× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ঢাকা-১৮ /ভিন্ন পরিবেশ একমুখী উৎসব

এক্সক্লুসিভ

মুসা বিন মোহাম্মদ
১৯ ডিসেম্বর ২০১৮, বুধবার

ভোটের মাঠে প্রচারণায় ভিন্ন পরিবেশ। একমুখী ভোটের উৎসব। আর যাদের নিয়ে ভোট তারা রয়েছে আতঙ্কে। এককথায় বলতে গেলে ঢাকা-১৮ আসনের চিত্র এমনই। এখানকার সর্বত্র চোখে পড়ছে নৌকার পোস্টার। একচেটিয়া প্রচার-প্রচারণা। টানানো হচ্ছে নতুন নতুন ডিজিটাল ব্যানার। বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে দফায় দফায় শোডাউন করছে নৌকার নেতাকর্মী আর সমর্থকরা।
এ আসনের নৌকার মাঝি এডভোকেট সাহারা খাতুন। অন্যদিকে ভোটের মাঠে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর  কোনো আনাগোনা নেই। প্রচারণা ও গণসংযোগ তো নেই-ই। আসনটির কোনো এলাকায় ধানের শীষের একটি পোস্টারও টানানো হয়নি। ধানের শীষ সমর্থকদের  অভিযোগ, নৌকার পক্ষ পুরো মাঠ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। কোনো বিরোধী প্রার্থীকে মাঠে নামতে দিচ্ছে না। হুমকি-ধমকির কারণে ভোটের প্রচার-প্রচারণা করা সম্ভব হচ্ছে না।

ঢাকা-১৮ আসন একসময় ছিল ঢাকা-৫ আসনের অন্তর্ভুক্ত। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনের আগে আসন পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে ঢাকা-১৮ আসনের আওতায় আসে। ১৯৯১ সালে পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন ঢাকা-৫ আসন থেকে এমপি হয়েছিলেন খালেদা জিয়া। পরে তার ছেড়ে দেয়া আসনে উপ-নির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপি’র মেজর (অব.) কামরুল ইসলাম। ১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের একেএম রহমতুল্লাহর কাছে পরাজিত হন। অষ্টম সংসদ নির্বাচনে আবার এমপি হন কামরুল। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে ঢাকা-৫ আসনের আংশিক এলাকা নিয়ে ঢাকা-১৮ আসন গঠিত হয়। সে নির্বাচনে বিএনপি’র আজিজুল বারী হেলালকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এডভোকেট সাহারা খাতুন। টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছেন তিনি। একাদশ সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের   নৌকার টিকিট নিয়ে নির্বাচনের মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তুরাগ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য এমডি হালিম বলেন, আমাদের এই আসনে নৌকা ছাড়া কোনো প্রার্থী আছে বলে মনে হয় না। সব জায়গায় নৌকা আর নৌকা। আমাদের নেতাকর্মীরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। কোনো বিরোধী প্রার্থীর নির্বাচনী তৎপরতা আমাদের এখানে নেই। তিনি বলেন, আমাদের নেত্রী সাহারা খাতুনের পক্ষে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে গণসংযোগ করছি। ভোটারদের বুঝাচ্ছি।

এই আসনে ধানের শীষের প্রতীক পেয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জেএসডি’র প্রার্থী শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন। প্রার্থী হিসেবে ভোটারদের কাছে তিনি নতুন। প্রতীক নিয়ে ভোটারের কাছে যেতে পারছেন না। কোনো পোস্টারও লাগাতে পারছেন না। জেএসডি প্রার্থী শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, আমরা প্রচারণায় মাঠে নামতে পারছি না। কোনো পোস্টারও টানাতে পারি না। টানালেও নৌকার লোকেরা তা ছিঁড়ে ফেলছে। আগুনে জ্বালিয়ে দিচ্ছে। এমনকি গণসংযোগে গেলে আমাদের নেতাকর্মী, সমর্থকদের মারপিট করছে। পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে।  

রাজধানীর উত্তরা পূর্ব, উত্তরা পশ্চিম, তুরাগ, বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, উত্তরখান ও দক্ষিণখান থানার পুরো এলাকা এবং ভাটারা থানার সামান্য অংশ নিয়ে এ আসন। ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হয় ১২ ডিসেম্বর থেকে। নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর অনেক আগেই থেকেই উত্তরখান, দক্ষিণখান সহ অন্যান্যা থানার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সাহারা খাতুনের ছবির পোস্টার সাঁটিয়ে রেখেছিলেন। এখন নতুন করে বিভিন্ন এলাকার মোড়ে মোড়ে ও বাজারে নৌকার পোস্টার টাঙিয়ে রাখা হয়েছে। জসীমউদ্‌দীন রোডের বাদালদি এলাকায় দেখা যায়, ওলুদাহা থেকে বাদালদি পর্যন্ত সড়কের দু’পাশ আর বাজারের মোড়ে সাঁটানো হয়েছে নৌকার পোস্টার। এরমধ্যে বিরোধী কোনো প্রার্থীর কোনো পোস্টার খুঁজে পাওয়া যায়নি। একই অবস্থা বাউনিয়া, নিলক্ষেত, দক্ষিণখান ও উত্তরখানের। দেয়াল আর রশিতে ঝুলছে শুধু নৌকার পোস্টার। একই গতিতে চলছে দলীয় প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ।

অন্যদিকে এ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনের পক্ষে উত্তরখান এলাকার কবির শাহ মাজার জিয়ারত করে ধানের শীষের আনুষ্ঠানিক প্রচারণার উদ্বোধন করেন আ.স.ম আবদুর রব ও মাহমুদুর রহমান মান্না। তারপর থেকে ধানের শীষের আর কোনো প্রচারণা দেখা যায়নি। উত্তরখান এলাকার তরুণ ভোটার আসলাম মোল্লা জানান, এ বছর প্রথমবারের মতো জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেবো। এলাকাজুড়েই আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাহারা খাতুনের প্রচারণা চলছে। সড়কের মোড়ে মোড়ে ও বিভিন্ন জায়গাতে তার পোস্টার-ব্যানার দেখা যাচ্ছে। কিন্তু বিএনপি বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কে এবার নির্বাচনে লড়বেন সেটি এখনও আমি জানি না।

বাদালদির বিএনপি সমর্থক আবুল কালাম আজাদ বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ খুব খারাপ। সব জায়গায় নৌকার প্রচারণা চালানো হচ্ছে। অথচ আমরা বাইরে ধানের শীষ উচ্চারণই করতে পারি না। পোস্টার-মিছিল-মিটিং দেখলেই নৌকা ওয়ালারা হামলা চালাবে। এমনকি ঘর থেকে ধরে নিয়ে পিটাবে। তিনি বলেন, প্রতিদিন বিরোধী পক্ষকে উদ্দেশ্য করে শোডাউন করছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। কেউ ভয়ে রাস্তায় বের হচ্ছি না। প্রকাশ্যে গেলেই মারপিট করে পুলিশের কাছে তুলে দিবে। এমন অবস্থায় ধানের শীষের প্রচারণা চালানো সম্ভব নয় বলে জানান তিনি। একই অভিযোগ করছেন বাদালদির ছয়তলার বাসিন্দা নতুন ভোটার ফারিহা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, প্রতিদিন সকালে ওলুদাহা থেকে নৌকার শোডাউন নিয়ে বাদালদি হয়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। বিরোধী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে হুমকি-ধমকি দিয়ে মিছিলে স্লোগান দিতে শুনি। কেউ রাস্তায় বের হলে তাকে মেরে ফেলার হুমকিও দিচ্ছে। এমতাবস্থায় এ নির্বাচনে ভোট দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি।    

এ বিষয়ে ৫২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক কামারুজ্জামান বলেন, আমরা মাঠে আছি। আমাদের ছাড়া অন্য কোনো দলের লোক প্রচারণায় নামতে পারবে না। কাউকে নামতে দেয়া হবে না। মাঠের পুরো দখল নৌকার হাতে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর