চলে গেলেন অভিনয়শিল্পী এবং ছোট ও বড় পর্দার নির্মাতা সাইদুল আনাম টুটুল। গতকাল বিকাল ৩টা ১০ মিনিটে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। গত শনিবার রাতে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এরপর তাকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে আনা হয়। চিকিৎসক তাকে দ্রুত করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি করেন। সাইদুল আনাম টুটুলের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন তার স্ত্রী মোবাশ্বেরা খানম বুশরা। এ ছাড়া ল্যাবএইড হাসপাতাল থেকে সিনেমাটোগ্রাফার রিপন রহমান খানও এ খবর জানান।
তিনি বলেন, সাইদুল আনাম টুটুল আর নেই। অনেক গুণী একজন নির্মাতাকে আমরা হারালাম। আসুন সকলে তার রুহের মাগফেরাত কামনা করি।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তার দুই মেয়ে ঐশী আনাম ও অমৃতা আনাম এখন যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। এদের মধ্যে গত সোমবার বড় মেয়ে ঐশী আনাম দেশে এসেছেন। আজ ছোট মেয়ে অমৃতা আনাম দেশে ফেরার পর সাইদুল আনাম টুটুলের দাফন সম্পন্ন হবে। এর আগে সকাল ১১টায় সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে। বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জামে মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সরকারি অনুদানে ‘কালবেলা’ ছবিটি পরিচালনা করছিলেন এ নির্মাতা। আইন ও সালিশ কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত ‘নারীর ৭১ ও যুদ্ধপরবর্তী কথ্য কাহিনী’ বই থেকে ‘কালবেলা’ ছবির গল্প নেয়া হয়েছে। ছবিটি প্রযোজনা করছে সাইদুল আনাম টুটুলের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘আকার’। এর আগে সরকারি অনুদানে নির্মিত ্ এ নির্মাতার প্রথম ছবি ‘আধিয়ার’ মুক্তি পায় ২০০৩ সালে। ২০০৪ সালে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে তিনি পান ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার। ১৯৭৯ সালে ‘সূর্যদীঘল বাড়ি’ চলচ্চিত্রে কাজ করে শ্রেষ্ঠ চিত্রসম্পাদক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। সাইদুল আনাম টুটুল ডিরেক্টর গিল্ডসের প্রথম সাধারণ সম্পাদক ও আজীবন সদস্য। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে ‘ঘুড্ডি’, ‘দহন’, ‘দীপু নাম্বার টু’ ও ‘দুখাই’র মতো সিনেমার সঙ্গে রয়েছে তার সংশ্লিষ্টতা। এই ছবিগুলোর সম্পাদনা করেছেন তিনি। এ ছাড়া তার নির্দেশনায় নির্মিত বেশকিছু টিভি নাটক পেয়েছে ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা। সেসবের মধ্যে রয়েছে ‘বখাটে’, ‘আপন পর’, ‘নিশিকাব্য’, ‘হেলিকপ্টার’, ‘৫২ গলির এক গলি’, ‘অপরাজিতা’, ‘দায় মার সন্তানেরা’, ‘শিউলিমালা’, ‘মৃতের প্রত্যাবর্তন’, ‘গোবরাচর’ প্রভৃতি। সাতক্ষীরার রসুলপুরে গ্রামের বাড়ি হলেও তার বেড়ে ওঠা ছিল পুরাতন ঢাকায়।
শোক
সালাউদ্দীন লাভলু: টুটুল ভাই আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। একদিন সবাইকে যেতে হবে। কিন্তু কিছু মানুষের চলে যাওয়া মেনে নিতে অনেক কষ্ট হয়। আমি তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।
গাজী রাকায়েত: অনেক খারাপ লাগছে টুটুলের মৃত্যুর কথা শুনে। অসুস্থ হবার কয়েক দিন আগেও আমার সঙ্গে দেখা হয়েছে। তার একটা ছবির কাজ শেষের দিকে জানালো। কয়েক দিনের মধ্যে সম্পাদনায় বসবে বললো। শেষ কাজটি শেষ করে যেতে পারলেন না। তিনি শুধু একজন গুণী নির্মাতাই নন, একজন গুণী অভিনেতাও ছিলেন। আমি তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।
লুৎফর রহমান জর্জ: গুণী একজন মানুষকে হারালাম আমরা। বড়মাপের নির্মাতা এবং এডিটর ছিলেন তিনি। তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।
চয়নিকা চৌধুরী: টুটুল মামাও শেষ পর্যন্ত আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। সত্যি অনেক কষ্ট হচ্ছে। এভাবে গুণীজনেরা আমাদের ছেড়ে একে একে চলে যাচ্ছেন। একটি শোক কাটিয়ে ওঠার আগে আরো একজন গুণী মানুষকে আমরা হারালাম।
গোলাম সোহরাব দোদুল: টুটুল ভাইয়ের সঙ্গে অনেক স্মৃতি। কত শত আড্ডা। আড্ডার ছলে, শিখে নেয়া কত কিছু। তিনিও আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। দোয়া করি অনেক ভালো থাকবেন টুটুল ভাই।
নাদিয়া আহমেদ: সাইদুল আনাম টুটুল ভাই এত তাড়াতাড়ি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন। টুটুল ভাই ব্যক্তি, নির্মাতা সব দিক থেকে ছিলেন অতুলনীয়। অসাধারণ একজন মানুষ ছিলেন তিনি। তার সৃষ্ট কর্মের মধ্য দিয়ে এখন থেকে আমরা তাকে খুঁজে নিবো।