× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

এনআরসি ও ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক

বিশ্বজমিন

সৈয়দ মুনির খসরু
(৫ বছর আগে) ডিসেম্বর ১৭, ২০১৮, সোমবার, ১১:৪৯ পূর্বাহ্ন

আসামের নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসিতে নাগরিকত্ব দাবি করা বা আপত্তি দাখিলের সর্বশেষ তারিখ ১৫ই ডিসেম্বর থেকে ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করেছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। এনআরসির কার্যক্রমকে সংকলিত করার চর্চার এই পদক্ষেপ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং মানবিক পরিণতি নিয়ে বিতর্ক উস্কে দিয়েছে। এতে প্রতিবেশী দেশগুলো, বিশেষ করে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের ওপর কি প্রভাব পড়বে তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ভারতের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত যখন এনআরসির প্রতি সমর্থন দিয়েছেন এবং তিনি বলেছেন, যারা আইনগত বৈধতা ছাড়াই ভারতীয় ভূখ-ে বসবাস করছেন তারা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি, তখন বাংলাদেশে বেশ উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

দ্বিমুখী চলাচল
দৃশ্যত খুব কম মানুষই এটা অনুধাবন করেন, বাংলাদেশেও বৈধ ও অবৈধ ভারতীয় অভিবাসী আছেন। বাংলাদেশ সরকারের সর্বশেষ ২০০৯ সালের হিসাব অনুযায়ী, ৫ লাখেরও বেশি ভারতীয় কাজ করেন বাংলাদেশে। অতি সম্প্রতি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতে সর্বোচ্চ যেসব উৎস থেকে রেমিটেন্স আসে তার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, কাতার ও যুক্তরাজ্য পিছিয়ে পড়েছে।
বহুজাতিক কোম্পানি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বাণিজ্যিক কর্মকা-ের মাধ্যমে বহু ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে তাদের ইপ্সিত কাজের সুযোগ নিশ্চিত করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে, বাংলাদেশে যেসব ভারতীয় কাজ বা চাকরি করছেন তারা নিয়োজিত আছেন উন্নতমানের কাজে। পক্ষান্তরে ভারতে যেসব বাংলাদেশি আছেন তাদের ব্যাপক সংখ্যকই নি¤œ আয়ের কাজ করছেন।

ভারতে ক্ষমতাসীন সরকার দাবি করে, সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে প্রশাসনিক কাজ হলো এনআরসি প্রণয়ন করা। এটা কোনো রাজনৈতিক গামবিট বা রাজনীতির খেলা নয়। যাহোক, ক্ষমতাসীন দলের কিছু সংখ্যক সদস্য কিন্তু অভিবাসন বিরোধী ও বাংলাদেশি বিরোধী ঘৃণাপ্রসূত কথাবার্তা বলছেন। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ইতিবাচক যে সতেজ সম্পর্ক, এতে তার দুর্বলতা প্রতিফলিত হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সরকারকে নিশ্চয়তা দিয়েছেন, এনআরসি থেকে যারা বাদ পড়বেন তাদের ফেরত পাঠানো হবে না। তবে ঢাকা এ ইস্যুতে এখন পর্যন্ত নীরব। তারা এটাকে ‘ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়’ হিসেবে আখ্যায়িত করছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে গিয়ে এরই মধ্যে সম্পদ ও জনসম্পদে টান পড়েছে বাংলাদেশে। তাই বাংলাদেশের এমন মন্তব্যকে একটি সিগন্যাল বা ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হয়, যদি বাংলাভাষী মুসলিমদের ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ শুরু হয় তাহলে তাদের ফেরত নিতে রাজি হবে না তারা। তবে, এখনো অনেকেই সংশয়ে এবং তারা পয়েন্টআউট করেন, রোহিঙ্গা ইস্যুর মতো একই রকমভাবে সচেতন নয় বাংলাদেশ। তারা প্রায় ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। এই ইস্যুতে প্রতিরোধ সৃষ্টি করেনি তারা।

প্রতিবেশী প্রথম?
‘নেইবারহুড ফার্স্ট’ বা সর্বাগ্রে প্রতিবেশী নীতি ঘোষণা করে ক্ষমতায় এসেছেন নরেন্দ্র মোদি। তার ক্ষমতার শেষ বছরের মাঝামাঝি এসে ভিন্ন কথা বলছে বাস্তবতা। এক সময়ের পরীক্ষিত মিত্র নেপাল। ২০১৫ সাল থেকে তারা চীনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। ওই সময়ে তারা ভারত থেকে জ্বালানি, ওষুধ, গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য সরবরাহ প্রবেশে অবরোধ সৃষ্টি করে।

এর ফলে আক্ষরিক এক অবরোধের মুখে পড়ে ভারত। নেপালকে এখন চীনের চারটি বন্দর তিয়ানজিন, শেনঝেন, লিয়াঙগাং ও ঝানজিয়াং ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে চীন। উপরন্তু তাদের স্থল সীমান্ত ল্যানঝোউ, লাসা ও সিগাটসে ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে। পাশাপাশি এসব বন্দর ব্যবহারের জন্য যেসব সড়ক রয়েছে তাও তারা ব্যবহার করতে পারবে। এর ফলে বাণিজ্যিক রুট ব্যবহারে ভারতের যে একচেটিয়া আধিপত্য ছিল তার ইতি ঘটেছে। ২০১৩ সালে ভুটানে সরবরাহ দেয়া রান্নার গ্যাস ও কেরোসিনের ওপর থেকে অস্থায়ীভাবে ভর্তুকি প্রত্যাহার করে ভারত। এতে ভারত ও ভুটানের মধ্যে সম্পর্কে টানাপড়েন সৃষ্টি হয়। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে দেখা দেয় উত্তেজনা। অবশেষে আসে ২০১৭ সাল। এ বছরের গ্রীষ্মে দোকলাম নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় ভারত-চীনের মধ্যে। ওই সময় ভুটানের অবস্থান নিয়ে সংশয় দেখা দেয় ভারতে। মনে করা হয় এ অঞ্চলে চীনের যে সম্প্রসারণশীল পরিকল্পনা আছে তার প্রতি ঝুঁকে পড়েছে ভুটান। একই সময়ে নিজের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করার যে উচ্চাকাক্সক্ষা পোষণ করে চারদিক থেকে  ভূমি বেষ্টিত থিম্ফু, তা তারা জোরোলোভাবে প্রকাশ করতে থাকে। তাৎক্ষণিকভাবে তারা ভারতের কূটনৈতিক প্রভাবের বলয় থেকে বেরিয়ে আসে।

তারা মোটরযান চলাচল বিষয় চুক্তি বাংলাদেশ-ভুটান-ইন্ডিয়া-নেপাল (বিবিআইএন) থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়। এটাকে ভারতের প্রভাবমুক্ত হওয়ার একটি প্রমাণ হিসেবে দেখা হয়। ওদিকে শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপে কয়েক বছর ধরে ভারত-চীনের মধ্যকার ক্ষমতার খেলা এক ছায়া বিস্তার করে আছে।

দক্ষিণ এশিয়ায় ও ভারতের পশ্চাতে চীনের এমন অনুপ্রবেশের পটভূমির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ এখনও ভারতের সবচেয়ে বিশ্বস্ত মিত্র। নিরাপত্তার দিক থেকে, ভারতের বিদ্রোহীদের দমনপীড়নে সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশ। বিএসএফ প্রধান কে কে শর্মা গত বছর বলেছেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার ফলে বাংলাদেশে এসব বিদ্রোহীর প্রশিক্ষণের স্থানগুলো ও আশ্রয়স্থলগুলোর সংখ্যা প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে। দ্বিপক্ষীয় বার্ষিক বাণিজ্য ৯০০ কোটি ডলার অতিক্রম করবে বলে ধরা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার হয়ে উঠছে বাংলাদেশ। উপরন্তু, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্তি বা কানেক্টিভিটির সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ। তবে তিস্তার পানি বণ্টন ইস্যু এখনও রয়েছে ‘আনঅ্যাড্রেসড’। বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত বাধা বিদ্যমান রয়েছে। সীমান্ত হত্যা অতীতের একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সমতাভিত্তিক সম্পর্কে হুমকি হয়ে উঠেছে এনআরসি ইস্যু। নোট রাখা গুরুত্বপূর্ণ, এ মাসের শেষে বাংলাদেশ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এখানে নির্বাচনী প্রচারণা ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি উঠে আসতে পারে। এনআরসি তালিকায় যাদের নাম নেই তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা শুধুই রাজনৈতিক হঠকারিতা হবে তা নয়, কিন্তু একই সঙ্গে তাতে এ অঞ্চলে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। এর আগেও একই চর্চা করা হয়েছিল। কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। এতে শুধুই ওইসব ব্যক্তিবিশেষকে তাদের স্বভাবগত বা প্রাকৃতিক অধিকার থেকে পর করে দেয়া হয়েছে।

(ঢাকাভিত্তিক দ্য ইনস্টিটিউট ফর পলিসি, অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড গভর্নেন্স-এর চেয়ারম্যান সৈয়দ মুনির খসরু। ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য হিন্দুতে তার এ লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে ১৭ই ডিসেম্বর। সেখান থেকে অনুবাদ)
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর