থেকে শতাধিক বিদেশি এবং স্থানীয় কর্মীদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের আবেদন পেয়েছে ইসি। বিদেশি সংস্থার স্থানীয় কর্মীদের স্থানীয় পর্যবেক্ষক হিসেবেই কার্ড দেয়া হবে। এ ছাড়া চারটি বিদেশি সংস্থা ৩২ জনকে পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেয়ার আবেদন করেছে। বিদেশি সাংবাদিকদের আবেদন এসেছে আটটি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক্সটার্নাল পাবলিসিটি উইংয়ের মাধ্যমে বিদেশিদের আবেদন করতে হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর